Logo

অর্থনীতি

৯০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ, পুনরুদ্ধারে অক্ষম রাষ্ট্রায়ত্ত ৪ ব্যাংক

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৫

৯০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ, পুনরুদ্ধারে অক্ষম রাষ্ট্রায়ত্ত ৪ ব্যাংক

গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর

বছরের পর বছর অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্বল তদারকির কারণে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ পুনরুদ্ধার সক্ষমতা তলানিতে ঠেকেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন শেষে চার রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৩২ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা বা ৯০ শতাংশেরও বেশি এখন অশোধনযোগ্য ‘খারাপ ঋণ’।

ব্যাংক খাতের নিয়ম অনুযায়ী ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে কমপক্ষে ১২.৫ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। অথচ চার ব্যাংকের মধ্যে তিনটির মূলধন সংরক্ষণ হার ন্যূনতম পর্যায়ের নিচে, কোথাও কোথাও তা ঋণাত্মক। ফলে নতুন ঋণ বিতরণ ব্যাহত হচ্ছে, একই সঙ্গে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন জোগাড় করতেও হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো।

জনতা ব্যাংক
জনতা ব্যাংকের মোট ঋণের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ খেলাপি। জুন শেষে এ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭২,১০৭ কোটি টাকা (৭৬%)। এর মধ্যে ৯৩ শতাংশই ক্ষতি ঋণ। মূলধন পর্যাপ্ততার হার ঋণাত্মক (–৩.২৫%)। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটির লোকসান দাঁড়িয়েছে ২,০৭১ কোটি টাকা।

সোনালী ব্যাংক
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে সোনালী ব্যাংক। এর খেলাপি ঋণের হার ২০% হলেও মূলধন পর্যাপ্ততার হার ১০.১০%, যা ন্যূনতম শর্ত পূরণ করছে। জানুয়ারি–জুন সময়ে ব্যাংকটি ৫৯১ কোটি টাকা নেট মুনাফা করেছে।

অগ্রণী ব্যাংক
অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩২,২৫৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪০.৫%। এর মধ্যে প্রায় ৮৭ শতাংশ অশোধনযোগ্য। মূলধন পর্যাপ্ততার হার মাত্র ১.৯৭%। এ বছর জানুয়ারি–জুন সময়ে ব্যাংকটি ১১৪ কোটি টাকা মুনাফা দেখালেও মূলধনের ঘাটতি পূরণে তা অপ্রতুল।

রূপালী ব্যাংক
রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২২,১৭৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪৪%। এর মধ্যে ৯১% ক্ষতি ঋণ। মূলধন পর্যাপ্ততার হার ২.৮৬%। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে নেট মুনাফা নেমে এসেছে মাত্র ৮.৩৪ কোটি টাকায়, যা আগের ছয় মাসে ছিল ৬৪ কোটি টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, প্রকৃত খেলাপি ঋণকে বছরের পর বছর সঠিকভাবে শ্রেণিকরণ করা হয়নি। ফলে আজ বিপুল অশোধনযোগ্য ঋণ সামনে এসেছে। তার মতে, নতুন ঋণ বিতরণের চেয়ে এখন পুনরুদ্ধারে মনোযোগী হওয়া জরুরি।

তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে যে লুটপাট হয়েছে, তার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে এক-দুই বছর যথেষ্ট নয়। সঠিক করপোরেট গভর্নেন্স ছাড়া এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।

এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

সোনালী ব্যাংক রূপালী ব্যাংক অগ্রণী ব্যাংক

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর