স্বাস্থ্য শিক্ষায় অবকাঠামো ও শিক্ষক সংকট প্রকট
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:২৮

- অবকাঠামো ছাড়াই মেডিকেল কলেজ অনুমোদন
- অর্ধেকের বেশি শিক্ষক পদ শূন্য
- পদোন্নতির গেঁড়াকলে সিনিয়র শিক্ষকরা
দেশের স্বাস্থ্য শিক্ষার সংকট যেন কাটছেই না। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলো ধুঁকছে অবকাঠামো ও শিক্ষক সংকটে। বিশেষ করে গত এক দশকে বিভিন্ন সময়ে স্থাপিত রাঙামাটি, নওগাঁ, নেত্রকোনা, নীলফামারী, মাগুরা, হবিগঞ্জ, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজগুলোর বেহাল দশা।
বেশিরভাগ মেডিকেল কলেজের নেই নিজস্ব ভবন, আবাসন ব্যবস্থা, ল্যাব ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। স্বাস্থ্য শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাতে-কলমে শিক্ষার ঘাটতি নিয়ে শুধু বই পড়েই চিকিৎসক হয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। নিজস্ব ক্যাম্পাস ও কিছু ক্ষেত্রে আবাসনসুবিধা না থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যেও হতাশা তৈরি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের মানসম্মত চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
দেশে মোট মেডিকেল কলেজ ১১০টি। এর মধ্যে সরকারি মেডিকেল কলেজ আছে ৩৭টি। যার মধ্যে নিজস্ব ভবন ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ছাড়া চলছে বেশ কয়েকটি সরকারি মেডিকেল কলেজ। অথচ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিজস্ব ভবন, কলেজের আয়তন, শিক্ষার্থীর অনুপাতে শিক্ষক, ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি—এসব বিষয়ে কড়াকড়ি শর্ত আরোপ করা হয়। তবে সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার কোনো নীতিমালা বা শর্ত নেই। সরকারে থাকা ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের ইচ্ছায় এসব মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
অন্যদিকে সব সরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষক সংকট দীর্ঘ দিনের। দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজের অর্ধেকের বেশি পদ শূন্য পড়ে আছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত আছেন ২ হাজার ৫৪৪ জন শিক্ষক। অথচ পদ আছে ৫ হাজার ২৪১টি। শূন্য পড়ে আছে ২ হাজার ৬৯৭টি পদ, যা মোটের ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে অধ্যাপক পদে শূন্য ৫৮৮টি, সহযোগী অধ্যাপক ৭৯০টি এবং সহকারী অধ্যাপক ১ হাজার ৩১৯টি।
ক্লিনিক্যাল ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ১ হাজার ৭০৩টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৯৪৫ জন। শূন্য আছে ৭৫৮টি। বেসিক সাবজেক্টের ক্ষেত্রেও একই সংকট। ২ হাজার ১৫৫টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১ হাজার ৬২৪ জন, শূন্য রয়েছে ৫৩১টি। ফলে প্রয়োজনীয় ক্লাস পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মেডিকেল কলেজের একজন সহকারী অধ্যাপক বলেন, ‘মেডিকেল কলেজে শিক্ষক সংকটের প্রধান কারণ পদোন্নতি ও নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতা। এতে অনেক শিক্ষক পেশার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। আমাদের এখানে মেডিকেল কলেজের অনুমোদন হচ্ছে কিন্তু কিভাবে পাঠদান করা হবে, সেসব বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই।’
স্বাস্থ্য শিক্ষায় অবকাঠামো সংকট ও শিক্ষক সংকট নিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হোসেন বলেন, ‘বিগত সময়ে বেশকিছু মেডিকেল কলেজ অনুমোদন করা হয়েছে যেখানে অবকাঠামোগত কোনো পরিকল্পনা ছিল না। আমরা চেষ্টা করছি অবকাঠামোগত ও মানসম্পন্ন করে মেডিকেল কলেজগুলোর কার্যক্রম চালিয়ে নিতে।’
শিক্ষক সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সংকট নিরসনে পদোন্নতি ও পদায়নের প্রক্রিয়া চলছে। একই সঙ্গে বেসিক সাবজেক্টে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়াতে প্রণোদনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আশা করি আমরা শিক্ষক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব।’
এসআইবি/এমএইচএস