Logo

অর্থনীতি

রিয়েল এস্টেটে সংকট, টিকে থাকার লড়াইয়ে জেসিএক্স ডেভেলপমেন্টস

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫, ১৮:২৩

রিয়েল এস্টেটে সংকট, টিকে থাকার লড়াইয়ে জেসিএক্স ডেভেলপমেন্টস

দীর্ঘদিন ধরেই নানা চ্যালেঞ্জের মুখে দেশের রিয়েল এস্টেট খাত। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে সংকট আরও গভীর হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মূল্যস্ফীতি, ডলারের ঘাটতি, বৈদেশিক লেনদেনের জটিলতা, নির্মাণসামগ্রীর দামবৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে খাতটি কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বিলাসবহুল আবাসন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

এই কঠিন সময়েও টিকে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে জেসিএক্স ডেভেলপমেন্টস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি জাপানের রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি ‘ক্রিড গ্রুপ’-এর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। 

জেসিএক্স-এর পরিচালক এম মুহিত হাসান বলেন, ‘২০২৫ সাল আমাদের জন্য বেঁচে থাকার বছর। ব্যবসার মূল লক্ষ্য এখন শুধু টিকে থাকা।’

জেসিএক্স মূলত ৪ থেকে ৯ হাজার বর্গফুটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট নির্মাণ করে থাকে, যা মূলত অভিজাত শ্রেণির জন্য। কিন্তু গত এক বছরে এই বাজারে বিক্রি প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। বহু পুরনো গ্রাহক পর্যন্ত নিয়মিত কিস্তি দিচ্ছেন না। নতুন বুকিং নেই বললেই চলে।

মুহিত হাসান বলেন, ‘চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ চালিয়ে নিতে হচ্ছে কেবল ব্র্যান্ড ইমেজ ধরে রাখার জন্য। কিন্তু বিক্রি না থাকায় রাজস্ব আসছে না, ফলে আর্থিক চাপ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।’

বর্তমানে দেশে অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের ফ্ল্যাটের (১২০০–২০০০ বর্গফুট) চাহিদা বেশি। কিন্তু জেসিএক্স-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো হঠাৎ করে সেই বাজারে যেতে পারছে না। কারণ, নতুন পরিকল্পনা, ডিজাইন, অনুমোদনসহ পুরো প্রক্রিয়া বদলাতে অন্তত ১–২ বছর সময় লাগে।

তবে বাজারের বাস্তবতা বিবেচনায় জলসিঁড়ি ও বসুন্ধরা এলাকায় ৫–৬ কাঠার ছোট প্লটে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে জেসিএক্স। যদিও এসব প্রকল্পের অনুমোদন পেতে ৬ থেকে ১২ মাস সময় লেগে যায় এবং অনুমোদন ছাড়া বিক্রি করা আইনত নিষিদ্ধ।

২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করা জেসিএক্স এখন পর্যন্ত ১২টি প্রকল্প সফলভাবে হস্তান্তর করেছে। প্রতিষ্ঠানটির ইনভেন্টরিতে বর্তমানে প্রায় ৬০টি প্রকল্প রয়েছে— যার মধ্যে ২৮টি নির্মাণাধীন, ২২টি আসন্ন এবং ১০টি ভবিষ্যতের পরিকল্পনায়।

পরিবেশবান্ধব ও টেকসই নির্মাণে প্রতিশ্রুতিশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে জেসিএক্স নিজেকে একটি এলইইডি সার্টিফায়েড ডেভেলপার হিসেবে উপস্থাপন করে। প্রতিটি প্রকল্পে আলাদা স্থপতির ডিজাইন থাকায় একই রকম ভবন নেই বললেই চলে। জাপানি অংশীদার ক্রিড গ্রুপ নিয়মিত প্রকল্প পরিদর্শন করে নির্মাণ মান যাচাই করে থাকে।

তবে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ক্রিড গ্রুপ এখন সাশ্রয়ী আবাসনের দিকে যেতে চায়। সেই ধারাবাহিকতায় জেসিএক্স ৭০০ থেকে ৮০০ বর্গফুটের মধ্যবিত্তবান্ধব ফ্ল্যাট ডিজাইন করছে।

মুহিত হাসান বলেন, ‘ঢাকায় যেসব পরিবার মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ভাড়া দিচ্ছেন, তাদেরকে যদি সমপরিমাণ কিস্তিতে ফ্ল্যাট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া যায়, তবেই তা হবে সত্যিকারের সাশ্রয়ী আবাসন।’

তবে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জমির দামের অসামঞ্জস্যতা। রাজধানীর বাইরে এমনকি অপেক্ষাকৃত দূরের এলাকাতেও জমির দাম অনেক বেশি। মেট্রোরেল সংলগ্ন এলাকায় ফ্ল্যাট তৈরির পরিকল্পনা থাকলেও বড় আকারের জমি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

রিয়েল এস্টেট খাতে একের পর এক ধাক্কা এসেছে গত এক বছরে। নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে ৩০–৪০ শতাংশ পর্যন্ত। ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বহু ক্রেতা ঋণ পাচ্ছেন না, পুরোনো অনেক গ্রাহক কিস্তি দিতে পারছেন না। ফলে ডেভেলপারদেরও ব্যাংক ঋণ পরিশোধে সংকটে পড়তে হচ্ছে।

এর মধ্যে রেজিস্ট্রেশন ও কর ইস্যু নতুন করে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন বাজেটে রেজিস্ট্রেশন মূল্য বাড়লেও কর কমানো হয়েছে। ফলে অনেকেই আগে থেকে রেজিস্ট্রেশন সেরে নিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ পিছিয়ে যাচ্ছেন।

ট্যাক্স ফাইলে ‘হোয়াইট মানি’ না থাকলে ক্রেতারা প্রকৃত দামে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না। রেজিস্ট্রেশন না হলে ডেভেলপাররাও ইউনিট হস্তান্তর করতে পারছেন না। এতে ব্যবসায়িক শৃঙ্খল ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানান মুহিত হাসান।

তিনি মনে করেন, বিলাসবহুল খাত থেকে সাশ্রয়ী আবাসনে রূপান্তর সময়ের দাবি। তবে এই রূপান্তর সফল করতে হলে প্রয়োজন সময়োপযোগী নীতি সহায়তা, ব্যাংকিং প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা।

এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর