Logo

শিক্ষা

শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবনা

শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার

Icon

লাবীব আব্দুল্লাহ

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৫২

শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার

একটি মাদরাসা উন্নত ও কার্যকর করতে হলে তিনটি বিষয়ে সর্বপ্রথম নজর দিতে হবে- শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং শিক্ষাব্যবস্থা।

এক. শিক্ষার্থী নির্বাচন ও পথনির্দেশ

কওমি মাদরাসায় মেধাবী ও কম মেধাবী, ধনী ও গরিব সবার জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত। এটি নিঃসন্দেহে একটি মানবিক এবং সহমর্মিতাপূর্ণ দিক। তবে সবাই আলেম হবে- এটা জরুরি নয়। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ পরিমাণ দ্বীনি শিক্ষা গ্রহণ আবশ্যক, কিন্তু উচ্চতর ইসলামী শিক্ষার জন্য যোগ্যতাই হওয়া উচিত মূল বিবেচ্য বিষয়।

বর্তমানে অনেকেই মূল জ্ঞান না রপ্ত করেই দাওরায়ে হাদিস পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছেন, যা সময়, পরিশ্রম ও সম্পদের অপচয়। যেসব শিক্ষার্থী আরবি বুঝতে অক্ষম, কিতাব পড়তে বা ইবারত ধরতে পারেন না, তাদের জন্য কর্মমুখী শিক্ষা ও ধর্মীয় মৌলিক জ্ঞানের ব্যবস্থাই অধিক উপযোগী। মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই প্রকৃত আলেম তৈরি হওয়া উচিত- যারা দ্বীনকে পণ্য বানাবে না, দ্বীনের মর্যাদা রক্ষা করবে এবং ক্ষমতাবানদের কাছে সত্যের উচ্চারণে আপস করবে না।

দুই. শিক্ষকের যোগ্যতা ও দায়িত্ব

একজন আলেম গড়ার পেছনে ওস্তাদের ভূমিকা অপরিসীম। আজকের দিনে কিছু শিক্ষক শিক্ষাকতা ছেড়ে হজ কাফেলা ব্যবসা, মহিলা মাদ্রাসার নামে অনৈতিক তৎপরতা বা জমির দালালিতে লিপ্ত হচ্ছেন- এটা উদ্বেগজনক।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, পূর্ববর্তী ওস্তাদরা ছাত্রদের প্রতি নিবেদিত ছিলেন, তাদের খাদ্য, চিকিৎসা, এমনকি আবাসনের দায়িত্বও নিজ হাতে পালন করতেন। আজকের শিক্ষকদেরও সেই ত্যাগ, আন্তরিকতা ও দায়বদ্ধতা দরকার। একজন আলেমকে দ্বীনের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। পাগড়ি, জুব্বা, দাড়ি- এসব বাহ্যিক রূপ নয়, বরং চারিত্রিক উৎকর্ষই তাকে আলেম হিসেবে পরিচিত করাবে। কেউ শুধুমাত্র পোশাকধারী হলেই আলেম নয়- এটি সমাজকে বুঝতে হৰোংলাদেশেবিদ্যার

তিন. পাঠ্যক্রম ও শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার

আমাদের মাদরাসার সিলেবাস আজও প্রাচীনকালের মতোই রয়ে গেছে। যুগের চাহিদা উপলব্ধি কওে এই পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনা জরুরি। আরবি ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিজ্ঞান, গণিত, ইতিহাস, অর্থনীতি ইত্যাদি প্রয়োজনীয় আধুনিক বিষয় সংযুক্ত করা দরকার। একটি আদর্শ মাদরাসা শুধু কিতাবনির্ভর নয়, বরং সময়োপযোগী এবং প্রয়োগযোগ্য শিক্ষায় সমৃদ্ধ হওয়া উচিত। আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা, এবং মানসিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও ছাত্রদের পাশে থাকা উচিত।

বিভ্রান্তিকর আলেম চিহ্নিতকরণ ও সচেতনতা

আজকের সমাজে অনেকেই বাহ্যিক পোশাক ও টাইটেল দিয়ে নিজেদের আলেম পরিচয় দেয়। কিন্তু প্রকৃত আলেম কখনো প্রতারণা করে না, ভন্ডামি কিংবা একাধিক বিয়ের নামে ধোঁকাবাজি করে না। সমাজের উচিত এমন ছদ্মবেশী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা এবং এদের ব্যাপারে সচেতন হওয়া। একজন প্রকৃত আলেম আত্মনিয়ন্ত্রণে বিশ্বাসী, চরিত্রবান, উদার এবং ইসলামকে ভালোবাসেন হৃদয় দিয়ে। আমাদের উচিত এমন মুত্তাকি আলেমদের সম্মান জানানো এবং অনুসরণ করা।

আমরা আশা করি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষাব্যবস্থার এই তিনটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক ও সময়োপযোগী পরিবর্তন আসবে। এলম আল্লাহর নিয়ামত। আমাদের প্রিয় নবী (সা.), সাহাবায়ে কেরাম এবং পূর্ববর্তী মনীষীরা যেভাবে এই ইলম বিতরণ করেছেন, আমরাও যেন তা যথাযথভাবে গ্রহণ ও প্রচার করি। সমাজ যেন বুঝতে পারে- আলেম হওয়া মানে শুধু পোশাক নয়, বরং একটি মহান দায়িত্ব। ইনশাআল্লাহ, আমাদের সচেতনতা ও চেষ্টার মাধ্যমেই সত্যিকার অর্থে মাদরাসাগুলোর উন্নয়ন ও সমাজে আলেমদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে।

সময় ও যুগের চাহিদা অনুযায়ী দ্বীনি ইলেমের সঙ্গে পার্থিব ও বৈষিক জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয় সমন্বয় করলে দ্বীনি শিক্ষা আরো গতিশীল হবে এবং ইলমি দিনের ধারক বাহকরা পৃথিবীকে আরো অধিক উপকার করতে পারবেন।

মানকুলাত ও মাকুলাতের সমন্বয়ে অতীতে ছিল। সিলেবাস থেকে গ্রিক অপ্রয়োজনে অংশ বাদ দিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয় অংশ মাদরাসা শিক্ষায় সংযোজন হতে পারে।

লেখক: শিক্ষাবিদ, গবেষক, লেখক ও পরিচালক, ইবনে খালদুন ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

মাদরাসা শিক্ষা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর