Logo

অর্থনীতি

বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়ছে বিদেশি কোম্পানির

Icon

এম এম হাসান

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৭

বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়ছে বিদেশি কোম্পানির
  • বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়ছে বিদেশি কোম্পানির 
  • দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে বড় অঙ্কের অর্থ
  • ব্যয় বৃদ্ধির চাপে মুনাফায় ভাটা
  • উচ্চ মূল্যস্ফীতি ক্রয়ক্ষমতাকে দমন করছে
  • ডলার সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যবসায় ক্ষতির শঙ্কা 

বাংলাদেশের বাজারে বিদেশি (বহুজাতিক) কোম্পানিগুলো ব্যবসায়িকভাবে আরও বেশি শক্তিশালী হচ্ছে। যেখানে দেশের অধিকাংশ কোম্পানি ব্যবসায় হোঁচট খাচ্ছে, সেখানে বিদেশি কোম্পানিগুলোর প্রবৃদ্ধি আসছে। বিশেষ করে এ দেশে ব্যবসা করে বিদেশি বড় কোম্পানিগুলোর পরিধিও বাড়ছে। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে কোম্পানিগুলোকে তাদের মুনাফার বড় অংশ নিজ দেশে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। এমনকি লোকসান করা কোম্পানিও বিনিয়োগের অর্থ সরিয়ে নিচ্ছে। ফলে ওইসব বিদেশি কোম্পানির হাত ধরে বড় অঙ্কের অর্থ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।

দেশে বর্তমানে ২ শতাধিক বিদেশি কোম্পানি ব্যবসা করছে। এরমধ্যে পুঁজিবাজারে বড় মূলধনী ১৩টি কোম্পানির তালিকাভুক্তি রয়েছে। ওই কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সব কোম্পানির ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময়ে সম্মিলিতভাবে ১৩ কোম্পানির ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ শতাংশের বেশি। শুধু ওই ৩ মাসই নয়, আগের দুই পূর্ণ অর্থবছরেও কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত। যদিও দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। তার মধ্যেও বিদেশি কোম্পানিগুলো ভালো ব্যবসা করেছে, এটি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক দিক। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরলে এবং মূল্যস্ফীতি কমে এলে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতাও বাড়বে, এতে কোম্পানিগুলোর ব্যবসার পরিধিও আরও বাড়বে। শুধু দেশীয় কোম্পানিগুলোও তখন ভালো ব্যবসা করতে সক্ষম হবে।

সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ইডিজি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আলী ইমাম বলেন, 'কোম্পানিগুলো সম্মিলিতভাবে তাদের ব্যবসায় যে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে, এটি মূলত গত বছরের বিক্রি কম থাকার প্রভাব। প্রকৃতপক্ষে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি। তাই বিক্রি বাড়ারও কোনো কারণ নেই। তা ছাড়া বর্ধিত কাঁচামালের ব্যয়, উচ্চ পরিচালন ব্যয় এবং ক্রমবর্ধমান সুদের হার কোম্পানিগুলোর মুনাফা প্রবৃদ্ধিতেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমলে কোম্পানিগুলোর ব্যবসাও বাড়বে এবং ব্যয় বহন শেষে মুনাফায়ও প্রবৃদ্ধি আসবে।' 

তিন মাসে কোম্পানিগুলোর ব্যবসা দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলো হলো- গ্রামীণফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি), রবি আজিয়াটা, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, বার্জার পেইন্টস, ম্যারিকো, সিঙ্গার বাংলাদেশ, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, আরএকে সিরামিকস, রেকিট বেনকিজার, বাটা শু, লিন্ডে বাংলাদেশ এবং ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেড। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে এই ১৩ কোম্পানির সম্মিলিত আয় ১৯১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন বা ১৯ হাজার

১৯৬ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ১৭৭ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন বা ১৭ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে সম্মিলিতভাবে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আয় বেড়েছে ১৪ দশমিক ৪৭বিলিয়ন বা ১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ।

একক কোম্পানি হিসেবে ৩ মাসে সর্বোচ্চ আয় হয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর, যার পরিমাণ ৯৪ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানির আয় হয়েছিল ৮৫ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। এই হিসেবে আলোচিত ৩ মাসে এককভাবে কোম্পানির আয় বেড়েছে ১১ শতাংশ। তবে প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় আলোচিত ৩ মাসের ব্যবসায় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে আরএকে সিরামিকসের। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে কোম্পানির আয় হয়েছে ২ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন বা ২০৬ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে সময়ে হয়েছিল ১ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন বা ১৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে কোম্পানির ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৪ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ারে, যার হার ২৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে দশমিক ৮০ বিলিয়ন টাকা ব্যবসা করা কোম্পানিটি এবার ১ বিলিয়ন টাকা ব্যবসা করেছে।

ব্যবসায় তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হওয়া ম্যারিকো বাংলাদেশের আয় আলোচিত তিন মাসে ২৩ শতাংশ বেড়ে ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া বাটা শু'র আয় ১৯ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন, সিঙ্গার বাংলাদেশের আয় ১৫ শতাংশ বেড়ে ৪ দশমিক ১২ বিলিয়ন এবং রেকিট বেনকিজারের আয় ১০ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন টাকা হয়েছে। তবে লিন্ডে বাংলাদেশ, বার্জার পেইন্টস, লাফার্জহোলসিম, গ্রামীণফোন এবং রবি আজিয়াটার ব্যবসায় ১ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।

ব্যয় বৃদ্ধির চাপে মুনাফায় ভাটা

চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ব্যবসায় বড় প্রবৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন ধরনের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে কোম্পানিগুলো ভালো মুনাফা করতে পারেনি। আলোচিত সময়ে ১৩ কোম্পানির সম্মিলিতভাবে নিট মুনাফা হয়েছে ২১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ২১ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ আলোচিত ৩ মাসে কোম্পানিগুলোর নিট মুনাফা কমেছে ৬ কোটি টাকা বা দশমিক ২৭ শতাংশ।

এই ১৩ কোম্পানির মধ্যে আলোচিত তিন মাসে ১১টির মুনাফা এবং ২টির লোকসান হয়েছে। ব্যবসা বাড়ার সুবাদে মুনাফা করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৯টির নিট মুনাফায় সামান্য প্রবৃদ্ধিও হয়েছে। তবে গ্রামীণফোন ও বিএটিবিসির ব্যবসা বাড়া সত্ত্বেও মুনাফা কমেছে। আর লোকসান করা দুই কোম্পানিতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় নিট লোকসান বেড়েছে।

তিন মাসে প্রায় ৯৫ বিলিয়ন বা সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যবসা করা কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বিভিন্ন খরচ বহন শেষে মাত্র ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন বা ৩০৫ কোটি

টাকা নিট মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে। আলোচিত তিন মাসে আগের বছরের একই সময়ের ৩ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন বা ৩৯৭ কোটি টাকার তুলনায় কোম্পানির নিট মুনাফা কমেছে শূন্য দশমিক ৯২ বিলিয়ন বা ৯২ কোটি টাকা। বহুজাতিক এই বড় মূলধনী কোম্পানিটির মুনাফা কমার মূল কারণ ছিল ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তামাক জাতীয় পণ্যে সরকারের বর্ধিত করারোপ। আলোচিত তিন মাসের প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা আয়ের মধ্যে কোম্পানির ভ্যাট, শুল্ক ও কর বাবদ ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি সরকারকে দিতে হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি ভ্যাট, শুল্ক ও কর বাবদ ৬ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব তহবিলে দিয়েছিল। অর্থাৎ আলোচিত তিন মাসে রাজস্ব হিসেবে সরকারকে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা বেশি দিতে হয়েছে, যা কোম্পানির মুনাফা কমার ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।

আলোচিত তিন মাসে গ্রামীণফোন নিট মুনাফা করেছে ১২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন টাকা, আগের বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন টাকা। এ ছাড়া রবির মুনাফা শূন্য দশমিক ৫৪ বিলিয়ন বেড়ে ২ দশমিক ৪২ বিলিয়ন টাকা, লাফার্জহোলসিমের মুনাফা শূন্য দশমিক ৩২ বিলিয়ন বেড়ে ১ দশমিক ২০ বিলিয়ন টাকা এবং ম্যারিকো বাংলাদেশে মুনাফা শূন্য দশমিক ৭০ বিলিয়ন বেড়ে ১ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন টাকা হয়েছে। এর বাইরে বার্জার, রেকিট বেনকিজার, ইউনিলিভার এবং লিন্ডে বাংলাদেশের মুনাফা সামান্য বেড়ে যথাক্রমে-শূন্য দশমিক ৬০ বিলিয়ন, শূন্য দশমিক ২৫ বিলিয়ন, শূন্য দশমিক ২৫ বিলিয়ন এবং শূন্য দশমিক ১০ বিলিয়ন টাকা হয়েছে।

আলোচিত তিন মাসে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ও আরএকে সিরামিক লোকসান থেকে মুনাফায় ফিরেছে। তবে সিঙ্গার বাংলাদেশ ও বাটা শু'র লোকসান বেড়েছে। সিঙ্গারের নিট লোকসান হয়েছে শূন্য দশমিক ৪৮ বিলিয়ন এবং বাটা শু'র লোকসান শূন্য দশমিক ১৪ বিলিয়ন টাকা। বাটা শু'র লোকসানের কারণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আলোচিত সময়ে কোম্পানিটি বিকল্প আয় খাতে লোকসান হয়েছে পাঁচ কোটি টাকার বেশি, পরিচালন ব্যয় বেড়েছে আরও পাঁচ কোটি টাকার মতো এবং জমাকৃত অর্থের বিপরীতে সুদ আয় কমেছে। এতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ লোকসান বেড়েছে কোম্পানির। 

কোম্পানি ও বিশ্লেষকরা যা বলছে

লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইকবাল চৌধুরী বলেন, 'অনেক কোম্পানি টিকে থাকতে, প্রণোদনা দিয়ে তাদের পণ্যের বিক্রি বাড়িয়েছে। এতে ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি এলেও মুনাফা কমেছে।'

সিমেন্ট শিল্পের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, 'এই খাতে চাহিদার চেয়ে উচ্চ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। বিপরীতের সরকারি প্রকল্পগুলোর কাজ এক বছরের বেশি সময় ধরে ধীর গতিতে চলছে। এতে বাধ্য হয়েই এই খাতের ব্যবসায়ীরা বিক্রয় প্রচারণা বাবদ বেশি ব্যয় করার পাশাপাশি প্রণোদনা দিয়ে বিক্রি বাড়িয়েছে। ফলস্বরূপে, কোম্পানিগুলোর মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।'

ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শহীদুল ইসলাম বলেন, 'দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কিছু লক্ষণ দেখা গেছে। কোম্পানিগুলোর বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়া অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত।' তবে মূল্যস্ফীতি বড় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এই বিশ্লেষক বলেন, 'বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ২০২২ সালের পর থেকে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ব্যবসায় তেমন প্রবৃদ্ধি পাচ্ছে না। এ বছর ব্যবসা ভালো করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে ভয়ের বিষয় হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতাকে দমন করে রেখেছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে, বছর শেষে কোম্পানিগুলোর প্রবৃদ্ধি নাও থাকতে পারে। আর ডলার সংকটে কাঁচামাল আমদানিতে বিঘ্ন হওয়া এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্তও হতে পারে।'

মূল্যস্ফীতি কম থাকলে কোম্পানিগুলোর ব্যবসা বাড়তো বলে মত দিয়েছেন ইডিজি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আলী ইমামও। তিনি মনে করেন, 'বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা মূল্যস্ফীতির কারণে খুবই সামান্য ছিল। দেশে ওই তিন মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের উপরে ছিল। যদি মূল্যস্ফীতি কম থাকত, আর মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ভালো থাকত, তাহলে কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় আরও বেশি প্রবৃদ্ধি আসতে পারত।' নিজ দেশে অর্থ সরিয়ে নিচ্ছে কোম্পানিগুলো

তালিকাভুক্ত ওই ১৩ বহুজাতিক কোম্পানির মধ্যে ৯টিই গত অর্থবছরে অর্জিত নিট মুনাফার চেয়ে বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিগুলো হলো-গ্রামীণফোন, ম্যারিকো, লাফার্জহোলসিম, রবি, রেকিট বেনকিজার, সিঙ্গার, লিন্ডে বাংলাদেশ, আরএকে সিরামিকস এবং ইউনিলিভার। এর মধ্যে সিঙ্গার ও আরএকে সিরামিস লোকসান করেও বড় অঙ্কের অর্থ লভ্যাংশ হিসেবে কোম্পানি থেকে সরিয়ে নিয়েছে।

গত অর্থবছরে ওই ৯ কোম্পানি সম্মিলিতভাবে নিট মুনাফা করেছে ৮১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। কিন্তু লভ্যাংশ হিসেবে নিয়েছে ৯৭ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিগুলো থেকে মুনাফার চেয়ে ১৬ দশমিক ২৬ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা বেশি নিয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, মুনাফার চেয়েও বেশি লভ্যাংশ নেওয়ার মানে হলো বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এই অর্থ তাদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে। এটি বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ কমিয়ে দেওয়ার লক্ষণ। তবে কেউ কেউ বলছে, ডলার-সংকটের কারণে বিগত বছরগুলোতে কোম্পানিগুলো তাদের দেশে লভ্যাংশ নিতে পারেনি, সর্বশেষ বছরগুলোতে তাই বেশি হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করে নিজ দেশে অর্থ নিয়ে যাচ্ছে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, 'ডলার-সংকটের কারণে বিদেশি কোম্পানিগুলো আগের বছরগুলোতে লভ্যাংশ নিয়ে যেতে পারেনি। এখন সংকট কিছুটা কাটায় সেই অর্থ একসঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে তারা। তাছাড়া, ৩-৪ বছরে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। তাই অনেকেই ভাবছে, ভবিষ্যতে আরও অবমূল্যায়ন হলে তাদের লভ্যাংশের প্রকৃত মূল্য কমে যেতে পারে। সেই বিবেচনায় হয়তো তারা বেশি হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করে নিজ দেশে অর্থ নিয়ে যাচ্ছে।'

বিকেপি/এমবি 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর