বিক্রিতে ভাটা, গুদামে বাড়ছে টাইলসের মজুদ
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:৪৫
গত বছর দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রড, সিমেন্ট, টাইলসসহ পুরো নির্মাণ খাতেই বড় ধাক্কা লাগে। মূলত সরকারের উন্নয়নকাজে ধীর গতি আর বেসরকারি আবাসন খাতে মন্দার কারণে নির্মাণ খাতের ব্যবসায় প্রভাব পড়ে।
গ্রেটওয়াল সিরামিকসের গাজীপুর কারখানার মাসিক উৎপাদনক্ষমতা এক কোটি বর্গফুট হলেও বর্তমানে চাহিদা কমে যাওয়ায় পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে দুইটি বন্ধ রাখা হয়েছে। স্বল্প পরিসরে যে উৎপাদন হচ্ছে তা বিক্রি না হওয়ায় পণ্য গুদামে জমছে এবং কোম্পানিটি মূল্যছাড় দিয়ে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে টাইলসের বেচাবিক্রিতে মন্দাভাব চলছে। আগে স্বাভাবিক সময়ে আমরা মাসে গড়ে ৯০ লাখ বর্গফুট টাইলস বিক্রি করতাম, তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিক্রি অনেক কমে গেছে। গত মাসে বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫০-৫৫ লাখ বর্গফুট।
গ্রেটওয়ালের মতো দেশের অধিকাংশ টাইলস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে। প্রতিষ্ঠানভেদে বিক্রি কমার হার ১৫-৪০ শতাংশ। এই অবস্থায় উৎপাদন কমিয়ে, মূল্যছাড় দিয়ে কোনো রকমে ব্যবসায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে কোম্পানিগুলো। তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরলে ব্যবসায়ও গতি ফিরে আসবে বলে মনে করেন সিরামিক খাতের ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, সামগ্রিকভাবে টাইলসের বেচাবিক্রি ১৫-২০ শতাংশ কমেছে। বিক্রি কমে যাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।
বিসিএমইএর তথ্যানুযায়ী, দেশের টাইলসের বার্ষিক বাজার প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার। এই চাহিদার ৮৫ শতাংশ দেশীয় কারখানাগুলো সরবরাহ করে থাকে। বর্তমানে ৩১ টাইলস কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানে ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
দেশে টাইলস উৎপাদনকারী শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি শেলটেক সিরামিকস। ভোলায় তাদের নিজস্ব কারখানায় তিনটি ইউনিটে প্রতিদিন সাড়ে ৪ লাখ বর্গফুট টাইলস উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৩০-৪০ শতাংশ কম। বিক্রি কমে যাওয়ায় গুদামে টাইলসের মজুত বাড়ছে।
শেলটেক সিরামিকসের চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ বলেন, বিক্রি কমে যাওয়ায় অন্য ব্যবসা থেকে টাকা এনে খরচ চালাতে হচ্ছে। তবে বছরের পর বছর সেটি করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা না এলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরবে না। ফলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে যা যা করণীয়, সেসব করতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সিরামিক খাতের মূল কাঁচামাল খনিজ মাটি, ক্লে ও খনিজ পদার্থ, ফেলম্পার আমদানি হয়েছে ২২ লাখ ৬২ হাজার টন। তার আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছর আমদানি হয়েছিল ২২ লাখ ৮৭ হাজার টন। তার মানে, গত বছর কাঁচামালের আমদানি কমেছে প্রায় ১ শতাংশ।
মন্দার বাজারে কোনো প্রতিষ্ঠান ভালোও করেছে। যেমন-টাইলস উৎপাদনে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি আকিজ সিরামিক। ময়মনসিংহের ভালুকায় তাদের কারখানায় দিনে ৭৫ হাজার বর্গমিটার টাইলস উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। গত অর্থবছর প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি ৩ শতাংশ বেড়েছে বলে জানালেন আকিজ বশির গ্রুপের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম।
বিসিএমইএর সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, সরকার চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস কিনছে না। যদিও আগের চেয়ে পরিস্থিতি ভালো। তবে পূর্ণ সক্ষমতা অনুযায়ী গ্যাস মিলছে না। অনেকেই বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করেছেন। এতে খরচ বেড়েছে। এ ছাড়া সরকারি প্রকল্পের গতি কমে যাওয়া ও আবাসন খাতের ব্যবসা কমে যাওয়ায় টাইলসে বেচাবিক্রি কমেছে। নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার এলে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরবে।
বিকেপি/এমএইচএস

