Logo

অর্থনীতি

আইন লঙ্ঘন করে চলছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১৪:৩২

আইন লঙ্ঘন করে চলছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক

এস আলম গ্রুপের লুটপাটে প্রায় শূন্য হওয়া কোষাগারের পরও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করেই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ব্যাংকটির পরিচালকদের হাতে আছে মাত্র ১৪ শতাংশ শেয়ার, যা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্ধারিত সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের নির্দেশনার স্পষ্ট লঙ্ঘন।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দাবি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বোর্ড ভেঙে দেওয়ার ফলে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে; ব্যাংক স্বেচ্ছায় আইন ভঙ্গ করেনি।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক মোট ১৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে ৮৬ শতাংশের বেশি ঋণ। কেবল ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ শাখা থেকেই সাবেক এমডি পিকে হালদারের নেতৃত্বে দেওয়া হয় প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। কাগজে-কলমে এই ঋণের পরিমাণ ৩২৭ কোটি টাকা দেখানো হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্টে উঠে এসেছে ভয়াবহ ঋণ খেলাপির চিত্র।

২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক দখলের মাধ্যমে আলোচনায় আসে এস আলম গ্রুপ। অভিযোগ আছে, গ্রুপটি সিঙ্গাপুরে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য মতে, দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে গ্রুপটির প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা রয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দিয়ে স্বতন্ত্র পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিনকে চেয়ারম্যান করে পাঁচ সদস্যের নতুন বোর্ড গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এভাবে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয় ব্যাংকটি। দায়িত্ব নিয়েই নতুন বোর্ড ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অডিট শুরু করে, যেখানে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।

২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৯ টাকা ০৬ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৬ পয়সা। জানুয়ারি-জুন মেয়াদে ইপিএস হয়েছে ঋণাত্মক ১৬ টাকা ৫৬ পয়সা, যেখানে গত বছর একই সময়ে ছিল ৯৭ পয়সা।

শেয়ারপ্রতি নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) এই সময়ে দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৯ টাকা ০৮ পয়সা; গত বছরের একই সময়ে এটি ছিল ১ টাকা ৩০ পয়সা। নগদপ্রবাহ হ্রাসের মূল কারণ হিসেবে বিনিয়োগ আয়ে ৮৬১.৩৪ কোটি টাকা কমে যাওয়া এবং আমানতে মুনাফা প্রদানে ৩১৪.২৩ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাওয়াকে উল্লেখ করেছে ব্যাংক।

৩০ জুন ২০২৫ তারিখে শেয়ারপ্রতি নেট সম্পদমূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৩৮ টাকা ৩৩ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৪ টাকা ৪০ পয়সা। এনএভি হ্রাসের কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি বড় অঙ্কের প্রভিশন চার্জ এবং চলতি মেয়াদে আরও ১,০৭০.৪৩ কোটি টাকা প্রভিশন রাখার কথা জানিয়েছে। এর ফলে রিটেইনড আর্নিংস ঋণাত্মক ৪,৯৭৪.২৩ কোটি টাকায় নেমে গেছে।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের কোম্পানি সেক্রেটারি মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘বোর্ড ভেঙে দেওয়ায় আমাদের স্পন্সর-ডিরেক্টরের সংখ্যা কমে গেছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যা এখনো সন্তোষজনক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রাইমারি রেগুলেটর হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের নির্দেশনা ইচ্ছাকৃতভাবে আমরা ভঙ্গ করিনি এবং বিষয়টি বিএসইসিকে জানিয়েছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘প্রাইমারি রেগুলেটর হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক রেজুলেশনের মাধ্যমে বোর্ড ভেঙে দিয়েছে। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকসহ পাঁচটি ব্যাংক বর্তমানে মার্জার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। মার্জার সম্পন্ন হলে সুশাসন ও আইন বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে।’

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ারের দর বর্তমানে ফেসভ্যালুর নিচে। ব্যাংকটি ১০,৩৬৮ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন এবং ২০,০০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। গত বুধবার (১৩ আগস্ট) প্রতিটি শেয়ারের দর ছিল মাত্র ২ টাকা ৯০ পয়সা।

২০১৯ সালের ২১ মে বিএসইসি সিদ্ধান্ত নেয়, তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে উদ্যোক্তা-পরিচালকরা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হলে ‘কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড ২০১৮’ অনুযায়ী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু গত তিন মাসে এ বিষয়ে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি সংস্থাটি।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘ব্যাংক ও বীমা কোম্পানির প্রাইমারি রেগুলেটর আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বোর্ড ভেঙে দেওয়ায় বিএসইসি বিতর্কে যেতে চায় না। তবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের আইন বহাল থাকবে এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় কমিশন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে।’

এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বেসরকারি ব্যাংক

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর