Logo

শিক্ষা

কওমি মাদরাসা : নবীজির প্রতিষ্ঠিত দ্বীনি প্রতিষ্ঠান

Icon

রাশেদ বিন শফিক

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৭

কওমি মাদরাসা : নবীজির প্রতিষ্ঠিত দ্বীনি প্রতিষ্ঠান

ইসলামের সূচনা যুগ। মক্কার অলিগলিতে রাসূল সা. কালিমার বাণী নিয়ে ঘুরছেন। দ্বীনের দাওয়াত চলছিল খুব সতর্কতার সহিত। কিন্তু অভাগা মুশরিকের দল সেই অমীয় বাণীতে কর্ণ দিত না। দ্বারে দ্বারে পৌঁছতেন দয়ালু রাসুল। শুনাতেন রবের মহিমা। তাওহীদের বাণীতে ছিল মায়ার সঞ্চার। এতো দরদ মাখা আবেগী বার্তাও মক্কার কঠিন দিলের বদনসিবদের মনে দাগ কাটেনি। কেউ এড়িয়ে যেত। কেউ কেউ করতো তিরস্কার আর অপমান। রবের শোকরিয়াতে তবুও মুহাম্মাদ চিরবহমান।

সফল সৌভাগ্যবান হৃদয়বান কিছু মানুষ ঠিকই অনুভব করতে পেরেছিল মহানবীর মহা বাণী। গ্রহণ করার খুশ নসিব হয় দৌলতে ঈমান। দিন দিন  বাড়ছে তাওহীদ কালেমার দাওয়াত। কিছু সংখ্যক মানুষ ইতোমধ্যে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। বিচ্ছিন্ন এলাকার অল্প কয়েকজন মানুষ মহামহিম রবের একত্ববাদের বিশ্বাস হৃদয়ে অঙ্কুরিত করেছেন। রাসুল তাদের কাছে অতি প্রিয় হয়ে ওঠেছেন। এই মানুষগুলো জীবনের প্রতিটি পলকও পদে আল্লাহর  আদেশ এবং রাসুলের আনুগত্যের উপর নির্ভরশীল। যারা ঈমান এনেছেন তাদের ইসলামের প্রতি আগ্রহ প্রবল, জানার তাগিদ ভীষণ।

মক্কার বুকে একত্ববাদী  কওম

রহমতের নবী, সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, বড়ই আশাবাদী তাঁর অনুসারীদের নিয়ে। আপন কওম (গোত্রের) লোকেরা তাঁকে তাড়িয়ে দিলেও, তাওহীদে বিশ্বাসী ঈমানের অনুরাগী ক্ষুদ্র একটি কওম তিনি পেয়েছেন মক্কার বুকে। এই কওম হচ্ছে এক আল¬াহর  বিশ্বাসী। তারা ভিন্ন গোত্রের হলেও তাদের একত্ববাদের বিশ্বাস এবং রাসুল পাকের প্রতি নিখাঁদ ভালোবাসায় ঈমানের সেতু বন্ধনে একত্রিত করেছে। অবিশ্বাসী কাফেরদের থেকে বিশ্বাসী মুসলিম কওম হিসেবে তাঁরা আলাদা হয়েছে।

দ্বীন শিক্ষার তাড়না

ঈমানের দ্বীপে দীপ্তমান ছোট্ট জনপদ। দীর্ঘদিনের লালিত ধর্ম ছেড়ে নতুন একটি ধর্মে যাদের আসা। এক আল্লাহর বিশ্বাস বুকে যারা আশ্রয় পেতেছে কালেমায়। জাহেলি আঁধার ছিঁড়ে যারা আসলো আলো অন্বেষণে, তাদের মনে এই আলোকিত দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে জানার তাড়না প্রবল। ঈমান হাসিলের পর দেখা দিলো দ্বীনের প্রাথমিক জ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা। ধর্মে দীক্ষিত হতে যা ছিল অপরিহার্য।  

রাসুলের প্রতিষ্ঠিত প্রথম  মাদ্রাসা

রাসুল সা. তাঁর এই মুসলিম কওমকে ইসলাম সম্পর্কে পরিপূর্ণ শিক্ষা-দিক্ষা দেওয়ার জন্য একটি নিরাপদ স্থান খুঁজছিলেন। যেহেতু তখনো আল্লাহর ইবাদত গোপনে পালন করতে হতো।

সাফা পাহাড়ের পাদদেশে লোকচক্ষুর আড়াল প্রান্তে ছিল রাসুল সা. এর সাহাবী আরকাম ইবনে আবুল আরকাম রা. এর বাড়ি। সেখান নির্বার মনের আকুলতা নিয়ে সাহাবীরা আল্লাহর ইবাদত করতেন। লোকজন এই দিকে গেলেও সচরাচর ভেতরে কী হচ্ছে দেখা যেত না। নবী স. তাই দারুল আরকামে অর্থাৎ আরকাম রা. এর বাড়িতে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে দৈনিক কিছু সময় সাহাবায়ে কেরামদের ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষা দিতে লাগলেন। ইসলামের বিধিনিষেধ সম্পর্কে, ইবাদতের তরিকা ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান দিতেন নওমুসলিমদের। ইসলামের  ইতিহাসে এটি প্রথম মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত, অতি ক্ষুদ্র মুসলিম কওম নিয়ে গঠিত, রাসূল সা. এর প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত দারুল আরকাম মাদ্রাসা। 

মদিনায় একত্ববাদের দ্যোতি: নবীজি সা. এর দাওয়াতী কাজ চলমান। দিকে দিকে ইসলামের সুশীতল হাওয়া বইছে। হজ্বের মৌসুমে আরবের দূরদূরান্তের বিভিন্ন গোত্রের লোকেরা আসতো হজ্ব করতে, রাসূল সা. কালিমার দাওয়াত নিয়ে তাদের অনেকের কাছে যেতেন। একবার মদিনার আউস গোত্রের কিছু লোক হজ্ব করতে আসে, নবীজি কালেমার বার্তা নিয়ে সেই গ্রোত্রের লোকদের নিকট গেলে তাদের মধ্যে দু’জন লোক হুজুর সা.এর একত্ববাদের দাওয়াত গ্রহণ করেন, এক.  আস’য়াব ইবনে জুরারা অপরজন যাকওয়ান ইবনে আবদে কায়েস। তাদের ইসলাম গ্রহণের পরে ধীরে ধীরে মদীনার বেশ কিছু মানুষজন ইসলাম গ্রহণ করতে থাকেন। 

মদিনায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আবেদন : মক্কা ছাড়িয়ে ইসলামের রওশন তখন মদিনায় জ্বলজ্বল করছে। ইসলামের ছায়াতলে মানুষের আগমন বাড়ছে। দ্বীন ও ইসলাম সম্পের্ক জানার শেখার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। মদিনার নব ঈমানের নূরে উজ্জীবিত একদল সাহাবীরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট চারটি বিষয় উল্লেখ করে একজন লোক প্রেরণের দাবি সম্বলিত  একটি চিঠি প্রেরণ করেন। এতে উল্লেখিত বিষয়সমূহ।

এক.  আমাদের কাছে এমন একজন লোক প্রেরণ করুন যিনি আমাদের কোরআন শিক্ষা দিবেন।

দুই. যিনি ইসলামের দাওয়াত দিবেন।

তিন. প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে আমাদের ইসলামের বিধিবিধান শেখাবেন , দ্বীনের নানা বিষয়ের জ্ঞান শিক্ষা দিবেন।

চার. তিনি আমাদের নামাজের ইমামতি করবেন।

মদিনার সাহাবিদের চিঠি পাওয়া মাত্রই এই কাজগুলো সম্পাদানের জন্য,  রাসুল সা. মুসআব ইবনে উমায়ের রা. কে পাঠালেন।

মদিনায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা

মুসআব ইবনে উমায়ের রা. নবীজীর শেখানো তরিকা অনুযায়ী মদিনায় দ্বীনের দাওয়াত দিতে লাগলেন। তাওহীদের বাণী প্রচারও প্রসারে নিরলস ভাবে কাজ করে চলছেন। রাসূল সা. মক্কা থেকেই মদিনার আস’য়াব ইবনে জুরারা রা. এর বাড়িতেই তাদের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এই মাদ্রাসায় মদিনার মুসলমানগণ ইসলামের বিধিনিষেধ ও দ্বীনের যাবতীয় জ্ঞান শিক্ষা গ্রহণ করতেন। মুসআব ইবনে উমায়ের রা. ছিলেন এই মাদ্রাসার শিক্ষক, এটি ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় মাদ্রাসা।

ইসলামের ইতিহাসের প্রথম দুটি মাদ্রাসারই প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন দু’জাহানের আলোকবর্ষী রহমতি নবী, সাইয়্যুদুল মুরসালিন মোহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রতিষ্ঠান দুটিই তিনি মুসলিম জনপদের বিশেষ সহযোগিতায় এবং তাদের আন্তরিক সম্পৃক্ততায় গড়ে তুলেন। এই মাদরাসা দু’টির জন্মধারায় কালে কালে দেশে দেশে মসজিদ ভিত্তিক বা সাধারণ মুসলমানদের বিশেষ সহযোগিতার মাধ্যমে দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। আমাদের আশপাশে দ্বীনের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে একনিষ্ঠ ভাবে ইসলামের জ্ঞান বিতরণী যে কওমি মাদরাসাগুলো রয়েছে,  এই কওমি মাদরাসাসমূহ রাসূল সা. এর প্রতিষ্ঠিত ও পরবর্তী যুগে কওমের সম্পৃক্ততায় গড়ে ওঠা সেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠিত।

লেখক : কবি, গীতিকার, প্রবন্ধকার, রাজনগর, মৌলভীবাজার

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

মাদরাসা শিক্ষা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর