পাইকারি বাজারে কমছে ভোগ্যপণ্যের দাম, খুচরায় মিলছে না সুফল
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:২৯
পাইকারি বাজারে বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গত এক মাসে কমেছে। বৈশ্বিক বাজারে দরপতনের প্রভাব সরাসরি দেশের পাইকারি বাজারে পড়লেও সাধারণ ভোক্তাদের কাছে খুচরা বাজারে সেই সুবিধা পৌঁছায়নি। বাজার মনিটরিংয়ে প্রশাসনের অনিয়মিত কার্যক্রম এই পার্থক্যের মূল কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এক সময় খুচরা ব্যবসায়ীরা কেজিপ্রতি ৫–৭ শতাংশ লাভ করলেও এখন পাইকারি দাম কমার পরও তারা ১০–২০ শতাংশ লাভ নিচ্ছেন। এতে সাধারণ ক্রেতাদের খরচ বেড়েই চলেছে।
উদাহরণ হিসেবে, মোটা মসুর ডালের পাইকারি দাম বর্তমানে ৮১–৮২ টাকা হলেও খুচরায় এটি ১০৫–১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ কেজিপ্রতি ২৩ টাকা বা প্রায় ২৮ শতাংশ মুনাফা উঠছে। চিনি পাইকারিতে ৯১–৯২ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরায় দাম ১০২–১০৫ টাকা। মুগ ডাল, ছোলা, খোলা সয়াবিন, পাম অয়েল, আটা-ময়দা সহ অন্যান্য নিত্যপণ্যেও একই ধরণ লক্ষ্য করা গেছে।
পাইকারি বাজারের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ভারত থেকে আমদানি করা মসুর ডালের দাম কমে ১৪৮ টাকায়, মুগ ডাল ১৪০, ছোলা ৯০, ছোলার ডাল ৯২ এবং খেসারি ডাল ৭৫ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। চিনি নেমে এসেছে ৯১–৯২ টাকায়।
ভোজ্যতেলের দামও বৈশ্বিক দরপতনের কারণে কমেছে। বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, “ডালের দাম রেকর্ডভাবে কমেছে। আগামী রমজানে ভোক্তারা সাশ্রয়ী মূল্যে ডাল কিনতে পারবেন।”
কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি দাম কমলেও তা দ্রুত খুচরায় প্রতিফলিত করছেন না। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মুগ ডালের খুচরা দাম ১২০–১৮০ টাকা, যদিও পাইকারি বাজারে দাম নেমে এসেছে ৮৫–১৪০ টাকায়। একইভাবে অ্যাংকর ডালের খুচরা দাম ৬০–৮০ টাকা, পাইকারিতে দাম ৪৩–৪৫ টাকিতে নেমেছে।
সয়াবিন ও পাম অয়েলের ক্ষেত্রেও পাইকারি এবং খুচরার মধ্যে বড় ফারাক রয়েছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের খুচরা মুনাফা ৩–৪ টাকা। সুপার পাম অয়েল পাইকারিতে প্রতি মণ ৬,১০০–৬,১২০ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরায় প্রতি কেজি ১৮০ টাকায় পৌঁছাচ্ছে।
কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘পাইকারি বাজারের দর কমলেও খুচরা পর্যায়ে অতিমুনাফা নেওয়া হচ্ছে। সাধারণ ভোক্তারা যাতে অতিরিক্ত খরচ না করেন, সরকারকে সারা বছরই বাজার স্থিতিশীল রাখার উদ্যোগ নিতে হবে।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাজার মনিটরিং কার্যক্রম নিয়মিত না থাকায় খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজারের সুবিধা লুকিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা নিচ্ছেন। তাই পাইকারি ও খুচরা বাজারের মধ্যে সমন্বয় এবং প্রশাসনের তৎপরতা জরুরি।

