Logo

শিক্ষা

দাওরা সনদের মূল্যায়ন হোক যথাযথ

Icon

মুহাম্মদ হেদায়ত উল্লাহ

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৪

দাওরা সনদের মূল্যায়ন হোক যথাযথ

বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিস, যা বহু শতাব্দী ধরে ইসলামি জ্ঞানের সর্বোচ্চ পর্যায় হিসেবে সম্মানিত। দীর্ঘ সময়ের পাঠচর্চা, হাদিস শাস্ত্রের গভীর অধ্যয়ন, গবেষণামূলক অনুশীলন এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী এই স্তর সম্পন্ন করেন। ২০১৮ সালে এই সনদকে সরকারি স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি বিষয়ে মাস্টার্স সমমান ঘোষণার পর এটি জাতীয় পর্যায়ে নতুন মাত্রা লাভ করে। তবুও বাস্তব পরিস্থিতি হলো-এই সনদের প্রকৃত মূল্যায়ন এখনও পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

দাওরায় হাদিস উত্তীর্ণ আলেমরা কোরআন-হাদিস, আরবি ভাষা, ফিকহ, উসুল, যুক্তিবিদ্যা এবং ইসলামি জ্ঞানের বিস্তৃত পরিসরে দক্ষতা অর্জন করেন। তারা সমাজের নৈতিক দিকনির্দেশনা, মসজিদের ইমামতি, ফতোয়া, শিক্ষা ও ধর্মীয় পরামর্শদানে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয়-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে শিক্ষা, গবেষণা এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে, তাদের সনদের মূল্যায়ন এখনো কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। অনেক যোগ্য আলেম কর্মসংস্থানে সীমিত সুযোগের মুখোমুখি হন।

দাওরায়ে হাদিসের সনদের যথার্থ মূল্যায়ন মানে শুধু কাগজে-কলমে স্বীকৃতি নয়, বরং বাস্তবে সমান সুযোগ তৈরি করা। প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রদানের জন্য দাওরায়ে হাদিসধারী আলেমদের নিয়োগ- সময়ের দাবি। তারা ধর্মীয় জ্ঞান, মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষার ক্ষেত্রে স্বীকৃত ও দক্ষ। প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে ধর্মীয় শিক্ষকের সংকট বা মানসম্মত শিক্ষক ঘাটতি দূর করতে কওমি দাওরা পাস আলেমদের নিয়োগ দেওয়া হলে শিক্ষার পরিবেশ আরও সমৃদ্ধ হবে। এতে একদিকে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে, অন্যদিকে যোগ্য আলেমরা কর্মসংস্থানের ন্যায্য সুযোগ পাবেন।

দাওরায়ে হাদিসের সনদ শুধু একটি কাগুজে ডিগ্রি নয়, এটি একজন শিক্ষার্থীর বহু বছরের সাধনা, গবেষণা, আত্মনিবেদন ও জ্ঞানের ফসল। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার পর এখন সময় এসেছে শিক্ষানীতি, চাকরি কাঠামো এবং সামাজিক ক্ষেত্রে এই সনদের যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করার। 

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, নৈতিক মূল্যবোধ ও মানবিক উন্নয়নের স্বার্থে দাওরায়ে হাদিস সনদের পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন এবং প্রাথমিক থেকে কলেজ পর্যায় পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে তাদের নিয়োগ দেওয়া সময়ের অনিবার্য দাবি।

লেখক : প্রভাষক ইসলামিক স্টাডিজ, দশমিনা ইসলামিয়া কামিল এম এ মাদ্রাসা, পটুয়াখালী

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

মাদরাসা শিক্ষা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর