
প্রতীকী ছবি
দেশে ডলারের সংকট কাটতে শুরু করেছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানির ওপর আরোপিত কড়াকড়ি শর্ত শিথিল করেছে। এতে বিলাসপণ্য, ভোগ্যপণ্য, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামালসহ সামগ্রিক আমদানি কার্যক্রমে গতি ফিরেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই–আগস্ট সময়ে সামগ্রিক আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১০ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের জুলাই–আগস্টে ছিল ১০ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, এলসি খোলা ও নিষ্পত্তিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে সোয়া ৮ শতাংশ ও সোয়া ৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. এজাজুল ইসলাম বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের পর বৈশ্বিক ডলার সংকটের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে। তখন বিলাসপণ্য ও বিদেশগমনসহ কিছু পণ্যের আমদানিতে কড়াকড়ি করা হয়। কিন্তু এখন ব্যাংকগুলোর হাতে পর্যাপ্ত ডলার রয়েছে। ফলে শর্ত শিথিল করা হয়েছে, এতে আমদানিও বেড়েছে।’
ভোগ্যপণ্য ও কাঁচামালে প্রবৃদ্ধি
চলতি অর্থবছরের জুলাই–আগস্ট সময়ে ভোগ্যপণ্যের জন্য এলসি খোলা হয়েছে ৯৯০ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৯০৭ মিলিয়ন ডলার— প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ১৪ শতাংশ।
একই সময়ে এই খাতে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৯২০ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছর ছিল ৮৫৩ মিলিয়ন ডলার— প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে ৬৬৬ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৭৫৩ মিলিয়ন ডলার— হ্রাস ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ। তবে নিষ্পত্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৩২ মিলিয়ন ডলার, যা এক বছরে কমেছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।
মূলধনী যন্ত্রপাতি ও জ্বালানি খাতে মিশ্র চিত্র
কারখানার মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য চলতি সময়ে এলসি খোলা হয়েছে ২৬৪ মিলিয়ন ডলার (আগের বছর ২৬২ মিলিয়ন ডলার)— প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৭২ শতাংশ।
তবে নিষ্পত্তি কমে হয়েছে ৩০৯ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের ৩৫১ মিলিয়ন ডলার থেকে ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ কম।
পেট্রোলিয়াম পণ্যে এলসি খোলার পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪৩৭ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের ১ হাজার ৩৯৪ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বেশি। তবে নিষ্পত্তি কমে হয়েছে ১ হাজার ৪৪২ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের ১ হাজার ৪৮৪ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ কম।
আমদানিতে নতুন গতি
ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, “মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানিসহ সামগ্রিক আমদানির ঊর্ধ্বগতি শিল্পখাতের জন্য ইতিবাচক। পর্যাপ্ত ডলার থাকায় ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করছেন, যা উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়াতে সহায়তা করবে।”
রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারে, ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৩১ মাস পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ব্যাংকগুলোর হাতে উদ্বৃত্ত ডলার থাকায় মঙ্গলবার বাজার থেকে ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার, আর ২০২৪ সালের জুলাই শেষে (তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময়) তা নেমে গিয়েছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে।
উল্লেখ্য, দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ ছিল ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলার।
আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি
২০২৪–২৫ অর্থবছরে দেশে মোট ৬ হাজার ৮৩৫ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের ৬ হাজার ৬৭২ কোটি ডলারের তুলনায় ১৬৩ কোটি ডলার বেশি— প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি কমেছিল ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ।
এএইচএস/এমএইচএস