
বর্তমান প্রেক্ষাপটের দিকে যদি তাকাই তবে দেখতে পাই একটি হতাশাগ্রস্ত সমাজ। যেখানে প্রকটভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে মাদকাসক্তি, মারামারি, হত্যা, ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্রবণতা। আর আমরা শিক্ষক ও অভিভাবকেরা এর দায়ভার থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারি না। কারণ আজকের এই সমাজ আমাদের হাত দিয়ে নির্মিত।
আমরা আমাদের সন্তানদের একটা অসম প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দিচ্ছি। তাদের এটাই শেখাচ্ছি, জীবনে বড় কিছু হতে না পারলে, খ্যাতি অর্জন করতে না পারলে জীবন ব্যর্থ। আমরা লেখাপড়ার ক্ষেত্রে এত বেশি জোড় দিচ্ছি যে অন্যদিকে তাদের যে নৈতিকতা মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে সেদিকে লক্ষ্য করছি না। আমাদের সন্তানদের উপরের দিকে ঠেলে দিচ্ছি কিন্তু পড়ে গেলে কীভাবে নিজেকে ধরে রাখতে হবে সেই শিক্ষা দিচ্ছি না।
একটি সুস্থ সুন্দর সমাজ গড়তে হলে এখনই নিতে হবে বেশ কিছু পদক্ষেপ। যার মাধ্যমে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।
আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতে অভিভাবকের করণীয় :
১) শিশুর বেড়ে ওঠার সময় মা বাবা ও ঘনিষ্ঠ স্বজনের সান্নিধ্যের কোনো বিকল্প নেই এতে শিশু ভালোবাসতে শেখে। সম্পর্কের মূল্য দিতে জানে।
২) শিশুর মধ্যে যে গুণগুলো আছে তা তাকে বারবার বলতে হবে। এতে শিশু আত্মবিশ্বাসী হয়।
৩) শিশুকে সময় ও তার প্রতি মনোযোগী হতে হবে।
৪) শিশুর সামনে কোন ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করা যাবে না।
৫) ভালো রেজাল্টের পিছনে না ঘুরে মানুষ হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামাতে হবে।
৬) শিশুকে সৃজনশীল কাজে যুক্ত রাখতে হবে।
৭) নিজের কাজ নিজে করার ব্যাপারে উৎসাহ দিতে হবে।
৮) শিশুর সামনে সমালোচনা করা যাবে না।
৯) এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিশুকে শুদ্ধাচারে শিক্ষা দিতে হবে। এতে শিশু সততা, শৃঙ্খলা, শ্রদ্ধা, দায়িত্ববোধ এই গুণগুলো দিয়ে প্রতিক্ষেত্রে আলো ছড়াবে।
শিক্ষকের করণীয় :
ঊষর মরুর ধূসর বুকে
একটি যদি শহর গড়ো
একটি মানুষ মানুষ করা
তার চাইতে অনেক বড়।
ওমর খৈয়ামের এই কবিতার মতোই আমরা শিক্ষকরা মানুষ গড়ার মহান পেশায় নিয়োজিত মানুষ গড়া মানে শুধুমাত্র লেখাপড়ার মাধ্যমে বিদ্বান করা না। পাশাপাশি তাকে মানবিক গুণসম্পন্ন ইতিবাচক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।
একমাত্র শিক্ষকরাই পারে ভবিষ্যৎকে স্পর্শ করতে তাই শিশুর জীবন ও ভবিষ্যতের ভিত্তি করতে শিক্ষকের ভূমিকা হল :
১) শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা, মূল্যবোধ এবং জ্ঞান অর্জনের ভিত্তি রচনা করা।
২) শিশুর সহজাত সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে মানবিক মূল্যবোধ ও মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
৩)শিক্ষার্থীর মনে বড় হওয়ার স্বপ্ন বুনে দেওয়াটাই একজন শিক্ষকের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
৪) একজন শিক্ষক তার বুদ্ধিদীপ্ত অনুপ্রেরণা দিয়ে শিক্ষার্থীর মেধাবী সত্তাকে বের করে আনতে পারে।
৫) শিক্ষার্থীদের ওপর কিছু চাপিয়ে না দিয়ে তাদেরকে কৌতূহলী করে গড়ে তোলা।
৬) একজন শিক্ষককে অবশ্য শিক্ষার্থীর চারপাশে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
৭) যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক শিখন পদ্ধতি ও মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে পাঠদান করতে হবে।
৮) শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করতে হবে।
৯) অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখাতে হবে।
যুগে যুগে অভিভাবক শিক্ষকরাই এমন মানুষ নির্মাণ করেছেন, যারা জাতিকে, দেশকে, সমাজকে এবং সভ্যতাকে প্রভাবিত করেছেন। আমরা সকলে মিলে যদি শিশুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে শিশুর বেড়ে ওঠা পর্যন্ত তাকে ইতিবাচক পরিবেশ ও নৈতিকতার শিক্ষা দিতে পারি তবেই আমরা সফল হবো এবং শান্তিপূর্ণ ও সকলের জন্য বাসযোগ্য সমাজ তৈরি করতে পারব।
লেখক : সহকারী শিক্ষক, শাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙামাটি।
জাতীয় পর্যায়ে গুণী শিক্ষক-২০২৫।
বিকেপি/এনএ