৫ বেসরকারি ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু, বসছে প্রশাসক

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:৫৪

ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচটি ইসলামী ধারার বেসরকারি ব্যাংককে একীভূত করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংককে একীভূত করে নতুন একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক গঠিত হবে। সম্ভাব্য নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’।
প্রশাসক টিম নিয়োগ
একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় প্রতিটি ব্যাংকে পাঁচ সদস্যের প্রশাসক টিম নিয়োগ করা হবে। টিম ব্যাংকগুলোর বিদ্যমান পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি কাজ করবে, তবে ধীরে ধীরে বর্তমান পর্ষদ কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।
তিনি বলেন, ‘আপাতত কোনো এমডি চাকরি হারাবেন না, পর্ষদও বহাল থাকবে। তবে প্রক্রিয়া শেষ হলে বর্তমান পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কমিটি বিলুপ্ত হবে।’
আর্থিক সংকট ও সরকারি সহায়তা
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই পাঁচ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৪৮ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত। একীভূত প্রক্রিয়া চালাতে প্রয়োজন হবে প্রায় ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকার মূলধন জোগান দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। সূত্র জানায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি, সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। অন্যদিকে, এক্সিম ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করত নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার।
আমানতকারীদের আশ্বস্ত করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এখানে আতঙ্কের কিছু নেই। আমানতকারীদের স্বার্থ সরকার রক্ষা করবে। ব্যাংক একীভূত করা হচ্ছে তাদের সুরক্ষার জন্য।’
নতুন বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ২০২৫
সভায় আরও জানানো হয়, বিদ্যমান বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২-এর পরিবর্তে নতুন বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ২০২৫ আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খসড়া অনুযায়ী, পরিচালনা পর্ষদে আর কোনো আমলা থাকবেন না। গভর্নরকে মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী সুপারিশে সংসদের অনুমোদন নিয়ে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। ডিসেম্বরের মধ্যেই এ অধ্যাদেশ কার্যকর করার লক্ষ্য রয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, নতুন অর্ডার কার্যকর হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অধিক স্বায়ত্তশাসন পাবে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকাস্থ সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এখন অনেকটা সরকারের একটি বিভাগের মতো পরিচালিত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি, বিশেষ করে গভর্নর নিয়োগে। গভর্নরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।’
এএইচএস/এএ