বদলির পরও বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘স্পর্শকাতর বিভাগ’ সিআইবিতে নূরুল আলম
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ২১:৩৮
					বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিভাগ ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি)— যেখানে সংরক্ষিত থাকে দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণগ্রহীতাদের তথ্য। জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের ঋণখেলাপি যাচাইয়ে এই বিভাগের ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এমন সময়ে বিভাগটির পরিচালক নূরুল আলমকে ঘিরে একাধিক অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২৫ সেপ্টেম্বর তাকে ঢাকা সদর দপ্তর থেকে চট্টগ্রাম অফিসে বদলি করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু বদলি আদেশের পরও তিনি এখনো সিআইবিতে দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করছেন। এ ঘটনায় প্রশাসনিক মহলে বিস্ময় ও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
বিভিন্ন প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, নূরুল আলম কর্মজীবনে একাধিকবার সরকারি নীতিমালা ভঙ্গ করেছেন, তবুও প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠতার কারণে সুবিধা পেয়ে আসছেন।
তিনি ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রূপালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকে সাত বছর লিয়েনে ছিলেন। নীতিমালা অনুযায়ী সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত লিয়েন থাকা যায়। ফলে তার দীর্ঘ লিয়েন মেয়াদ অনিয়ম হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২০১৯ সালের হালনাগাদ নীতিমালা অনুযায়ী, লিয়েন শেষে মূল কর্মস্থলে অন্তত পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর পুনরায় লিয়েনের আবেদন করা যায়। কিন্তু তিন বছর না যেতেই তিনি আবার লিয়েনে যান— যা নিয়মবিরুদ্ধ। অভিযোগ রয়েছে, তার পুনঃলিয়েনের ঠিক আগে নীতিমালা সংশোধন করে বিশেষ সুযোগ তৈরি করা হয়েছিল।
সূত্রগুলো বলছে, নূরুল আলমের তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তাকে লিয়েন, পদোন্নতি ও সংবেদনশীল দায়িত্বে বিশেষ সুবিধা এনে দিয়েছে। বড় ঋণ অনুমোদনের মতো বিষয়ে ক্ষমতাবানদের উপকার করেছেন বলেও সন্দেহ রয়েছে।
এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তনের চেষ্টা ও নতুন যোগাযোগ তৈরি নিয়েও প্রশাসনে প্রশ্ন উঠেছে।
নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের ঋণখেলাপি তথ্য সিআইবি থেকে যাচাই করে। ফলে নির্বাচন-পূর্ব সংবেদনশীল সময়ে বদলিকৃত ও বিতর্কিত একজন কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট এমন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে রাজনৈতিক যোগাযোগনির্ভর ও নিয়মভঙ্গকারী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা জনস্বার্থের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘বদলিকৃত কর্মকর্তা নির্দিষ্ট কিছু কারণ দেখিয়ে সময় চাইতে পারেন। নির্ধারিত সময়ের পরেও যোগদান না করলে অটো-রিলিজ কার্যকর হবে।’
তিনি আরও জানান, নূরুল আলমের বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ এলে তা যাচাই করা হবে। তবে সরাসরি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অভিযোগের বিষয়ে নূরুল আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।


			