Logo

অর্থনীতি

৫ ব্যাংক একীভূত হলে গ্রাহকদের দুশ্চিন্তা কাটবে কি?

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:৪০

৫ ব্যাংক একীভূত হলে গ্রাহকদের দুশ্চিন্তা কাটবে কি?

দুর্বল হয়ে পড়া পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংকের গ্রাহকেরা দীর্ঘদিন ধরেই চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ব্যাংকে গিয়ে চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পাওয়া, এটিএম বুথ থেকে সীমিত অর্থ তোলা কিংবা চেক নিয়েও শূন্য হাতে ফেরার মতো পরিস্থিতি তাদের অনিশ্চয়তা ও দুশ্চিন্তাকে আরও ঘনীভূত করেছে। এমন বাস্তবতায় সরকার পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করে একটি রাষ্ট্রীয় ইসলামী ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এতে কি গ্রাহকদের দুশ্চিন্তা কেটে যাবে, নাকি আরও বড় অনিশ্চয়তার মুখে পড়বেন তারা— এ প্রশ্ন এখন সর্বত্র।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ সভায় মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সিদ্ধান্ত হয়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক একত্রিত হয়ে নতুন ব্যাংক গঠন করবে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার ২০০ কোটি দেবে সরকার, বাকিটা আসবে আমানত বীমা তহবিল ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার থেকে।

গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা
গ্রাহকদের দুর্ভোগ সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে টাকার সংকটে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক এম এ তৌফিক বলেন, ‘চেক নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। খুব সামান্য টাকাও অনেক সময় দিতে পারে না। আবার বুথ থেকেও এক-দুই হাজার টাকার বেশি টাকা তোলা যায় না।’

আরেক গ্রাহক ব্যবসায়ী শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার টাকা ব্যাংকে জমা, কিন্তু তুলতে গেলে বলে পরে আসতে। এই ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। আমাদের এই দুশ্চিন্তা কবে দূর হবে জানি না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যা
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘বারবার ওই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেওয়ার পরও ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, ‘সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর ব্যাংকগুলোর বোর্ড ভেঙে যাবে। নতুন বোর্ড হবে। জনবল একই থাকবে, তবে পুনর্বিন্যাস করা হবে। যেমন গুলশানে পাঁচটি শাখা থাকলে, একীভূত হওয়ার পর একটাই থাকবে, বাকি শাখাগুলো অন্যত্র সরানো হবে।’

গভর্নর মনে করেন, ‘এই প্রক্রিয়ায় গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, "প্রথমে সরকারি ব্যাংক হিসেবে চলবে, পরে বেসরকারিকরণ হতে পারে।’

অর্থনীতিবিদদের সংশয়
অর্থনীতিবিদদের অনেকে এই একীভূতকরণ নিয়ে সন্দিহান।

বিআইবিএম-এর সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আপনি যখন অনেকগুলো শুন্য যোগ করবেন তখন যোগফলও শুন্যই হবে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একত্র করলে তা বড় দুর্বল ব্যাংকেও পরিণত হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার আস্থা ফিরিয়ে আনতে চাইছে, কিন্তু সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার জন্য লাইন ধরেছে। তাহলে সংকট কি আসলে বাড়ছে, নাকি কমছে?’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, ‘ক্ষমতাশালী গ্রাহকরা টাকা তুলে নিচ্ছেন, সাধারণ গ্রাহকরা হাহুতাশ করছেন। মার্জার সফল না হলে তা গোটা ব্যাংক খাতেই আস্থার ঘাটতি তৈরি করবে।’

আশার কথা 
তবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যানরা আশাবাদী। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান বলেন, ‘ওই পাঁচটি ব্যাংকে এক কোটি গ্রাহক আছে। গ্রাহকদের স্বার্থেই একীভূত করা হচ্ছে। আশা করি মার্জ হওয়ার পর গ্রাহকদের দুশ্চিন্তাও কেটে যাবে।’

পেছনের কারণ
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠীর অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এসব শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক কার্যত ধ্বংসের পথে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, তাদের ঋণের ৪৮ থেকে ৯৭ শতাংশ খেলাপি হয়ে গেছে। এ কারণে গ্রাহকের আমানত ফেরত দেওয়ার সক্ষমতাও হারিয়েছে তারা।

সামনে কী?
সরকার মনে করছে, একীভূত ব্যাংক আস্থা ফিরিয়ে আনবে। তবে গ্রাহক এম এ তৌফিকের মতো অনেকে এখনো সতর্ক আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক মার্জের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা ভালো হতে পারে, যদি সরকার সঠিকভাবে মনিটরিং করে। আমরা চাই আমাদের টাকা নিরাপদে পাই, চাই আস্থার জায়গা তৈরি হোক।’

এখন তাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন— এই একীভূতকরণ কি গ্রাহকদের দীর্ঘদিনের দুশ্চিন্তা ঘোচাবে, নাকি তা আরও বড় আকারে ফিরে আসবে?

এমএইচএস 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বেসরকারি ব্যাংক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর