Logo

অর্থনীতি

শুল্ক চাপ বাড়ায় ঝুঁকিতে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:০১

শুল্ক চাপ বাড়ায় ঝুঁকিতে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য

দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য শুল্কের চাপের মুখে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নতুন শুল্ক কার্যকর হলে বাংলাদেশের রপ্তানিতে বড় ধাক্কা লাগবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন সেবার মাশুল ও বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে কনটেইনার ব্যবস্থাপনার খরচ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আমদানি-রপ্তানিকারকদের জন্য বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

সূত্র মতে, চট্টগ্রাম বন্দরের সেবামূল্য গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। এতে বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হবে। কর্তৃপক্ষের দাবি, সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে বন্দরের সেবার মাশুল সমন্বয় করা হয়েছিল। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত সেক্টরে নতুন সংকট তৈরি করবে।

এদিকে বেসরকারি কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনও সেবাভেদে ৩০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত মাশুল বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে, যা ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। ব্যবসায়ী মহলের আশঙ্কা, এই বাড়তি চাপ রপ্তানি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘শুল্ক ও মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য চাপ তৈরি করবে। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এসব উদ্যোগ আপাতত স্থগিত রাখা উচিত।’

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক সমস্যার সমাধানের পর বন্দরের সেবামূল্য সমন্বয় করা হলে তা বেশি কার্যকর হতো। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব উদ্যোগ বিনিয়োগকারীদের জন্য নেতিবাচক সংকেত হিসেবে কাজ করতে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ও ইফাদ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান তাসকীন আহমেদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে সেবার বিপরীতে নতুন করে ট্যারিফ বৃদ্ধি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। যেকোনো প্রকার ব্যয় বৃদ্ধি সরাসরি ব্যবসা করার খরচ বাড়িয়ে দেয়, যা ডুয়িং বিজনেস পরিবেশকে দুর্বল করে এবং উদ্যোক্তাদের আস্থার সংকট তৈরি করে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে, যা দেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে।’ 

তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন। এ অবস্থায় অতিরিক্ত শুল্ক ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে আরও জটিল করে তুলবে। তাই আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি, এ ধরনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার।’

সম্প্রতি লন্ডনভিত্তিক বন্দর ও শিপিং বিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো সংবাদমাধ্যম ‘লয়েডস লিস্ট: ওয়ান হানড্রেড পোর্টস ২০২৫’ শীর্ষক বিশেষ প্রকাশনায় বৈশ্বিক তালিকাটির সর্বশেষ সংস্করণ প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দর ৬৮তম হয়েছে। আগের দুই বছরে এর অবস্থান ছিল ৬৭তম। সংবাদমাধ্যমটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৬২৭ টিইইউস (একক) কনটেইনার পরিবহন হয়েছে। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ ৫০ হাজার ৭৯৩ টিইইউস। অর্থাৎ এক বছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে প্রকাশনায় বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে প্রথম বিদেশি অপারেটর দ্বারা পরিচালিত টার্মিনাল চালুর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের জট নিরসন ও আধুনিকায়নে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে।’ তালিকায় পিছিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সচিব মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, তারা এখনো লয়েডস লিস্টের বিস্তারিত প্রতিবেদন হাতে পাননি। তবে এ র‌্যাংকিং শুধুমাত্র কনটেইনার হ্যান্ডলিং সংখ্যার ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে, যে কারণে বন্দরের সার্বিক কার্যকারিতা বা সক্ষমতাকে পুরোপুরি প্রতিফলিত করে না এই প্রতিবেদনে।

এনটিএফসি সভায় আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির আশা বাণিজ্য উপদেষ্টার
ন্যাশনাল ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন কমিটির (এনটিএফসি) নবম সভায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, বাণিজ্য সহজীকরণের মাধ্যমে ন্যায় ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হবে। এতে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়বে এবং সম্পদের সুষম বণ্টনে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, কাস্টমস অটোমেশন চালু হলে আমদানি-রপ্তানি সহজ হবে, কর ফাঁকি কমবে এবং দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।

এএইচএস/এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আমদানি-রপ্তানি

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর