Logo

অর্থনীতি

শ্রম আইন, বন্দর মাশুল ও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন নিয়ে বিজিএমইএ’র উদ্বেগ

Icon

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:০৮

শ্রম আইন, বন্দর মাশুল ও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন নিয়ে বিজিএমইএ’র উদ্বেগ

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) নতুন শ্রম আইন সংশোধনী, চট্টগ্রাম বন্দর মাশুল বৃদ্ধি ও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন সংক্রান্ত বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব ইস্যুতে সরকারের পুনর্বিবেচনা চেয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ এমনভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যা শিল্প ও বিনিয়োগের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে। টিসিসি ও ওয়ার্কিং কমিটিতে ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও উপদেষ্টা পরিষদ অনেকগুলো প্রস্তাব একতরফাভাবে পরিবর্তন করেছে, যা শিল্পে আস্থা সংকট তৈরি করবে।

বিজিএমইএ সভাপতি জানান, নতুন আইনে মাত্র ২০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ রাখা হয়েছে, যা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তিনি বলেন, ‘ভারতে ইউনিয়ন গঠনে ১০ শতাংশ বা অন্তত ১০০ শ্রমিকের সম্মতি প্রয়োজন, পাকিস্তানে ২০ শতাংশ। সেখানে আমাদের দেশে ২০ জনের ভিত্তিতে ইউনিয়ন গঠন দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে দুর্বল কাঠামো তৈরি করবে।’

তার মতে, এমন সিদ্ধান্তে অপ্রাসঙ্গিক ব্যক্তিরা ইউনিয়নের নামে শিল্পে হস্তক্ষেপ করতে পারে, যার ফলে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও উৎপাদন ব্যাঘাত ঘটবে।

সংবাদ সম্মেলনে ‘ভবিষ্য তহবিল’ ও ‘প্রগতি’—দুটি পেনশন স্কিম একসঙ্গে চালুর অনুমোদনকেও অযৌক্তিক বলে আখ্যা দেন মাহমুদ হাসান খান। তিনি বলেন, ‘একই সময়ে দুটি আর্থিক ব্যবস্থা পরিচালনা করলে উদ্যোক্তাদের প্রশাসনিক জটিলতা ও ব্যয় কয়েকগুণ বাড়বে।’ প্রতিযোগী দেশগুলোর উদাহরণ টেনে তিনি জানান, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কা—সব দেশেই একক পেনশন কাঠামো অনুসরণ করা হয়।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, নতুন সংশোধনীতে শ্রমিকের সংজ্ঞায় ‘কর্মচারী ও কর্মকর্তা’ যুক্ত হওয়ায় প্রশাসনিক স্তর ও শ্রমিক স্তরের সীমারেখা মুছে যাবে। এতে সিদ্ধান্তগ্রহণ ও দায়িত্ব বণ্টনে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সেবার বিপরীতে সম্প্রতি প্রায় ৪১ শতাংশ মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকেও ‘একতরফা’ আখ্যা দেন তিনি। ‘বন্দর কর্তৃপক্ষ বলে এসেছে, ৪০ বছর মাশুল বাড়ানো হয়নি। কিন্তু তারা ডলারে চার্জ নেয়। ১৯৮৬ সালে ১ ডলার ছিল ২৯ টাকা, এখন ১২২ টাকার ওপরে। অর্থাৎ আমরা টাকায় ৩০৮ শতাংশ বেশি দিচ্ছি,’ বলেন মাহমুদ হাসান।

তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম বন্দর লোকসানি নয়, বরং লাভজনক প্রতিষ্ঠান। তবু খরচ বাড়ানো হলে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় আরও বৃদ্ধি পাবে।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণের আগে আমাদের সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো ব্যয় কমিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা। কিন্তু সাম্প্রতিক নীতি ও ব্যয়বৃদ্ধি শিল্পখাতকে চাপে ফেলছে।’ তিনি সরকারের কাছে অন্তত তিন বছর সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানান, যাতে শিল্পখাত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারে।

মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘আমরা শ্রমিক কল্যাণে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী। কিন্তু আইন এমন হতে হবে, যা শ্রমিক ও শিল্প উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করে।’ তিনি সরকারের প্রতি শ্রম আইন পুনর্বিবেচনা, বন্দর মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং গ্যাস সংকট ও অর্থায়ন জটিলতার দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানান।

শেষে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই একটি ভারসাম্যপূর্ণ, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ—যা বিনিয়োগ টিকিয়ে রাখবে, কর্মসংস্থান বাড়াবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিকে টেকসই পথে এগিয়ে নেবে।’

এএইচএস/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বিজিএমইএ পোশাক খাত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর