Logo

অর্থনীতি

বাজারে হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি, মরিচ-সবজিতে আগুন

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫, ১২:৪১

বাজারে হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি, মরিচ-সবজিতে আগুন

গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর

রাজধানীর কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্যের দামে হঠাৎ ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে যেন অগ্নি ঝরছে। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে। একইসঙ্গে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দামও। তবে ডিম ও মাছের বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে।

শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে মিরপুর, কারওয়ান বাজার, রামপুরা, বনশ্রী, মালিবাগ, মহাখালীসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

কয়েকদিন আগেও ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচের দাম এখন প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। মালিবাগ বাজারে বাজার করতে আসা গৃহবধূ নাজুফা আক্তার বলেন, ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনেছি ১০০ টাকায়। কিছুদিন আগেও পুরো কেজি পাওয়া যেত ৩০ টাকায়।

বৃষ্টির কারণে মরিচের সরবরাহ কমে যাওয়াকেই দায়ী করছেন বিক্রেতারা। মিরপুর কাঁচাবাজারে দোকানি সুলেমান আহমদ বলেন, আগে প্রতিদিন ১৫-২০ কেজি মরিচ বিক্রি করতাম। এখন ৩-৫ কেজির বেশি আনতে পারি না। সরবরাহ কম, দাম বেশি। আরেক বিক্রেতা মাসুদ রানা জানান, দামে যেমন বেড়েছে, বিক্রিও তেমন কমেছে।

শুধু কাঁচা মরিচ নয়, বাজারে অন্যান্য সবজির দামও বেড়েছে। করলা, লাউ, পটল, কচু, চিচিঙ্গা, ধন্দুল, ঢেঁড়স, শসা—সবকিছুর দাম এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকার ঘরে। গাজর ও টমেটোর দাম ছাড়িয়েছে ১৫০ ও ১৮০ টাকা। কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, বৃষ্টিতে সবজির জোগান কম, আবার অনেক সবজির মৌসুম শেষ হয়ে যাচ্ছে। নতুন ফসল না আসা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই।

ব্রয়লার মুরগিতেও চাপ
ঈদের পরে কমে এলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফের বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। এখন কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১৪৫–১৫০ টাকা। এ ছাড়া সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজিতে।

রামপুরা বাজারে ক্রেতা ওয়াসিম খান রানা বলেন, সপ্তাহখানেক আগেই কিনেছি ১৫৫ টাকায়, আজ দোকানি বলছে ১৭৫ টাকা। এভাবে হুট করে দাম বাড়া মেনে নেওয়া যায় না। মুরগি বিক্রেতা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ফার্ম থেকেই এখন দাম বেড়ে গেছে। আমাদেরও ১০-১৫ টাকা লাভ না রাখলে টিকে থাকা মুশকিল।

স্বস্তির বার্তা ডিম ও মাছে
সবজির বাজারে চাপ থাকলেও ডিমের দামে স্বস্তি ফিরে এসেছে। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকায়। যা ঈদের আগে ছিল ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা।

সরকারি কর্মকর্তা আফসার উদ্দিন বলেন, আগে প্রতি সপ্তাহে এক ডজন ডিম নিতাম, এখন নিচ্ছি দুই ডজন। প্রোটিনের সহজ উৎস হিসেবে ডিমের দাম কমায় খুবই উপকার হচ্ছে। একই চিত্র মাছের বাজারেও। রুই ও কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৪০ টাকা কেজিতে, পাবদা ৩৫০-৪০০, টেংরা ও শিং ৬০০-৭০০ টাকায়। তবে দেশি শিং ও কৈ মাছের দাম এখনও বেশি—প্রতি কেজি যথাক্রমে ১২০০ ও ১০০০ টাকা। মাছ বিক্রেতা হুমায়ুন কবির বলেন, মাংস-মুরগির দাম বাড়ায় মানুষ এখন বেশি মাছ খাচ্ছে। বিক্রিও ভালো হচ্ছে।

গরু-খাসির বাজারে স্থবিরতা
এখনো কোরবানির মাংস অনেকের বাসায় আছে। তাই গরু ও খাসির মাংসের দোকানে তেমন বিক্রি নেই। গরু বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৭৮০ টাকায়, খাসি ১১০০ এবং ছাগল ১০০০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতা না থাকায় অনেক সময় মাংস রয়ে যাচ্ছে। মাংস ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন, ঈদের পর এমন হয়। তবে এবার একটু বেশিই বিক্রি কম। মানুষ মাছ-মুরগির দিকেই ঝুঁকছে।

বাজার সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, বর্ষাকালের প্রভাব ও মৌসুম পরিবর্তনের কারণে দাম কিছুটা ওঠানামা করছে। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম আবার স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, বাজারে স্বচ্ছতা না থাকলে এই অস্থিরতা আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলেও সতর্ক করছেন বিশ্লেষকরা।

  • ডিআর/এটিআর

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ঢাকার খবর

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর