Logo

অর্থনীতি

সার কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়ছে আড়াই গুণ

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৫, ১০:০১

সার কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়ছে আড়াই গুণ

ছবি : সংগৃহীত

সার কারখানাগুলোতে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গ্যাস সরবরাহে ভর্তুকি কমিয়ে আয় বৃদ্ধি এবং বর্ধিত আয়ের অর্থ দিয়ে বেশি করে এলএনজি আমদানি বাড়ানোর জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকারের তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। সংস্থাটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। 

বিইআরসি জানিয়েছে, প্রস্তাবটি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দেওয়া হয়নি, বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আবেদন এলে বিবেচনা করা হবে।

বিইআরসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সার কারখানায় গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ১৬ টাকা। সেখান থেকে প্রায় আড়াই গুণ বাড়িয়ে আরও ২৪ টাকা বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার আবেদন করেছে পেট্রোবাংলা। তবে ভর্তুকি শূন্যের কোটায় নিয়ে এসে হঠাৎ করে আড়াই গুণ দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটা মোটেও উচিত হবে না। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে যদি সারের দাম বাড়ে, তাহলে দেশের কৃষি এবং কৃষক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দাতা সংস্থাগুলোর চাপে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে, যা উচিত হবে না। 

জ¦ালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সারের দাম বাড়লে কৃষি খাতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে অথবা করণীয় বিষয়ে সুপারিশ করতে কৃষি মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং পেট্রোবাংলা প্রতিনিধিদের দিয়ে সরকার থেকে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। সেই কমিটি করণীয় নির্ধারণে কাজ করছে।

সূত্রে জানা যায়, পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ভর্তুকি না রেখে দাম বাড়ানো হলে বাড়িত আয়ে চলতি বছরের অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ৬ মাস প্রতিদিন ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাসের সরবরাহ দিতে পারবে সংস্থাটি। বাকি ৬ মাসের মধ্যে এপ্রিল থেকে মে দুই মাস পর্যন্ত ১৬৫ মিলিয়ন, জুন মাসে ১৭৫ মিলিয়ন এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে ১৩০ মিলিয়ন করে গ্যাস সরবরাহ দিতে পারবে। বর্তমানে সার উৎপাদনে প্রতিদিন ৬৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। গ্যাসের দাম বাড়ালে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে বলে প্রস্তাবে বলা হয়েছে।  

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ২০২৫ সালে ১০৮ কার্গো এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। দাম বাড়ানো হলে আরও ৭ কার্গো এলএনজি আমদানি করে সারে সরবরাহ বাড়ানো যাবে। দেশে মোট ৬টি সার কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত আশুগঞ্জ সার কারখানা অনেক পুরনো হওয়ায় গ্যাস খরচ অনেক বেশি। ফলে কারখানাটি বন্ধ রাখা হয়েছে। অপর ৫টি সার কারখানায় প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট।

পেট্রোবাংলার মতে, ১১৫ কার্গো এলএনজি আমদানি বাবদ ব্যয় হবে ৫৫ হাজার ৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা, দাম বাড়ানো হলে আয় হবে ৪৪ হাজার ৩৪২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। দাম বাড়ানোর পরও ঘাটতি থাকবে আট হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। সরকার কর্তৃক ৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বিবেচনায় নিলে ঘাটতি থাকবে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ঘনমিটার প্রতি গ্যাসের মিশ্রিত ব্যয় ২৮ দশমিক ৭৮ টাকা আর গড় বিক্রয়মূল্য দাঁড়াবে ২৪ দশমিক ৫৬ টাকা। এখানে ঘাটতি থাকবে ৪ দশমিক ২২ টাকার মতো।

পেট্রোবাংলার প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১১৫ কার্গো এলএনজি আমদানি করলে প্রতিদিন গড়ে ৯৩২ দশমিক ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানি হবে। যার জন্য খরচ হবে ৫৭ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। আর আমদানির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ- এক হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে, এতে খরচ পড়বে ৫ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজানুর রহমান সার কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিসিআইসির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, তারা গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন। বাড়তি টাকা দিয়ে আরও বেশি এলএনজি আমদানি করে সার উৎপাদনে দেওয়া হবে। তাতে করে গ্যাসের অভাবে বন্ধ থাকা চারটি সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত হবে।

পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গ্যাস?উৎপাদন ও সরবরাহের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ার কারণে সব শ্রেণিতে প্রভাব পড়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সার। ঘাটতি থাকায় তিনটি সময়ে রেশনিং করে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণে গ্যাস দেওয়া হয়। গড়ে দৈনিক ১১৬ মিলিয়ন (চহিদা ২৫০ মিলিয়ন) গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হয়। গ্যাস অভাবে বিপুল ব্যয়ে স্থাপিত সার কারখানাগুলো বছরের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকছে। বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে বিদেশ থেকে সার আমদানি করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদনের চেয়ে আমদানি ব্যয় অনেক বেশি হয়ে থাকে।

সার কারখানায় সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, কৃষি খাতকে পুরোপুরি বাণিজ্যিকীকরণের প্রক্রিয়া চলছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর, জ্বালানি মন্ত্রণালয় সবাই মিলে সেটা বাস্তবায়ন করছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে একজন উপদেষ্টা বলেছেন বাংলাদেশের কৃষি খাত একটি বিদেশি রাষ্ট্র দখলে নিতে চায়। তাদের প্রেসিক্রিপশনেই সারের দাম বাড়িয়ে, ভর্তুকি তুলে কৃষি খাতকে বাণিকিজ্যকীকরণের প্রক্রিয়া চলছে।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ এমএম আকাশ বলেন, ‘যদি সরকার সার কারখানায় সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম বাড়িয় ভর্তুকি কমাতে এবং আয় বাড়াতে চায় তাতে কোনো অসুবিধা নেই বলে আমি মনে করি। তবে অবশ্যই ভর্তুকির টাকা সরকারকে দিতে হবে। কৃষিতে ভর্তুকি রাখতে হবে। বাড়তি দামে কৃষকের কাছে সার বিক্রি করা যাবে না। তাতে দেশের কৃষি ও কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন. বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ থেকে বেরিয়ে এসে কৃষিতে সার সরবরাহে ভর্তুকি দিতে হবে’

সারে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা পেট্রোবাংলার প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু পেট্রোবাংলার প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে দর চূড়ান্ত করার কোনো সুযোগ নেই। প্রস্তাব আসতে হবে গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে। আমরা বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রস্তাব জমা দেওয়ার জন্য বলেছি।’

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়ভেজ বলেন, ‘সার উৎপাদনে গ্যাসের দাম সমন্বয়ের প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়ে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি।’

  • এমআই

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

অন্তর্বর্তী সরকার

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর