অবমূল্যায়নে থেমে আছে প্রাথমিক শিক্ষার গতি
আসাদুজ্জামান খান মুকুল
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:২৯
মানুষ গড়ার কারিগররাই আজ হতাশায় : প্রাথমিক শিক্ষা আমাদের জাতির ভবিষ্যতের মূল চাবিকাঠি। একটি শিশু যখন প্রথম বিদ্যালয়ে পা রাখে,তখন থেকে তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানার্জনের কাজটি শুরু হয়। এই সময়টাতেই শেখানো হয়- কীভাবে চিন্তা করতে হয়, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে হয়,কীভাবে সমস্যা সমাধান করতে হয়। এই মহান দায়িত্বটি যিনি পালন করেন, তিনি হলেন আমাদের প্রাথমিক শিক্ষক। কিন্তু আজকের বাস্তবতা হলো, এই মানুষ গড়ার কারিগররাই চরম হতাশা আর বঞ্চনার অন্ধকারে ডুবে আছেন।
সরকার প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়াতে আন্তরিক। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াতে নিয়মিত চলছে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। তৈরি হচ্ছে ঝকঝকে নতুন অট্টালিকা ও আধুনিক শ্রেণিকক্ষ। কিন্তু শুধু অবকাঠামো আর প্রশিক্ষণে হাজার কোটি টাকা ঢাললেই কি শিক্ষার মান বাড়ে? যদি শিক্ষকের মন ভালো না থাকে, যদি তাঁর মনে থাকে গভীর ক্ষোভ আর অস্থিরতা, তবে সেই প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান শ্রেণিকক্ষে কতটা ফলপ্রসূ হবে? যদি নিম্নোক্ত সমস্যায় শিক্ষকরা ভোগেন :
একই ডিপার্টমেন্ট, দুই গ্রেডের বৈষম্য : প্রাথমিক শিক্ষকদের বঞ্চনার সবচেয়ে কদর্য দিকটি হলো- একই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দৃশ্যমান বৈষম্য। একদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা, যাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক ডিগ্রি এবং তাঁরা জাতীয় কারিকুলাম অনুসরণ করে পড়ান, তাঁরা বেতন পান ১৩তম গ্রেডে। এই গ্রেডটি সাধারণত এসএসসি বা এইচএসসি পাস তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা পান। অন্যদিকে, একই অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা, তাঁরাও কিন্তু একই যোগ্যতা সম্পন্ন এবং হুবহু একই কারিকুলাম পড়ান। কিন্তু তাঁরা পাচ্ছেন দশম গ্রেডে বেতন!
শিক্ষকদের দাবি, ক্লাসের মুক্তি : এই চরম বঞ্চনা ও বৈষম্য থেকে মুক্তির জন্য প্রাথমিক শিক্ষকেরা আবার মাঠে নামতে বাধ্য হচ্ছেন। সামনেই ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হচ্ছে বার্ষিক পরীক্ষা। এর মধ্যেই শিক্ষক সমাজের প্রধান দাবিগুলো সরকারের কানে পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি:
১)দশম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ: শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা নিশ্চিত করতে এটি প্রথম ধাপ।
২) ১০০% বিভাগীয় পদোন্নতি: দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা কাটিয়ে শিক্ষকদের কর্মজীবনের গতি ফিরিয়ে আনা।
৩) বকেয়া টাইমস্কেল প্রদান:
১০ ও ১৬ বছরের প্রাপ্য সুবিধা অবিলম্বে কার্যকর করা। সরকারের উচিত প্রশিক্ষণে হাজার কোটি টাকা খরচের পাশাপাশি শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবিগুলিকে দ্রুত মেনে নেওয়া।
লেখক : শিক্ষক, কবি ও প্রাবন্ধিক

