শর্টটার্ম গেইন নয়, বীমা সেক্টরে লংটার্ম কন্ট্রিবিউশন চাই : কামরুল সোবহান
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:৫৮
-68cbbba545a6f.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
মোস্তফা গোলাম কামরুল সোবহান বাংলাদেশের খ্যাতনামা শিল্পোদ্যোক্তা এবং ড্রাগন গ্রুপের চেয়ারম্যান। তিনি ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিং এবং রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান। দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি। তাছাড়া, কামরুল সোবহান বাংলাদেশে উরুগুয়ের কনসুল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর বাবা মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ছিলেন।
কামরুল সোবহান বীমা, শিক্ষা, বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা ও দক্ষ নেতৃত্ব প্রদর্শন করেছেন। এছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তাদের নিয়ে গঠিত সংগঠন বাংলাদেশ এন্টারপ্রেনার অর্গানাইজেশন (ইও, বাংলাদেশ)-এর সদস্য।
রূপালী ইন্স্যুরেন্স ও সোনালী লাইফের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে মোস্তফা গোলাম কামরুল সোবহানের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলাদেশের খবর-এর সিনিয়র রিপোর্টার আনোয়ার হোসাইন সোহেল।
ব্যাংকাস্যুরেন্সের সঙ্গে রূপালী ইন্স্যুরেন্স কবে থেকে যুক্ত হচ্ছে?
মোস্তফা গোলাম কামরুল সোবহান : আমরা ইতিমধ্যে কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় আছি। এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। আশা করি অল্প কিছুদিনের মধ্যে ব্যাংকাস্যুরেন্সের এগ্রিমেন্ট চূড়ান্ত হবে। তবে যেহেতু বিষয়গুলো কিছুটা কনফিডেনশিয়াল, তাই কোনো ব্যাংকের নাম এখনই বলতে পারছি না।
ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হলে তাদের শাখার মাধ্যমে লাইফ ও জেনারেল ইন্স্যুরেন্স উভয় প্রোডাক্ট বিক্রি করা সম্ভব হবে। আমার বিশ্বাস, লাইফ ইন্স্যুরেন্সই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হবে, কারণ ব্যাংকগুলোর বিশাল নেটওয়ার্ক এবং গ্রাহকের আস্থা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ব্যাংকগুলোও এর মাধ্যমে বাড়তি রাজস্ব পাবে এবং ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো নতুন আয়ের উৎসে প্রবেশ করবে।
বাংলাদেশের বিমা খাত প্রত্যাশামতো ভালো করছে না কেন?
মোস্তফা গোলাম কামরুল সোবহান : আমাদের দেশে বর্তমানে প্রায় ৮০–৮১টি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি আছে। অথচ ভারতের মতো বিশাল অর্থনীতি ও জনসংখ্যার দেশে ৪০টির মতো কোম্পানি রয়েছে। কোম্পানি বেশি হওয়ায় এখানে অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। ফলে অনেক কোম্পানি ব্যবসা ধরতে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে এবং নিয়মিত ক্যাশফ্লো সংকটে পড়ে। এর প্রভাব পড়ে ক্লেইম সেটেলমেন্ট ও কাস্টমার সার্ভিসে।
তবে সব কোম্পানি একই রকম নয়। উদাহরণ হিসেবে সোনালী লাইফকে বলা যায়— আমরা বছরে প্রায় তিনশ কোটি টাকার ক্লেইম মাত্র সাত দিনের মধ্যে সেটেলমেন্ট করেছি। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দিচ্ছি। বর্তমানে আমাদের অনটাইম ক্লেইম সেটেলমেন্ট ৯৯.৯ শতাংশ।
রূপালী ইন্স্যুরেন্সের অবস্থান এখন কোথায়?
মোস্তফা গোলাম কামরুল সোবহান : জেনারেল ইন্স্যুরেন্স খাতে রূপালী ইন্স্যুরেন্স এখন শীর্ষ অবস্থানে। আমরা প্রায় ৯৮ শতাংশ ক্লেইম সেটেলমেন্ট করেছি, যা একটি উল্লেখযোগ্য রেকর্ড। আমাদের টিমে দক্ষ নেতৃত্ব ও যোগ্য বোর্ড অফ ডিরেক্টরস আছে। আমরা চেষ্টা করছি ভিন্নধর্মী ও সিস্টেমেটিক পদ্ধতিতে কাজ করতে। বাবার (মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস) ভিশন ধরে রেখে আমরা রূপালী ইন্স্যুরেন্সকে দেশের এক নম্বর কোম্পানিতে রূপান্তর করতে চাই।
অনেকেই বলছে, ইন্স্যুরেন্স খাতে পরিবারতন্ত্র চলছে। আপনার মতামত কী?
মোস্তফা গোলাম কামরুল সোবহান : এখানে পরিবারতন্ত্রের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কোম্পানি পরিচালনার মাইন্ডসেট। কেউ এথিক্সকে গুরুত্ব দেন, কেউ দেন না। আমরা চেষ্টা করছি সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার সঙ্গে কাজ করতে। আমাদের বোর্ডে উচ্চশিক্ষিত ও যোগ্য মানুষ আছেন। দ্বিতীয় প্রজন্মও সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। আমাদের উদ্দেশ্য শর্ট-টার্ম গেইন নয়, বরং লং-টার্ম কন্ট্রিবিউশন।
আইডিআরএ’র তদারকি যথেষ্ট মনে করছেন কি?
মোস্তফা গোলাম কামরুল সোবহান : আইডিআরএ যথেষ্ট যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করছে। তবে আমি মনে করি, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) আরও ভোকাল হতে পারে। বিশেষ করে জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর মধ্যে কমিশন নিয়ে অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হলে আইডিআরএ ও বিআইএকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
ফৌজিয়া কামরুন তানিয়ার সিইও পদে নিয়োগ বিষয়ে একটু বলুন।
মোস্তফা গোলাম কামরুল সোবহান : ফৌজিয়া তানিয়ার জন্য আমরা আইডিআরএ রিভিউ অ্যাপ্লিকেশন দিয়েছি। আশা করি আইডিআরএ ইতিবাচকভাবে দেখবেন। গত প্রায় ১৫ বছর ধরে সে ইন্স্যুরেন্স সেক্টরে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। তাছাড়া সে বিদেশে পড়াশোনা করেছে। লাইফ ইন্স্যুরেন্স নিয়ে তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতাও আছে। ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই জানেন, সে এই দায়িত্ব পালনে সক্ষম।
‘মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ফাউন্ডেশন’ নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
মোস্তফা গোলাম কামরুল সোবহান : আব্বা সবসময় সমাজসেবামূলক কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর ভিশন ধরে রাখতে আমরা পারিবারিক আয় থেকে নির্দিষ্ট অংশ (২.৫%) ফাউন্ডেশনে দিচ্ছি। এর মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে স্কুল, কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণসহ নানা কাজে সহায়তা করছি।
সোনালীর পরে রূপালীও কি কুদ্দুস পরিবারের নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে?
মোস্তফা গোলাম কামরুল সোবহান : আমরা আইনের মধ্যে থেকে কাজ করছি। আইডিআরএ নতুন কোনো আইন করলে আমরা মেনে নেব। আমাদের উদ্দেশ্য উচ্চাভিলাষ নয়, বরং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখা। গার্মেন্টস সেক্টরে আমাদের ব্যবসা প্রায় ৪০ বছরের পুরনো। বিমা সেক্টরে আমরা কাজ করছি, তবে আমাদের গার্মেন্টস ব্যবসার পরিধি বিমার থেকে অনেক ছোট। আমরা সোনালী লাইফ ও রূপালী ইন্স্যুরেন্সকে দেশের এক নম্বর কোম্পানি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। বীমা সেক্টর থেকে আমরা লং-টার্ম গেইন করতে চাই।
আপনাকে কি আগামীতে বিজিএমইএ বা বিকেএমইএ’র বোর্ডে দেখা যাবে?
মোস্তফা গোলাম কামরুল সোবহান : আপাতত না। আগামী ১০–১৫ বছর ব্যবসায় মনোনিবেশ করতে চাই। হঠাৎ আব্বা মারা গিয়েছেন। তাই ব্যবসার চাপ এত বেশি যে সংগঠনের রাজনীতিতে সময় দিতে পারছি না। আমি যেকোনো কাজ করি ১০০ ভাগ ফোকাস দিয়ে করি। ভবিষ্যতে যদি সুযোগ আসে এবং দেশের জন্য সত্যিকারের অবদান রাখতে পারি, তখন অবশ্যই ভাবব।
এমএইচএস