Logo

অর্থনীতি

বিল্ডিংয়ের আয়তনের সঙ্গে বাড়ছে ফ্ল্যাটও

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:৫৫

বিল্ডিংয়ের আয়তনের সঙ্গে বাড়ছে ফ্ল্যাটও

ঢাকার ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) সংশোধনের মাধ্যমে রাজধানী বিভিন্ন এলাকার ভবনের উচ্চতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে ড্যাশ রিভিউ-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। তাতে অভিজাত এলাকার সঙ্গে অন্যান্য এলাকার ভবনের আয়তন নিয়ে সৃষ্টি হওয়া বৈষম্য কমে আসবে। আবাসন ব্যবসায় গতি আসবে বলে মনে করেন এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। যদিও দ্বিতীয় দফায় ড্যাপের সংশোধনীতে ব্যবসায়ীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন পরিকল্পনাবিদেরা।

জানা গেছে, সংশোধিত ড্যাপে রাজধানীকে আগের ২৭৫টি জনঘনত্ব ব্লকের পরিবর্তে ৬৮টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। ২০ ফুট বা তার বেশি প্রশস্ত সড়কের পাশের আবাসিক ভবনের ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর বা ফার) বা আয়তন বাড়ছে।

তবে ২০ ফুটের চেয়ে কম প্রশস্ত সড়কসংলগ্ন ফ্ল্যাটের আয়তন বাড়বে না। ২০ ফুট বা তার বেশি সড়কের পাশের ভবনের আয়তনের পাশাপাশি ফ্ল্যাটের সংখ্যাও বাড়বে। যদিও পুরান ঢাকায় একটি ভবনে ফ্ল্যাটের সংখ্যা দ্বিগুণ হলেও অন্যান্য এলাকায় বাড়বে ১ থেকে ৩টি করে।

গত ১৯ অক্টোবর উপদেষ্টা কমিটির সভায় ড্যাপের সংশোধনী নীতিগত অনুমোদন হয়। একই দিন 'ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০১৫' অনুমোদন হয়েছে। শিগগিরই ড্যাপের সংশোধনী ও বিধিমালাটির প্রজ্ঞাপন হবে বলে জানান গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা।

চূড়ান্ত হওয়া ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় বলা হয়েছে, ও কাঠার বেশি আকারের জমিতে ভবন করলে বর্জ্য পরিশোধনাগার (সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট গ্র্যান্ট) লাগবে। আগে ভবনের নকশা অনুমোদনের আগে ফি জমা দিতে হতো। এখন নকশা অনুমোদনের সুপারিশ করার পর ফি দিতে হবে। আগে ভবন ব্যবহার বা অকুপেন্সি সনদ পাঁচ বছরের জন্য দেওয়া হতো। এখন নকশায় কোনো পরিবর্তন না হলে সারা জীবনের জন্য মেয়াদ থাকবে। আগে বড় প্রকল্পের নকশার অনুমোদন দিত দুই কমিটি। এখন একটি কমিটি অনুমোদন দিলেই হবে।

রাজউকের উপনগর-পরিকল্পনাবিদ মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ড্যাপ সংশোধন এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষের সুবিধা হয়। আগে কৃষিজমি হিসেবে চিহ্নিত থাকলে শর্তসাপেক্ষে হাসপাতাল, স্কুল-মাদ্রাসা করার অনুমোদন মিলত। এখন আর সেই সুযোগ রাখা হয়নি।

ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের এলাকা নিয়ে ২০২২ থেকে ২০৩৫ সালের জন্য করা মহাপরিকল্পনাটি ২০২২ সালের আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে। অ্যাপ প্রণয়নের পর থেকেই আবাসন ব্যবসায়ীরা সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে এক দফা সংশোধন করে সরকার। তাতেও সন্তুষ্ট হতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ড্যাপ সংশোধনে গত ডিসেম্বরে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে দেয় সরকার।

ভবনের আয়তন বাড়ছে। ড্যাপ সংশোধনীতে সড়কের প্রশস্ততার ফারের পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক ফার ও আবাসন ইউনিটের হার বাড়ানো হয়েছে। সাধারণত সড়কের প্রশস্ততা ও এলাকাভিত্তিক ফারের মধ্যে যেটি কম, সেটি ধরে ভবনের আয়তন নির্ধারণ করা হয়।

জানা যায়, ৬ থেকে ৮ ফুট সড়কের ফার ১.৫ থেকে কমিয়ে ১.২৫ করা হয়েছে। ৮ থেকে ১২ ফুট, ১২ থেকে ১৫ ফুট এবং ১৫ থেকে ২০ ফুটের কম প্রশস্ত সড়কের ফার একই থাকছে। তবে ২০ ফুট সড়কের পাশের ভবনের ফার ২.৭৫ থেকে বাড়িয়ে ৩.২৫ করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৩০ ফুট সড়কের পাশের ভবনের ফার ৩.২৫ থেকে বাড়িয়ে ৩.৫০ করা হয়েছে।

যেসব এলাকায় ফার বেশি বেড়েছে, তার মধ্যে রয়েছে কড়াইলেও ২, মিরপুরে ২.৮ থেকে ৩.৪, দক্ষিণখানে ২ থেকে ৩.১, শেওড়াগাড়ায় ২ থেকে ৩, মহাখালীতে ২.২ থেকে ৩.৩, মোহাম্মদপুরে ২.৭ থেকে ৩.৪, পুরান ঢাকায় ২.৬ থেকে ৩.৩, বাসাবো-খিলগাঁওয়ে ২ থেকে ৩.৪, সাভারে ২ থেকে ৩.৪, মিরপুর ডিওএইচএসে ২.৫ থেকে ৪.৮ এবং খিলক্ষেত আবাসিক এলাকায় ২ থেকে ৪.৪।

সংশোধিত ড্যাপের তথ্যানুযায়ী, আবাসন ইউনিটের সর্বোচ্চ হার করা হয়েছে মহাখালীতে ২.৫, যা আগে ছিল ১.৯। এছাড়া পুরান ঢাকার আবাসন ইউনিটের হার ১.২ থেকে বাড়িয়ে ২.৪, মিরপুরে ১.৭ থেকে ১.৯, মোহাম্মদপুরে ১.৭ থেকে ২.২, শেওড়াপাড়ায় ১.৩ থেকে ১.৯, আফতাবনগরে ১.৪ থেকে ১.৭, পূর্বাচল আবাসিক এলাকায় ১.৬ থেকে ১.৯। কেরানীগঞ্জে ১.২ থেকে ২ এবং নিকেতন-এ ১.২ থেকে ১.৮ করা হয়েছে। আবাসন ইউনিটের সর্বনিম্ন হার সাতারকুল-নাসিরাবাদ ও কাউন্দিয়া-আমিনবাজারে ১.৩।

বর্তমানে মোহাম্মদপুরে ২০ ফুট সড়কের পাশের ও কাঠা জমিতে ৯,৭২০ বর্গফুট আয়তনের ভবন করা যায়। ফ্ল্যাটের সংখ্যা হয় ৮ থেকে ৯টি। ড্যাপ সংশোধনের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর একই জমিতে ১১,৭০০ বর্গফুট আয়তনের ভবন নির্মাণ করা যাবে। ওই আয়তনে ফ্ল্যাট করা যাবে সর্বোচ্চ ১১টি।

এ প্রসঙ্গে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, নতুন ড্যাপ চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকে পরিকল্পিত আবাসিক এলাকার বাইরের অন্য এলাকার জমির মালিকেরা আবাসন কোম্পানিকে জমি দিচ্ছিলেন না। তার কারণ আগের ড্যাপে ভবনের আয়তন ও ফ্ল্যাটের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে কমে গিয়েছিল। এতে আবাসন খাতে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। এখন ড্যাপ সংশোধন হওয়ায় এই স্থবিরতা কাটতে শুরু করবে। আশা করছি, আবাসন খাতে গতি ফিরবে। 

বিকেপি/এমএইচএস  

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

নির্মাণ কথা ঢাকার খবর

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর