Logo

অর্থনীতি

ইইউ’র বাজারে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ-চীনের ব্যবধান কমছে

নুর মোহাম্মদ মিঠু

নুর মোহাম্মদ মিঠু

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৫, ২০:৩০

ইইউ’র বাজারে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ-চীনের ব্যবধান কমছে

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প দীর্ঘদিন ধরেই বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত হিসেবে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ খাতে রপ্তানি গন্তব্যগুলোর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) অন্যতম। ইতোমধ্যে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ইইউ’র বাজারে বাড়ছে দ্রুত গতিতে। 

সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ইইউতে বেড়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে যেখানে রপ্তানি হয়েছিল ৮২৩ কোটি ডলারের, সেখানে এ বছর একই সময়ে রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৯৬৮ কোটি ডলারে।

অন্যদিকে চীনও ইউরোপের বাজারে রপ্তানি বাড়িয়েছে আরও দ্রুত গতিতে। দেশটি এ সময়ের মধ্যে ১ হাজার ১০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক ইইউতে পাঠিয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। এর ফলে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে রপ্তানি ব্যবধান মাত্র ৪২ কোটি ডলারে এসে ঠেকেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ব্যবধান অল্প সময়েই আরও কমে আসতে পারে, যদিও চীনের প্রযুক্তি, উৎপাদন ক্ষমতা ও স্কেল বাংলাদেশের তুলনায় এখনও অনেক বেশি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কনীতির কারণে চীনা রপ্তানিকারকরা ইইউমুখী হয়ে পড়েছে। ফলে ইউরোপের বাজারে চীনের আধিপত্য বাড়ছে এবং বাংলাদেশকে বাড়তি চাপে ফেলছে।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বর্তমানে ইউরোপে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি প্রশংসনীয় হলেও প্রতিযোগিতা দিন দিন বাড়ছে। এখন থেকেই নতুন নীতিমালা মেনে চলা, প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়ানো এবং বাজার বৈচিত্র্যকরণের দিকে নজর দিতে হবে।

তবে মে মাস বাংলাদেশের জন্য আশানুরূপ ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই মাসে রপ্তানি কমেছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, বিপরীতে চীনের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির কারণে চীনা রপ্তানিকারকরা ইইউমুখী হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ।

শিল্প বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপীয় ক্রেতারা বর্তমানে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পণ্যকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো মান বজায় রেখে উৎপাদন করায় আস্থা অর্জন করেছে। তবে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তির ব্যবহার, শ্রমিক অধিকার রক্ষা ও বাজার বৈচিত্র্যকরণের দিকেই জোর দিতে হবে।

তারা আরো বলছেন, ইইউ বাজারে বাংলাদেশের সাফল্যের আরেকটি দিক হল, রপ্তানিতে পরিমাণ ও মূল্যের ভারসাম্যপূর্ণ প্রবৃদ্ধি। বর্তমানে সাসটেইনেবল এবং ভ্যালু ফর মানি পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন ইউরোপের ক্রেতারা। বাংলাদেশের কারখানাগুলো আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থা ও নিরাপদ কর্ম-পরিবেশে জোর দিচ্ছে, যা ইউরোপের ব্র্যান্ডগুলোর আস্থা অর্জনে সহায়ক হচ্ছে।

সব মিলিয়ে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত ইইউ বাজারে শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে বিশ্ববাজারের দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে হলে গুণগত মান, প্রযুক্তি, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ও বাজার বৈচিত্র্যকরণের ওপরই ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। 

এনএমএম/এএ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আমদানি-রপ্তানি

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর