দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস গতকাল সোমবার বড় দরপতন হয়েছে। এ নিয়ে টানা সপ্তম দিনের মতো অধিকাংশ সিকিউরিটিজে দরপতন হলো। এই ৭ কার্যদিবসের দরপতনে এক্সচেঞ্জটির প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২৬১ পয়েন্টের বেশি। এর মধ্যে গতকালও ৩৯ পয়েন্ট কমেছে। অন্য দুই সূচকেও এদিন পতন হয়েছে। এক্সচেঞ্জটির লেনদেনেও গতি কমেছে। গতকাল ১৩ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে।
বাজার বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানত তিনটি কারণে দেশের পুঁজিবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এর মধ্যে প্রধান কারণ হলো- আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন হবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা। এছাড়া, সম্প্রতি গেজেট আকারে প্রকাশিত মার্জিন ঋণ বিধিমালা প্রক্রিয়া জটিল হওয়া এবং পাঁচ ব্যাংক একীভূত হলে বিনিয়োগকারী শেয়ার শূন্য হবে কিনা, সে বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা না পাওয়া।
এ বিষয়ে মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশেকুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘নির্বাচনী অনিশ্চয়তার একটি প্রভাব পুঁজিবাজারে দেখা যাচ্ছে। অতীতে হওয়া জাতীয় নির্বাচনের আগেও এমন প্রভাব দেখা গেছে। এর সঙ্গে মার্জিন বিধিমালার গেজেট নিয়েও অনেক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। যদিও মার্জিন ঋণের বিষয়গুলো অনেক আগে থেকেই বাজারে জানান দেওয়া হয়েছে। এটি নেতিবাচক প্রভাব এখন পুঁজিবাজারে আসার কথা নয়। তবে আতঙ্কিত একশ্রেণির বিনিয়োগকারী এটি নিয়েও গুঞ্জন ছড়াচ্ছে, যা বাজার পতনের অন্যতম কারণ হিসেবে নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে।’
তবে সা¤প্রতিক পতনে মার্জিন ঋণের প্রভাব নেই বলে মনে করেন পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘মার্জিন ঋণ বিধিমালায় পুরানোদের জন্য ছয় মাস সময় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। নতুন যারা মার্জিন ঋণ নিবে তাদের জন্য কিছু শর্তারোপ করা হয়েছে। যেহেতু পুরোনোদের সমন্বয় করে বেরিয়ে যাওয়া সময় দেওয়া হবে, সেহেতু এটির কোনো প্রভাব থাকার কথা না। মূলত বাজারের পতনে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার বিষয়টি বেশি নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় না থাকার কারণে, বাজারে নতুন করে বিনিয়োগও আসছে না, আর বাজারও তার নিজস্ব গতি ফিরে পাচ্ছে না।’
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডিএসইতে গতকাল মোট ৩৮৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৭০টির। বিপরীতে কমেছে ২৭৫টির। এই দরপতন দরবৃদ্ধির চেয়ে ৩ দশমিক ৯৩ গুণ। এদিন লেনদেন শেষে ৪১টি সিকিউরিটিজের দর অপরিবর্তিত রয়েছে। দরপতন হওয়া সিকিউরিটিজগুলোর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির ১৪৪টি, ‘বি’ ক্যাটাগরির ৫২টি এবং ‘জেড’ ক্যাটাগরির ৭৯টি শেয়ার ও ইউনিট রয়েছে।
অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দর কমায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৯ পয়েন্টে বা প্রায় ১ শতাংশ কমে ৪ হাজার ৮৬১ পয়েন্টে নেমেছে। গত ৩০ অক্টোবরের পর থেকে এই সূচকটি টানা পয়েন্ট হারাচ্ছে। ওইদিন সূচকটির অবস্থান ছিল ৫ হাজার ১২২ পয়েন্টে। অর্থাৎ মাত্র ৭ কার্যদিবসে সূচকটি কমেছে ২৬১ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট। গত রোববার লেনদেন শেষে সূচকটির অবস্থান ছিলো ৪ হাজার ৯০০ পয়েন্টে।
অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস দিনের ব্যবধানে ১২ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৬ শতাংশ কমে ১ হাজার ১১ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। রোববার সূচকটির অবস্থান ছিল ১ হাজার ২৩ পয়েন্টে। আর ডিএসইর বাছাই করা ৩০ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের চেয়ে ১৯ পয়েন্ট বা প্রায় ১ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯১০ পয়েন্টে নেমেছে। রোববার এই সূচকটির অবস্থান ছিল ১ হাজার ৯২৯ পয়েন্টে।
ডিএসইতে গতকাল আগের কার্যদিবসের চেয়ে লেনদেন কমেছে ৪৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এদিন মোট ৩৫৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেন ১৩ কার্যদিবস বা গত ২২ অক্টোবরের পর সর্বনি¤œ, ওইদিন ৩৫৫ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছিল। রোববার এক্সচেঞ্জটিতে ৪০২ কোটি ২০ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছিল।
দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) গতকাল অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দরপতন হয়েছে। এতে এক্সচেঞ্জটির সবগুলো মূল্যসূচক পয়েন্ট হারিয়েছে। পাশাপাশি এদিন সিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। সিএসইতে মোট ১৭৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭টির দর বেড়েছে এবং কমেছে ১২৭টির। আর ৯টির দর দিন শেষে অপরিবর্তিত ছিল।
অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দরপতন হওয়ায় সিএসইর সার্বিক সূচক সিএসপিআই গতকাল ১৪০ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ৭৪৩ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। আর সিএসসিএক্স সূচকটি ৭৫ পয়েন্ট কমে ৮ হাজার ৫০৫ পয়েন্টে নেমেছে। এছাড়া, সিএসই ৫০ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৬০ পয়েন্টে, সিএসই ৩০ সূচক ৭৫ পয়েন্ট কমে ১২ হাজার ৩২৭ পয়েন্টে এবং সিএসআই সূচক ৮ পয়েন্ট কমে ৮৬২ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে সার্বিক লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা। রোববার সিএসইতে ২২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছিল।
নির্বাচনী অনিশ্চয়তা ও সা¤প্রতিক সময়ের ব্যাংক মার্জ হওয়ার বিষয়গুলো বাজারে নেতিবাচক প্রভাব রাখছে বলে মনে করেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম।
তিনি বাংলাদেশের খরবকে বলেন, ‘নির্বাচনী অনিশ্চয়তা বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি পাঁচ ব্যাংক মার্জ হলে বিনিয়োগকারীরা কিছু পাবেন কিনা, বিষয়টি এখনো পরিস্কার না হওয়ায়, এটি সার্বিকভাবে বাজারে নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এর পাশাপাশি মার্জিন ঋণ নিয়ে এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীর বাজারে অস্থিরতা ছড়াচ্ছে, তবে এটি হওয়া উচিত না। মার্জিন ঋণের বিষয়টি অনেক আগেই স্পষ্ট করা হয়েছে।’
বিকেপি/এমবি

