
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংক খাতের লুকানো খেলাপি ঋণ বের হয়ে আসছে। আবার আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের ঋণও খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ এক বছরের ব্যবধানে ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
অর্থাৎ ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণের এক-চতুর্থাংশের বেশি এখন খেলাপি। এতেই বর্তমানে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ।
সম্প্রতি প্রকাশিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার আর্থিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের হার ৯ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, আগে বিভিন্ন সময় ছলচাতুরী করে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হতো। আবার সহজে ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করার কারণেও খেলাপি ঋণ কম ছিল। এখন ঋণমানে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করা শুরু হয়েছে। আবার ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা ও আওয়ামী সমর্থিতদের ব্যবসা খারাপ হয়ে পড়ায় খেলাপি ঋণ বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, খেলাপি ঋণ এভাবে বাড়তে থাকলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে উদ্যোগ নিতে হবে। যারা ভালো ব্যবসায়ী, তারা যেন আবার ব্যবসা শুরু করতে পারেন। সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
এডিবির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। ২০২৩ সাল শেষে এ হার ছিল ৯ দশমিক ৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সাল থেকে প্রতিবছরই বাংলাদেশের খেলাপি ঋণের হার বেড়েছে। ২০২১ সালে এ হার ছিল ৮ শতাংশ, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৭ শতাংশে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের মতো ২০২১ সাল থেকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে নেপাল ও শ্রীলঙ্কার। বাকি দেশগুলোর খেলাপি ঋণ কমেছে। যেমন ভুটানের খেলাপি ঋণের হার ২০২০ সালে ছিল ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০২২ সালে কমে হয়েছে ৩ শতাংশ।
ভারতের খেলাপি ঋণের হার ২০২০ সালে ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে কমে হয়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। মালদ্বীপের খেলাপি ঋণ এ সময়ে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
এডিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম খেলাপি ঋণের হার চীনের তাইপে ও হংকংয়ে। আর বাংলাদেশের পর সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণের হার কিরগিজস্তানে। তবে দেশটির খেলাপি ঋণের হার কমছে। ২০২২ সালে দেশটির খেলাপি ঋণের হার ছিল ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে কমে হয়েছে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের শেষে দেশের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দাঁড়ায় ২০ দশমিক ২০ শতাংশ।
চলতি বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। এটি বর্তমানে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের ২৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
ডিআর/এমবি