
আয়েশা সিদ্দিকা, সহকারী শিক্ষক, আমলীতলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনাতলা, বগুড়া।
প্রিয় শিক্ষার্থী, আশা করি সবাই সুস্থ আছ। ২০২২ সালের পরে এই বছর ২০২৫ সালে তোমাদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তোমাদের মধ্যে যারা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে, তারা নিশ্চয় প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছ। তোমাদের প্রস্তুতিকে সহায়তা করার জন্যে, তোমাদের স্বপ্নকে পূরণ করার জন্য তোমাদের প্রস্তুতির সাথে, আমার প্রচেষ্টা একত্রিত করলে তোমরা সফল হবে। তোমাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পারে। তোমরা জানো তোমাদের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা হবে ৫টি বিষয়ের উপর, মোট নম্বর থাকবে ৪০০। বাংলা ১০০ নম্বর, ইংরেজি ১০০ নম্বর, গণিত ১০০ নম্বর, প্রাথমিক বিজ্ঞান এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় (৫০+৫০)=১০০ নম্বর। পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ডিসেম্বর ২১, ২২,২৩, ২৪ তারিখ।
শারীরিক প্রস্তুতি: সামনেই তোমাদের বৃত্তি পরীক্ষা। এই সময়ে খুব খেয়াল রাখতে হবে, যেন কোন কারণে অসুস্থ না হয়ে যাও। এই অময়ে বাহিরে অস্বাস্থ্যকর জ্যাঙ্ক ফুড পরিহার করতে হবে। সঠিক সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং সঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠতে হবে। সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। শরীর সুস্থ থাকলে, দেহ ও মন ভালো থাকবে। পড়া-লেখা করতে ভালো লাগবে। কারণ আমরা সকলেই জানি, ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।’
পাঠ্য বিষয়ে ধারাবাহিক বিষয় ভিত্তিক প্রস্তুতিঃ বাংলা- এই বিষয়ে পরীক্ষার পূর্ণমান: ১০০, সময় থাকবে ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট। বাংলা বিষয়ের প্রশ্নের প্রথমেই থাকবে কবি ও কবিতার নাম সহ ৮ লাইন পঙক্তি। তোমাদের পাঠ্য বই এর প্রত্যেকটি কবিতা” সুন্দরভাবে আয়ত্ত করতে হবে। এখানে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, কবিতার ৮ পঙক্তিটি যেন, কবি সেভাবে লিখেছেন সেভাবেই লিখতে হবে। কবিতা বা কবির নাম এর নিচে কোন দাগ দেওয়া যাবে না। বিরামচিহ্ন সঠিক ভাবে দিতে হবে। এরপরে শব্দার্থ শূন্যস্থান পূরণ করণ, বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর লিখন থাকবে। এইসব প্রশ্নের প্রস্তুতির জন্য পাঠ্য বইয়ের অনুশীলনীর শব্দের অর্থ এবং পাঠ্যবই আয়ত্ত করতে হবে। পাঠ্য বই এর প্রতিটি গল্প ও কবিতা পড়লে তোমরা সহজেই উত্তর দিতে সক্ষম হবে। বাক্য রচনা করার জন্য মুখস্থ করার প্রয়োজন নেই। শব্দের অর্থ জানতে পারলেই, বাক্য তৈরি করতে পারবে। এছাড়াও বাংলা বিষয়ের গল্প বা কবিতার মূলভাব পরীক্ষায় আসে। এই ক্ষেত্রে আমাদের একটি ভুল ধারণা আছে যে, আমরা শুধুমাত্র কবিতার মূলভাব পড়ি। মূলভাব, কবিতা এবং গল্পের দুটো বিষয়ের থাকতে পারে। এই কারণে গল্পের মূলভাব পরতে হবে। বিরাম চিহ্ন, পদ প্রকরণ, ক্রিয়ার কাল, প্রশ্ন তৈরী বিষয়গুলো ব্যকরণের নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। রচনা লেখার জন্য আমাদের পাঠ্য বই এর গল্পগুলো ভালো করে পড়তে হবে। এইক্ষেত্রে রচনা লেখার সময়, পয়েন্ট দিয়ে লিখলে ভালো হয়। অবশ অবশ্যই রচনার নাম, যেন সঠিক ভাবে পরীক্ষার খাতায় লিখতে হবে। যেমন, যদি পরীক্ষায় আসে “তোমার বিদ্যালয়” নিয়ে রচনা লেখ। তাহলে তোমাদেরকে পরীক্ষার খাতায় লিখতে হবে “আমার বিদ্যালয়’। রচনায় ভূমিকা, বর্ণনা এবং উপসংহার পয়েন্টগুলো থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
গণিত: গণিত বিষয়ে চর্চার কোন বিকল্প নেই। Practice makes a man perfect.
সুতরাং বাড়িতে নিয়মিত চর্চা করতে হবে। গণিত বিষয়ে শিক্ষার্থীরা অবচেয়ে বেশী ভুল করে দশমিক ভগ্নাংশ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। সুতরাং দশমিক ভগ্নাংশ চর্চা করতে হবে। এছাড়া প্রথমিক গণিত বই এর (১-২০) পৃষ্ঠার মধ্যে ১টি সমস্যার সমাধান করতে হবে যার নম্বর থাকবে ৮। এ ছাড়া ৫ অধ্যায় থেকে ১টি, ৬ এবং ৭ অধ্যায় থেকে ১টি, ৮ অধ্যায় থেকে ১টি, ১০ অধ্যায় জ্যামিতি থেকে ১টি, দুইটি অধ্যায় পরিমাপ ও সময় অধ্যায় থেকে ১টি, উপাও বিন্যস্ত করণ ও জনসংখ্যা অধ্যায় থেকে ১টি করে সমস্যামূলক প্রশ্ন থাকবে। এই প্রশ্ন গুলোর সমাধান করতে হবে। গড় ৮৯ থেকে ৯৩ পৃষ্ঠার মাঝে ১টি সমস্যা এবং শতকরা ৯৪ থেকে ৯৯ পৃষ্ঠার মধ্যে ১টি সমস্যার সমাধান করতে হবে। লক্ষ্য কর অধ্যায় ৫, ৬, ১০ থেকে ১টি করে মোট ৩ টি সমস্যার সমাধান করতে হবে। সুতরাং এই তিনটি অধ্যায় ভালো ভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ মিনিট করে গণিত বিষয়ে সময় দিতে হবে। গণিত বিষয়ে পরীক্ষা দেবার সময় পরীক্ষার খাতার শেষ পৃষ্ঠায় রাফ করতে হবে। এবং খাতা জমা দেবার পূর্বে ঐ পৃষ্ঠাটি এক টানে কেটে দিতে হবে।
বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় : এই বিষয়ে ৫০ পূর্ণ নাম্বার হলো ৫০
বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে প্রথম ৩ অধ্যায় এবং শেষে ২ অধ্যায় এর তারিখ, সাল খুব ভালো ভাবে পড়তে হবে। পড়ার সুবিধার জন্য ছক আকারে পড়বে, তাহলে মনে থাকবে। এই পাঁচটি অধ্যায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই পাঁচটি অধ্যায় ভালোভাবে আয়ত্ত করার পরে অনান্য সকল অধ্যায় পড়তে হবে। বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বই এর শেষে শব্দভান্ডার এবং নমুনা প্রশ্ন আছে, সেগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের কোন বিকল্প প্রশ্ন থাকবে না। অর্থাৎ বহু নির্বাচনী প্রশ্ন ৫টি, শূন্যস্থান ৫টি, এগুলোর সবগুলো লিখতে হবে।
প্রথমিক বিজ্ঞান: মহাবিশ্ব এবং জীবনের জন্য তথ্য এই দুটো অধ্যায় ভালোভাবে আরও করার পরে, অনান্য সকল অধ্যায় পড়তে হবে। অধ্যায় শেষে অনুশীলনী প্রশ্ন আরও করতে হবে। শব্দকোষ ভালোভাবে পড়তে হবে। হেয়ালী করে শব্দকোষ বাদ দেয়া যাবে না। মূল পাঠ্য বই কয়েক বার ভালোভাবে রিডিং পড়তে হবে।
ইংরেজি: প্রিয় শিক্ষার্থীরা, ইংরেজি আমাদের মাতৃভাষা নয়। তোমরা যদি মূল পাঠ্য বইটি বুঝে পড়তে পার আশা রাখি সফল হবে। পাঠ্য বই থেকে সরাসরি প্রশ্ন হবে। Punctuation Mark, এগুলোর ক্ষেত্রে Grammar WH Questions, Re-arrange, নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। Letter এর ক্ষেত্রে যদি কৌশল অবলম্বন করে পড়ো, তাহলে সহজেই যে কোন Letter লিখতে পারবে। Paragraph টি চর্চা করতে হরে। বারবার চর্চা করলে আশা করি, যে কোন বিষয়ে লিখতে পারবে। পরীক্ষায় যদি অজানা Paragraph আসে, সেই সময় হাত গুটিয়ে বসে না থেকে, যেটুকু পারো সেটুকু লেখার চেষ্টা করবে মনে রাখবে, না লেখার চাইতে, কিছু লেখার চেষ্টা করা অনেক ভালো।
পরীক্ষার ১০ দিন পূর্বে প্রস্তুতি: এই সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম পাঁচদিনে পাঁচটি বই পুনরায় রিভিশন দিবে। পরবর্তী তিন দিনে পুণরায় বইগুলো পড়ার চেষ্টা করবে। শেষের দুই দিনে, যে পরীক্ষাটি প্রথম দিনে হবে, সে বিষয়টি পড়বে।
পরীক্ষার আগের দিন প্রস্তুতি: পরীক্ষার আগের দিন প্রবেশপত্র, কলম, পেনসিল স্কেল সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতে হবে। ভয় পাওয়া যাবে না। ভয়কে জয় করতে হবে। আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে হবে। সৃষ্টিকর্তার নিকট সাহায্য চাইতে হবে তাহলে মন শান্ত থাকবে। আগের দিন রাতে বেশী রাতে ঘুমানো যাবে না। রাত ১০ টার মধ্যে ঘুমাতে যেতে হবে।
পরীক্ষার দিনে করণীয়: কেন্দ্রে কমপক্ষে ৪৫ মিনিট পূর্বে পৌঁছাতে হবে। সঙ্গে অবশ্যই প্রবেশপত্র, কলম, স্কেল, পেনসিল, অর্থাৎ পরীক্ষা সংক্রান্ত যাব যাবতীয় বিষয়গুলো সঙ্গে নিতে হবে। পানির বোতল সাথে রাখতে পারো।
পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে করণীয়:
১) পরীক্ষার খাতায়, সঠিকভাবে নাম, রোল, উপজেলা, জেলা এর নাম উল্লেখ করতে হবে।
২) প্রশ্নপত্রটি ভালোভাবে পড়তে হবে।
৩) যে প্রশ্নটি সহজ মনে হয় যে প্রশ্ন প্রথমে লিখতে হবে।
৪) পরীক্ষার খাতায় যেন পরিদর্শকের স্বাক্ষর থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৫) খাতাতে মার্জিন টানতে হবে।
৬) কালো কালির কলম ছাড়া অন্য কলম ব্যবহার না করায় উত্তম।
৭) একটি প্রশ্নের উত্তর থেকে অন্য প্রশ্নের উত্তরের মাঝে কিছু ফাঁকা জায়গা রাখতে হবে। রিভিশন করতে হবে।
৮) প্রশ্নের নম্বর, খাতায় লেখা প্রশ্নের নাম্বার সঠিক আছে কিনা, যাচাই করতে হবে।
৯) সময় সমন্ধে সচেতন থাকতে হবে।
১০) কেন্দ্র ত্যাগের পূর্বে প্রবেশপত্র সংরক্ষণ করতে হবে।
১১) খাতা পরিষ্কার রাখতে হবে। কথায় আছে, আগে দর্শনধারী পরে গুণ বিচারী।
১২) কোন কারণে পরীক্ষা নিজের পছন্দ অনুযায়ী না হলে ভেঙ্গে না পরে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য পরতে হবে। জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখো, তুমিই পারবে, তুমিই সেরা। মনে রাখবে ‘যদি লক্ষ্য থাকে অটুট জয় হবেই হবে’। নিজের দৈনিক রুটিন নিজেই তৈরি করে সে অনুযায়ী মেনে চললে অবশ্যই সফল হবে। তোমাদের পরীক্ষা ভালো হোক। সকলের, মনের আশা পূরণ হোক। সকলের প্রতি অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
লেখক : আয়েশা সিদ্দিকা, সহকারী শিক্ষক, আমলীতলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনাতলা, বগুড়া। [প্রাথমিকে জাতীয় পর্যায়ে সেরা গুণী শিক্ষক ২০২৫ এর মনোনয়ন প্রাপ্ত]
বিকেপি/এমবি