Logo

অর্থনীতি

নাজুক আর্থিক অবস্থায় পার্টনার খুঁজছে এবি ব্যাংক

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮:৫০

নাজুক আর্থিক অবস্থায় পার্টনার খুঁজছে এবি ব্যাংক

এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মিজানুর রহমান। ছবি : বাংলাদেশের খবর

অনিয়ম-দুর্নীতি ও উদ্যোক্তাদের অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার কারণে আর্থিকভাবে নাজুক অবস্থায় রয়েছে দেশের প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকটি একীভূতকরণের (মার্জার) আলোচনায় রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ মিজানুর রহমান।

নতুন বিনিয়োগকারী, তারল্য সংকট, খেলাপি ঋণের মামলায় জটিলতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় কর্পোরেট ঋণ বিতরণ বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে বিপাকে রয়েছে ব্যাংকটি। এসব বিষয়ে বাংলাদেশের খবরের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আনোয়ার হোসাইন সোহেলের সঙ্গে কথা বলেছেন সৈয়দ মিজানুর রহমান।

প্রশ্ন : এবি ব্যাংকের বর্তমান আর্থিক চিত্র কেমন?

সৈয়দ মিজানুর রহমান : আমাদের প্রধান সমস্যা হলো উচ্চমাত্রার নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল)। বর্তমানে ঋণের প্রায় ৬৭% নন-পারফর্মিং, যা বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া মূল তিনটি সমস্যা রয়েছে—

১. ক্যাপিটাল ঘাটতি
২. অতিমাত্রায় এনপিএল
৩. প্রভিশনিং ডেফিসিট

বর্তমানে ব্যাংকের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ক্যাপিটাল ইনজেকশন। যদি আমরা কিছুটা এনপিএল রিকভার করতে পারি, তাহলে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার আনার ক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগকারী আগ্রহী হবে।

প্রশ্ন : গত এক বছরে নতুন বিনিয়োগকারী আনার ক্ষেত্রে কী অগ্রগতি হয়েছে?

সৈয়দ মিজানুর রহমান : হ্যাঁ, নতুন বিনিয়োগকারী আনার চেষ্টা চলছে। বর্তমানে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার খুঁজছি। বিশেষ করে স্থানীয় স্পন্সর বা পার্টনারদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত প্রস্তাব বা চুক্তি হয়নি, তবে কিছু বিদেশি বিনিয়োগকারী আগ্রহ দেখিয়েছেন।

প্রশ্ন : বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়ে কি কোনো অগ্রগতি হয়েছে?

সৈয়দ মিজানুর রহমান : প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে আমাদের ব্যাংকে কিছু বিদেশি বিনিয়োগ ছিল, কিন্তু বর্তমানে সব স্পন্সর স্থানীয়। নতুন বিদেশি বিনিয়োগকারী আনার জন্য চেষ্টা চলছে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশ ব্যাংক কর্পোরেট ঋণ বিতরণে আপনাদের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে কি?

সৈয়দ মিজানুর রহমান: না, এখনও প্রত্যাহার হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, শতভাগ ঋণ আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্পোরেট লোন দেয়া যাবে না। তাই আমরা এখন রিটেইল ও এসএমই ঋণে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে কর্পোরেট ঋণ বিতরণের বিরুদ্ধে। আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরে কর্পোরেট লোন দেওয়া সম্ভব নয় বলে আমার ধারণা। ঋণের বৈচিত্র আনার জন্য এসএমই ও রিটেইল খাতে মনোযোগী হচ্ছি।

প্রশ্ন : অর্থঋণ সংক্রান্ত কতগুলো মামলা চলমান আছে? খেলাপি ঋণের শীর্ষ তালিকায় নাম উল্লেখযোগ্য কেউ আছেন কি?

সৈয়দ মিজানুর রহমান : বর্তমানে প্রায় ৮২৭টি মামলা পেন্ডিং আছে, যেখানে আটকা পড়া অর্থ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। নাম উল্লেখ করা যৌক্তিক হবে না, কারণ রিকভারি প্রক্রিয়া আইনি চুক্তির মাধ্যমে চলছে। অনেক খেলাপি অন্য ব্যাংক থেকেও ঋণ নিয়েছেন।

প্রশ্ন : এবি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা নিয়ে শোনা যাচ্ছে মার্জারের কথাও?

সৈয়দ মিজানুর রহমান : আর্থিক অবস্থা কিছুটা নাজুক, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। মার্জারের গল্প শুনছি, তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এখনো কোনো অফিসিয়াল গাইডলাইন পাইনি। আমার জানা মতে, এখনো আমরা মার্জারের তালিকায় নেই। ভবিষ্যতে কি হবে, তা সময় বলবে।

প্রশ্ন: অর্থঋণ মামলার পরিমাণ ও আটকা পড়া অর্থের পরিমাণ কী?

সৈয়দ মিজানুর রহমান : প্রায় ৮২৭টি মামলা চলছে, যেখানে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা আটকে রয়েছে। যদি এই অর্থ আদায় হয়, তাহলে এনপিএল ৬৭% থেকে প্রায় অর্ধেকে নামবে। তবে বাংলাদেশের আইনি প্রক্রিয়া ধীরগতির, ফলে দ্রুত রিকভারি করা কঠিন। আইন বিভাগ থেকে সহযোগিতা পেলে অবস্থা দ্রুত ভালো হতে পারে।

প্রশ্ন : কর্পোরেট লোনের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

সৈয়দ মিজানুর রহমান : ব্যক্তিগতভাবে কর্পোরেট লোনের পক্ষে নই, বিশেষ করে এই পরিস্থিতিতে। ব্যাংকিং সেক্টরে রিক্স ডাইভার্সিফিকেশন আনতে হবে, তাই এসএমই ও রিটেইল ব্যাংকিংয়ের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের ব্যাংকের ১০৪টির বেশি শাখা আছে, যা রিটেইল ব্যাংকিংয়ের জন্য সুবিধাজনক। বিদেশি ব্যাংকগুলো যেখানে কম শাখা নিয়ে কর্পোরেট লোন দেয়, আমরা সাধারণ মানুষের কাছাকাছি গিয়ে রিটেইল ব্যাংকিং শক্তিশালী করবো যাতে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতিতে না পড়ি।

প্রশ্ন : নন-পারফর্মিং লোন ও প্রভিশন ঘাটতির সমাধানে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?

সৈয়দ মিজানুর রহমান : প্রধান লক্ষ্য হলো নন-পারফর্মিং ঋণ পুনরুদ্ধার করা। যদি তা সম্ভব হয়, প্রভিশন ঘাটতি কমে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের বাস্তব অবস্থা বুঝে কিছু সময় দিয়েছে। তবে চূড়ান্ত সমাধান আইনি প্রক্রিয়ার গতির ওপর নির্ভর করবে।

এএইচএস/এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বেসরকারি ব্যাংক

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর