বিএফআইইউ প্রধান ও স্ত্রীর হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন, তদন্তে নতুন মোড়

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৫, ২০:৩৫

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সুমা ইসলামের ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক নগদ লেনদেনের তথ্য সামনে এসেছে। চলমান আপত্তিকর ভিডিও কাণ্ডের তদন্তের পাশাপাশি এখন তাদের আর্থিক লেনদেনও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিএফআইইউ সূত্রে জানা গেছে, শাহীনুল ইসলামের দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে— একটি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে, অন্যটি ইস্টার্ন ব্যাংকে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে তার এবং তার স্ত্রীর নামে মোট তিনটি অ্যাকাউন্টের তথ্য ইতোমধ্যে পর্যালোচনা করা হয়েছে।
তদন্তে উঠে এসেছে, গত ৪ মে জনৈক মিজানুর রহমান শাহীনুল ইসলামের স্ত্রীর নামে ১৫ লাখ টাকা নগদ জমা দেন। পরদিন ৫ মে একই ব্যক্তি শাহীনুল ইসলামের ব্যক্তিগত হিসাবে ৫ লাখ টাকা জমা করেন। এরপর ১২ মে তিনি শাহীনুল ইসলামের হিসাবে ২৩ লাখ টাকা নগদ জমা দেন। অল্প সময়ের ব্যবধানে একই ব্যক্তির কাছ থেকে এই বড় অঙ্কের নগদ জমা হওয়ায় এটিকে “অস্বাভাবিক লেনদেন” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই তথ্য ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
অন্যান্য অভিযোগের মধ্যে রয়েছে—এনা পরিবহনের একটি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার পরও প্রায় ১৯ কোটি টাকা উত্তোলনের সুযোগ তৈরি করা, একটি বেসরকারি ব্যাংকের বন্ধ থাকা ঋণ পুনরায় চালু করতে প্রভাব খাটানো এবং এই প্রক্রিয়ায় নিজের ভাগ্নে পরিচয়ে একজনকে ব্যবহার করার অভিযোগ।
গত ১৮ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন শাহীনুল ইসলাম। তিনি ভিডিওগুলো ভুয়া দাবি করলেও ১৯ আগস্ট অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন। পরদিন অফিসে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরপর সরকার তাঁকে ছুটিতে পাঠায় এবং চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাইদ কুতুব। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দুই কর্মকর্তা এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিব কমিটিতে রয়েছেন। সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা।
নিয়োগ সংক্রান্ত বিতর্কও রয়েছে। গত বছরের আগস্টে তৎকালীন প্রধান মাসুদ বিশ্বাস পদত্যাগের পর একে এম এহসান ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। শীর্ষ রাজনৈতিক পরিবার ও বড় ব্যবসায়ী গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্তে সাহসী ভূমিকার কারণে তাঁকে পূর্ণাঙ্গ প্রধান করা হয়নি বলে অভিযোগ আছে। প্রাথমিক তালিকায় না থাকলেও চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহীনুল ইসলামকে হঠাৎ করেই বিএফআইইউর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।