Logo

শিক্ষা

যুগ চাহিদায় অনন্য নূরানী শিক্ষাপদ্ধতি

Icon

রাশেদ বিন শফিক

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৪০

যুগ চাহিদায় অনন্য নূরানী শিক্ষাপদ্ধতি

'নূরানী' শব্দের সাথে এখন আমরা সবাই পরিচিত। এক বাক্যে অকপটে এই কথা স্বীকার করতে আমাদের কারো আপত্তি থাকার কথা না।

শিক্ষিত সমাজ, হোক মাদরাসা বা জেনারেল লাইনের। সাধারণ মানুষ, শহর বন্দর বা অজপাড়াগাঁয়ের যেকোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ। আজ নূরানীর সাথে পরিচিত, এই শিক্ষা পদ্ধতির পরিধি এবং জনপ্রিয়তা এখন এতটাই বিস্তৃত। কওমি মাদরাসার প্রাথমিক স্তরে নূরানী বিভাগের কার্যক্রম চালু রয়েছে। যদিও দরসে নেজামির সিলেবাসে পূর্বে বিভাগ হিসেবে এটা চালু ছিল না। ষাটের দশকের শুরুতে বিখ্যাত শিক্ষাবিদ, শায়খুল কুরআন মাওলানা বেলায়াত হোসাইন রহ. সহজ উপায়ে কুরআন শিক্ষার উপর দীর্ঘ দিন গবেষণা করে এই প্রদ্ধতি আবিষ্কার করেন। হযরত হাফেজ্জি হুজুর রহ.-এর প্রতিষ্ঠিত কামরাঙ্গীরচরের জামিয়া নূরিয়া মাদরাসায় প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে নূরানী পদ্ধতিতে পাঠদানের সূচনা হয়। হাফেজ্জি হুজুর রহ.-এর বিশেষ সহযোগিতায় কারী বেলায়ত হোসাইন রহ. এর অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় ১৯৮১ সালে ঢাকার বিশিষ্ট একজন শিক্ষানুরাগীর সহায়তায় নিজস্ব জয়গায় নূরানী পদ্ধতির প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গঠন করা হয় নূরানী তালিমুল কোরআন বোর্ড। এই বোর্ড পরিচালনার মাধ্যমে সুবিন্যস্ত এই নূরানী পদ্ধতি ধীওে ধীরে ব্যাপকতা লাভ করে। হিফয বিভাগ ও কিতাব বিভাগের পাশাপাশি কওমিতে প্রারম্ভ হয় নূরানী বিভাগ নামে স্বতন্ত্র একটি বিভাগ। বর্তমানে আঞ্চলিক কিছু নূরানী শিক্ষা বোর্ড রয়েছে।

প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত নূরানী পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত। প্রথমে কেবল সহজভাবে কুরআন শিক্ষা এবং জরুরি প্রাক-প্রাথমিক মাসায়েল এই শিক্ষা ক্যারিকুলামের অন্তর্ভুক্ত থাকলেও অল্প দিনের মধ্যেই ঢেলে সাজানো হয় যুগান্তকারী একটা সিলেবাসে। একটা কোমলপ্রাণ শিশু ইসলামও জাগতিক জ্ঞান সমানভাবে শিখতে পারে। এতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণজ্ঞান; ইত্যাদির যুগ চাহিদার চমৎকার সমন্বয় রয়েছে। নূরানী বিভাগের শিক্ষকদের

আলাদা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই বিভাগে শিক্ষকতার সনদ লাভ করতে হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাসিক দ্বিমাসিক শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।

এসব প্রশিক্ষণে নির্ধারিত সিলেবাস পাঠদানের নিয়মকানুনের পাশাপাশি কোমলমতি শিশুদের প্রতি আন্তরিক বন্ধন ও মমত্ববোধ গড়ে তোলার পদ্ধতি শেখানো হয়। যার ফলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের যত্নশীল আচরণের কারণে শিশুদের মাদরাসায় আসা ও পড়ার প্রতি বিশেষ আকর্ষণ জন্মায়। ক্লাসে থাকে উৎসবের আমেজ, শিশু মনে ভালোলাগাও আনন্দ উদ্বেলিত করে। নূরানী বিভাগের প্রতিটি শিশুর প্রতি আলাদাভাবে শ্রম ও সময় ব্যয় করার কারণে ক্লাসে বসেই তাদের অনেকেরই হোমওয়ার্ক সম্পন্ন হয়ে যায়। সেজন্য বাড়িতে তেমন চাপ থাকে না।

নূরানী বিভাগে শেখার পাশাপাশি লেখার প্রতি বিশেষ তাগাদা লক্ষ করা যায়। নূরানী শ্রেণিতে পড়ার সময়েই শিক্ষার্থীদের হাতের লেখা পরিচ্ছন্ন এবং আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। সুন্দর হাতের লেখার জন্য নূরানী শিক্ষার্থীদের সুখ্যাতি রয়েছে। নূরানী বিভাগ শেষ করে দেশে প্রচলিত ইংলিশ মিডিয়াম বাংলা মিডিয়াম বা যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারে। আজকাল অনেক অভিভাবকদের দেখা যায়, দেশের নামকরা প্রাথমিক বা মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির পূর্বে নূরানী মাদরাসায় পড়িয়ে তাদের শিশুকে প্রস্তুত করেন। নূরানী পদ্ধতির একাডেমি ক্যালেন্ডার জানুয়ারি হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত হওয়ায় জেনারেল অঙ্গনের মানুষের মাঝে এর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আলাদাভাবে শুধুমাত্র নূরানী বিভাগ পর্যন্ত মাদরাসা দেশের মফস্বল এলাকা থেকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত। নূরানী বিভাগের সাথে কওমির ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকায় শিশুদের কোমল মনে আদর্শিক চিন্ত-চেতনায় ঈমানের রওশন জ্বলজ্বল করে।

লেখক : কবি, গীতিকার, প্রাবন্ধিক রাজনগর, মৌলভীবাজার

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

মাদরাসা শিক্ষা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর