Logo

শিক্ষা

দেওবন্দের প্রতিচ্ছবি বারিধারা মাদরাসা

Icon

তরিকুল ইসলাম মুক্তার

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:৩৮

দেওবন্দের প্রতিচ্ছবি বারিধারা মাদরাসা

শিক্ষা বা জ্ঞানের বিশুদ্ধতম উৎস হচ্ছে আল কোরআন ও হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই ভ‚মিতে পাঠিয়েছেন মানব জাতির উস্তায ও শিক্ষকরূপে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নবী-রাসুলগণ ধন-সম্পদের মিরাছ বা উত্তরাধিকার রেখে যান না বরং তাঁরা মিরাছ রেখে যান ইলমের। যিনি এ মিরাছ লাভ করেছেন তিনি অনেক বড় সম্পদের অধিকারী হয়েছেন। আর উলামায়ে কেরাম হচ্ছেন সেই ইলমের উত্তরাধিকারী। কেননা হাদিসে বর্ণিত আছে, উলামায়ে কেরামগণ হলেন নবীর ওয়ারিশ।

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের সময় সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, ‘‘আমি তোমাদের নিকট দুটি জিনিস রেখে গেলাম, যত দিন পর্যন্ত তোমরা সেই দুটি জিনিসকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরবে, তত দিন পর্যন্ত তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহ তায়ালার  কোরআন ও আমার সুন্নত।’’

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী, তেমনি কোরআনে কারিম হচ্ছে সর্বশেষ কিতাব। আর বিশ্ব নবী রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন সর্বশ্রষ্ঠ ও সর্বশেষ উসওয়ায়ে হাসানা বা উত্তম আদর্শ। 

সাহাবায়ে কেরাম রা. হতে এই ইলমী ও আমলী আমানত ধারাবাহিকভাবে গ্রহণ করেছিলেন তাদের সঠিক উত্তরসূরী তাবেঈন  তাবে তাবেঈন, মুজতাহিদ সালফে সালেহীন ফুকাহাগণ। পৃথিবীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বয়ে চলেছে দ্বীনের এই অমিয়ধারা। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা রাজধানীর বারিধারা গুলশান এলাকায় গড়ে উঠে জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসা। উপমহাদেশের কওমি মাদরাসা নামে প্রচলিত দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দারুল উলুম দেওবন্দের চিন্তাধারা ও কারিকুলামের অনুকরণ অনুসরণে প্রতিষ্ঠিত। 

জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসাও সেই দারুল উলুম দেওবন্দেরই অনুসারী একটি আদর্শিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

দারুল উলুম দেওবন্দ তথা আকাবিরের চিন্তা-চেতনা ও মন- মানসিকতার আলোকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যোগ্য উত্তরসূরী এবং দেশ ও জাতির সার্বিক  নেতৃত্ব প্রদানে উপযোগী প্রতিনিধি সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশের জাতীয় পর্যায়ের একটি বৃহত্তর প্রতিষ্ঠানের রূপরেখাকে সামনে রেখে আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী (রহ.) ২৭ শাবান ১৪০৮ হি. মোতাবেক ১৫ এপ্রিল ১৯৮৮, রোজ শুক্রবার।

জামিয়া মাদানিয়ার বুনিয়াদ রাখেন। তারপর ২৩ শাওয়াল ১৪০৮ হি. মোতাবেক ৯ জুন রোজ বৃহস্পতিবার ইফতেতাহ বুখারির মাধ্যমে শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম শুরু করা হয়। আল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবানিতে তখন থেকেই সুযোগ্য আসাতিযায়ে কেরামের দ্বারা ইবতেদায়ি থেকে মাদরাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ শ্রেণি দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত শিক্ষাকার্যক্রম চলছে।

পরবর্তীতে  ৫/৪/২০০৩ ইং তারিখে ১৮৬০ সালে সোসাইটিজ বাংলাদেশ কর্তৃক নিবন্ধিত মাদানী সোসাইটি বাংলাদেশের অধীনে প্রতিষ্ঠানটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাক্তন সচিব মরহুম মো. ইরশাদুল হকের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ও প্রতিষ্ঠাতা মোহতামিম আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী রহ. এর পরিচালনায়  এক শক্তিশালী নির্বাহী পরিষদের মাধ্যমে অত্যন্ত সততা ও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হয়ে আসছে।

আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী (রহ.)-এর ওফাতের পর আল্লামা নাজমুল হাসান কাসেমী (হাফি.) জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসার মোহতামিম নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী (হাফি.) মোহতামিমের দায়িত্বে আসেন। আল্লামা কাসেমী (রহ.) এর সুযোগ্য পুত্র  মুফতি জাবের কাসেমী (হাফি.) মঈনে মুহতামিম হিসাবে নির্বাচিত হন।

জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসার সাবেক নায়েবে নাযিমে তালীমাত মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী সাহেব বলেন, আল্লমা নূর হুসাইন কাসেমী রহ. যখন বারিধারা মাদ্রাসার বুনিয়াদ করেন তখন মাদরাসার অবকাঠামো ছিল শুধু একটা ভাঙা টিনসেড ঘর। একটি ঘরেই থাকতেন আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী( রহ.)সহ সকল ছাত্র উস্তাদ। মাঝেমধ্যে এমন অবস্থা হতো যখন বৃষ্টি আসত তখন ঘরের টিনের পাতা উড়িয়ে নিয়ে যেত। এমন নাজুক পরিস্থিতিতেও বন্ধ হয়ে যায়নি শিক্ষাকার্যক্রম। কষ্টের পর সাফল্য আসবেই। বর্তমান বারিধারার অবকাঠামো হলো দুইটা পাঁচ তলাবিশিষ্ট ভবন। একটি তিন তলাবিশিষ্ট ও  মসজিদ, একতলা নির্মাধীন রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বারিধারা মাদরাসায় ছাত্রদের সংখ্যা এখন প্রায় দুই হাজারের মতো, উস্তাদের সংখ্যা ৪৭ জন। এখানে গরীব- অসহায় ছাত্রদের জন্য সুযোগ সুবিধা রয়েছে। স্বল্প  খরচেই লেখাপড়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি অন্যান্য দিক গুলোকেও শিক্ষা দেওয়া হয়।

তালিম, তরবিয়ত,তাসাউফ, তাজকিয়ায়ে নফস, ইসলামি সিয়াসত, দাওয়াত ও তাবলীগ। 

আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী (রহ.) কে বলা হতো ছাত্র গড়ার কারিগর। সেই সুবাদে জামিয়ার সূচনালগ্ন হতে অদ্যাবদি বেফাকুক মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় ১ম স্থান অধিকারসহ সকল বিভাগেই কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে সুনামের সঙ্গে এ ধারাকে অব্যাহত রেখেছেন। এভাবে জামিয়া মাদানিয়া অতি অল্প সময়ের মধ্যেই দেশবাসী ও ইসলামি শিক্ষানুরাগীদের সুদৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছেন।

আল্লাহ তাআলা উক্ত প্রতিষ্ঠানকে কবুল করুন এবং প্রতিষ্ঠাতা মোহতামিমকে জান্নাত নসিব দান করুন। আমিন 

লেখক : সাবেক শিক্ষার্থী, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, গুলশান, ঢাকা

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

মাদরাসা শিক্ষা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর