প্রতীক হিসেবে ‘মেড ইন বাংলা’ প্রতিষ্ঠায় ৩ খাত গুরুত্বপূর্ণ : শিল্প উপদেষ্টা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:০২

ছবি : সংগৃহীত
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, ‘বিশ্বমানের প্রতীক হিসেবে ‘মেড ইন বাংলা’ নামে ব্র্যান্ডকে প্রতিষ্ঠা করতে বাংলাদেশের তিনটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সেক্টর হলো অটোমোবাইলস, এগ্রো-মেশিনারি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এছাড়া এ ব্র্যান্ড তৈরিতে উৎপাদনভিত্তিক শিল্পের বিকাশ, প্রযুক্তি স্থানান্তর, গবেষণা ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার বিকল্প নেই।’
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) আয়োজিত ‘অটোমোবাইলস অ্যান্ড এগ্রো-মেশিনারি ফেয়ার-২০২৫ : রোড টু মেড ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক ড. এম মাসরুর রিয়াজ, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
শিল্প উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের ৩টি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সেক্টর হলো অটোমোবাইলস, এগ্রো-মেশিনারি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এগুলো ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের বিকাশ, রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করছে, আর অটোমোবাইল শিল্প পরিবহন খাতে আধুনিকায়নের মাধ্যমে অর্থনীতিকে গতিশীল করছে। ‘মেড ইন বাংলা’ ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠায় এ খাতগুলোর গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি জানান, জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২-এর লক্ষ্য হলো দেশীয় উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। এজন্য সরকার নীতি সহায়তা, ট্যাক্স সুবিধা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে এ খাতকে এগিয়ে নিচ্ছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয় বিআইটিএসি, বিএসসিআইসি, বিএসটিআই, ডিপিডিটি ও এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অটোমোবাইলস ও এগ্রো-মেশিনারি খাতকে নিয়মিত সহায়তা দিচ্ছে। এ ধরনের মেলা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে এবং নতুন ব্যবসায়িক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সকলে দেশের জন্য কাজ করলে দেশ উন্নত হবে এবং জাতি হিসেবে আমরা গর্ব করতে পারব। সম্মিলিতভাবে কাজ করলে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ শুধু একটি স্লোগান নয়, বরং শিল্পোন্নয়ন, আত্মনির্ভরতা ও প্রতিযোগিতার প্রতীক হয়ে বিশ্ববাজারে জায়গা করে নেবে।’
মূল প্রবন্ধে খাতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে ড. এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘দেশে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার অটোরিকশার মধ্যে ২ লাখ ৭০ হাজারের কোনো সার্টিফিকেট নেই। ২০৫০ সালে পার্সন-ওরিয়েন্টেড ভেহিকেল হবে ৯০ শতাংশ, অথচ বাংলাদেশে পরিবহন খরচ এখনও বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বেশি।’
তিনি জানান, দেশের কৃষি যন্ত্রপাতির চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়, বাকি ৮০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। এগ্রো লজিস্টিক না থাকায় বিপুল পরিমাণ ফসল নষ্ট হয়। প্রতিবেশী ভারতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের হার ৪৭ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে তা অনেক কম।
ড. রিয়াজ বলেন, ‘১৯-২০ কোটি মানুষের দেশে খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। কিন্তু গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে সক্ষমতা খুবই সীমিত, আর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ঘাটতি কৃষি যন্ত্রপাতি খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জ।’
তিনি আরও যোগ করেন, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং কেবল দেশীয় বাজারেই নয়, বৈশ্বিক পর্যায়েও সম্ভাবনাময় খাত। তবে শ্রমকে যথাযথভাবে কাজে না লাগাতে পারলে কোনো প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাওয়া যাবে না।
অনুষ্ঠান শেষে শিল্প উপদেষ্টা ও বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, এ ধরনের আয়োজন বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে, নতুন বাজার উন্মোচন করবে এবং ‘মেড ইন বাংলা’ ব্র্যান্ডকে বিশ্বমানে প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে।
এএইচএস/এএ