Logo

অর্থনীতি

পরিসংখ্যান নেই ডেইরি খাতে মিথেন গ্যাস নির্গতের

Icon

তরিকুল ইসলাম সুমন

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৩২

পরিসংখ্যান নেই ডেইরি খাতে মিথেন গ্যাস নির্গতের
  • কান্ট্রি ইমিশন ফ্যাক্টক ধরে কাজ করা হচ্ছে -পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর
  • মিথেনের পরিমাণ নির্ধারণে এফএও সঙ্গে কাজ করছি -মহাপরিচালক, ডিএলএস
  • বেশি উৎপাদন, কম ইমিশনে জোর দেওয়া প্রয়োজন -ড. আনসারী

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী গ্রিন হাউস গ্যাস। আর এই গ্যাসের মধ্যে অন্যতম হলো মিথেন। বিশ্বে যত মিথেন গ্যাস নির্গত হয় তার ১৫ শতাংশ আসে গবাদিপশু থেকে। আর এই ১৫ শতাংশ গ্যাসের আবার ৪৭-৬৫ শতাংশ আসে ডেইরি সেক্টর থেকে। জলবায়ু ও কৃষি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

বিশেষ করে উন্নত দেশগুলো এলডিসি (কম ও অনুন্নয়নশীল) দেশগুলোর উপরে এ গ্যাস নির্গমনের দায় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে বাংলাদেশে ডেইরি শিল্পে গবাদি পশুর ঢেঁকুর, জাবর কাটা, বায়ু ত্যাগ করা এবং বর্জ্য অব্যবস্থাপনাই প্রধানত মিথেন গ্যাস নির্গত করে বলে জানা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কৃষি এবং ডেইরি সমান সমান বলা হচ্ছে। তবে ডেইরি সেক্টরে নির্গত হওয়া মিথেন গ্যাসের ৮৯ শতাংশ আসে গরুর ঢেঁকুর এবং জারবকাটা থেকে, বাকি ২১ শতাংশ আসে গবাদি পশুর প্রসাব, গোবর ও রোমেন ফরমেশনের মাধ্যমে।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (জলবায়ু পরিবর্তন এবং আন্তর্জাতিক কনভেনশন) মির্জা শওকত অলী বলেন, 'আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের এ বিষয়ে কারো কাছে জবাবদিহি নেই। আমরা বিশ্বের ১৪ তম মিথেন নির্গতকারী দেশ। এর পরিমাণ মাত্র শূন্য দশমিক ৪৮ শতাংশ। তারপরেও আমাদের দেশে ডেইরি সেক্টরে মিথেন নির্গমন হয়ে থাকে- গরু যখন জাবর কাটে, মলমূত্র ত্যাগ করে। তবে লাইভ স্টক সেক্টরে গ্লোবার ইমিশন ফ্যাক্টক ধরে কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু সব দেশের গবাদিপশুর সাইজ এক রকম নয়। এ কারণে কন্ট্রি ইমিশন ফ্যাক্টর নির্ধারণের কাজ চলছে। এর পরেই জানা যাবে- এই সেক্টরে কি ধরনের মিথেন গ্যাস নির্গত করছে।' তবে গবাদি পশুর মিথেন নির্গত কমাতে খাদ্যে কিছু ফুড সাপ্লিমেন্ট যুক্ত করা হলে মিথেনের পরিমাণ কমে আসবে বলেও তিনি মনে করেন।

জলবায়ু প্রাণিপুষ্টি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিথেন গ্যাস বায়ুমন্ডলকে বেশি উতপ্ত করে। আর এটি উদগিরণের পরে এর প্রভাব ১২-২০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়, অপরদিকে কার্বনডাই অক্সাইড বায়ুমন্ডলে থাকে ২০০ থেকে এ হাজার বছর। যে কারণে বায়ুমন্ডল থেকে মিথেন গ্যাসের প্রভার কমাতে বিশ্ব আজ সোচ্চার।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনিমেল নিউট্রিশন বিভাগ) অধ্যাপক এবং গাভির দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি ও মিথেন প্রশমনে পরিবেশ বান্ধন প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিষয়ক প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে ডেইরি খাতের ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে মিথেন গ্যাস নির্গমনে। এক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণলেয়ের একটি প্রকল্প চালু হচ্ছে পাবনা ও সিরাজগঞ্জে। সেখানে গরু প্রতি কতোটা মিথেন গ্যাস নির্গত হয়- তার ওপরে গবেষণা করা হবে। দেশে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো কাজ করা হয়নি। শুধু পরিমাণ নির্ধারণই নয়, পাশাপাশি মিথেনের পরিমাণ হ্রাস করে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধিতে এই প্রকল্প কাজ করবে। আমাদের এখানে গবাদি পশুকে যা খাওয়ানো হচ্ছে তার কোয়ালিটি ভালো না। এ কারণে বাড়ছে মিথেন গ্যাস। প্রকল্প এলাকায় গবাদি পশুর খাবারের সঙ্গে ওষুধি গাছের মিশ্রণ করে খাবার তৈরি করে খাওয়ানো হবে।'

এ বিষযে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সুফিয়ান বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনে গ্রিন হাউস গ্যাসের ভূমিকা রয়েছে। তার মধ্যে মিথেন একটি। ডেইরি খাত থেকে কতোটা গ্যাস নির্গত হয়, সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। এ বিষয়ে এফএও (জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা) এর সঙ্গে কাজ চলমান রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।' তিনি আরো বলেন, মিথেন নির্গত হ্রাসে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর খামারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রাণির খ্যাদ্যাভ্যাসও পরিবর্তনের জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বৃদ্ধি করা হচ্ছে সচেতনতা।

এসিআই এ্যাগ্রো বিজনেসেস এর প্রেসিডেন্ট ড. ফা. হ. আনসারি বলেন, উন্নত দেশ এখন মনোযোগ দিয়েছে কার্বন ইমিশন কমানোর দিকে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে গবাদিপশুর খামারকে। বলা হচ্ছে, গবাদি পশুর ঢেঁকুর ও মলমূত্র থেকে মিথেনসহ গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি হচ্ছে। বেশি গরু বেশি গ্যাস নিঃসরণ করবে। তাই বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে বিশেষ নজর রাখতে হবে। এক্ষেত্রে দুধ ও মাংসের জন্য অধিক উৎপাদনশীল জাত প্রয়োজন। বিশ্ব এখন কোয়ান্টিটি কমিয়ে কোয়ালিটিসম্পন্ন ইউনিট নিয়ে কাজ করছে। দুধের দেশ হিসেবে পরিচিত নিউজিল্যান্ডে গরু মাত্র ৬০ লাখ। এর মাধ্যমে দেশটি যে পরিমাণ দুধ উৎপাদন করে তা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও রপ্তানি করছে।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ডেইরি সেক্টারের ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে মিথেন গ্যাস ইমিশনে। তবে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত খুব একটা গবেষণা হয়নি। কি পারমাণ গ্যাস নির্গত হচ্ছে। তবে মিথেন গ্যাস তৈরি হয় গবাদি পশুর জাবর কাটায়, এক্ষেত্রে ফিড ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে, তবেই কমে আসবে মিথেনের পরিমান।

বিকেপি/এমবি 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর