ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষে আজ রোববার (১৫ জুন) থেকে খুলছে দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ডেঙ্গু ও করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে চরম উদ্বেগে রয়েছেন অভিভাবকরা।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, আজ থেকে প্রথম ধাপে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হবে। পরবর্তী ধাপে আগামী ২২ জুন খুলবে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর মাদ্রাসাগুলোর ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় সেগুলো খুলবে ২৬ জুন।

ছুটি শেষে ক্লাস শুরু হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। বিশেষ করে ডেঙ্গুর প্রকোপ ও করোনার পুনরাবৃত্ত সংক্রমণে অভিভাবকরা সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের এক শিক্ষার্থীর মা রাজিয়া ইসলাম বলেন, বাসে করে মেয়ে কলেজে যায়। এখন চারপাশে ডেঙ্গুর যে অবস্থা, রাস্তায় পানি জমে থাকলে আতঙ্ক লাগে। কলেজে ক্লাস শুরু হলেও ও কতটা নিরাপদ থাকবে, সেটা নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছি।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, স্কুল বন্ধ থাকার সময়টাতে কতটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হয়েছে, তা আমরা জানি না। হুট করে ক্লাস চালু করায় ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি জুনের প্রথম ১৩ দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার দুইশ ২৫ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। এর আগের মাসে (মে) আক্রান্ত ছিলেন এক হাজার সাতশ ৭৩ জন। একইসঙ্গে করোনার সংক্রমণও বাড়ছে। জুনের প্রথম ১০ দিনেই ৫৪ জন আক্রান্ত ও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। যেখানে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫৮ জন।

এই বাস্তবতায় অনেকেই মনে করছেন, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিয়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, কলেজ খুলছে মাত্র ১৫ দিনের ছুটি শেষে, অন্য প্রতিষ্ঠান ২০ দিন পর। অথচ অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু বা করোনার ঝুঁকি মোকাবেলায় তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দিয়েছে। পাঁচটি নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, জনসমাগমস্থলে মাস্ক পরা, ৩ ফুট সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, চোখ-মুখে হাত না দেওয়া এবং হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখা।

মাউশির মহাপরিচালক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান জানান, করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। মাঠ ও শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার রাখা এবং মশার লার্ভা ধ্বংসে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সার্বিক পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হয়েছে এবং প্রয়োজন হলে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১ জুন থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হয়। ছুটির মেয়াদ শিক্ষা স্তরভেদে ভিন্ন হলেও মাদ্রাসাগুলোর ছুটি ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ—২৫ দিন। কলেজগুলোতে ছিল মাত্র ১০ দিনের ছুটি।

• ডিআর/এটিআর