Logo

শিক্ষা

জামেয়া ও এতিমখানা শব্দের যথোপযুক্ত ব্যবহার চাই

Icon

ইমরান নাজির

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:১০

জামেয়া ও এতিমখানা শব্দের যথোপযুক্ত ব্যবহার চাই

ইসলামের সুমহান শিক্ষা প্রচারে এদেশে মাদরাসার ভূমিকা অপরিসীম। বলা চলে, এদেশে ইসলামি শিক্ষার সূতিকাগার হচ্ছে মাদরাসা। কিন্তু এতৎসত্ত্বেও মাদরাসার রয়েছে কয়েকটা নিয়মহীন কর্ম। যে কয়েকটা নিয়মহীন কর্ম রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম দুটি কর্ম হচ্ছে, যত্রতত্র যেকোনো মাদরাসার নামের শুরুতে জামেয়া এবং শেষে এতিমখানা শব্দের অপব্যবহার। মাদরাসার নামের শুরুতে এই শব্দ দুটো লেখা মনে হয় এখন আমাদের কাছে ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

মাদরাসায় চালু আছে কেবল নাজেরা আর হিফজ বিভাগ অথচ নামের শুরুতে লেখা জামেয়া! শব্দটার যথেচ্ছা ব্যবহার দেখে মনে হচ্ছে আমাদের জামেয়া শব্দের অর্থটাও জানা নেই।  ‘জামেয়া’ শব্দের অর্থ কী? জামেয়া কাকে বলে? মূল কথা বলার আগে এর সংজ্ঞাটা জেনে নিই। ‘জামেয়া’ এটি একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। তাহলে এবার প্রশ্ন হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় কী বা কাকে বলে? এর উত্তর হবে এই যে, জামেয়া বা বিশ্ববিদ্যালয় হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে উচ্চশিক্ষা প্রদান করাসহ বিভিন্ন ধরনের গবেষণামূলক কাজকর্ম করা হয়ে থাকে। (সূত্র: উইকিপিডিয়া) 

মাদরাসার দিক দিয়ে আমরা জামেয়া বা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পড়াশোনা এবং গবেষণা হয় এরকম হাতেগোনা কয়েকটা মাদরাসার উদাহরণ দিতে পারি। যেমন, হাটহাজারি মাদরাসা, পটিয়া মাদরাসা, জামেয়া রহমানিয়া মাদরাসা, ঢাকা লালবাগ মাদরাসা, চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফ মাদরাসা, ঢাকা তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা, ঢাকা আলিয়া মাদরাসা, দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসা ইত্যাদি। এসব মাদরাসার নামের শুরুতে জামেয়া শব্দের উল্লেখটা মানানসই। কারণ এসব মাদরাসাতে যথেষ্ট পরিমাণ পড়াশোনা এবং গবেষণা কার্য পরিচালনা করার মতো সুব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু যেসব মাদরাসা প্রাইভেট মাদরাসা, যেগুলোতে কেবল কয়েকটা জামাআত বা ক্লাস আছে। উচ্চতর কোনো গবেষণাকেন্দ্র তো দূরের কথা তাফসিরে জালালাইন এবং মিশকাত শরীফটা পর্যন্ত পড়ানো হয় না; সেসব মাদরাসার নামের শুরুতে কিভাবে ‘জামেয়া’ শব্দটা লিখা হয়? আমাদের গ্রামাঞ্চল এবং শহরাঞ্চলের সাধারণ মানুষরা এই ‘জামেয়া’ শব্দটার অর্থ জানে না শব্দটা আরবি বলে, না হয় আমরা তাদের কাছে আরও অনেক আগেই হাসির পাত্র হয়ে যেতাম এই শব্দটার অপব্যবহারের কারণে। 

দ্বিতীয় বিষয়টা হচ্ছে ‘এতিমখানা’। মাদরাসার ১০০/২০০ ছাত্রের মধ্যে এতিম ছাত্র আছে কতজন? হলে সর্বোচ্চ বিশ জন হবে। আমার মনে  হয় না যে, বিশজনও হবে। তার পরও যুক্তির খাতিরে ধরে নিলাম বিশজন। কিন্তু কথা হচ্ছে, এতিম কাকে বলে? এতিমখানা কী? আমরা মনে হয় এতিম আর এতিমখানার সংজ্ঞাটাও ভুলে গেছি! অপ্রাপ্ত বয়সে যাদের বাবা মারা যায় ওদেরকে এতিম বলা হয় এবং ওদেরকে যেখানে লালন-পালন করা হয় সেটাকে এতিমখানা বলা হয়। এটাই হলো এতিম এবং এতিমখানা শব্দের সঠিক সংজ্ঞা। মানুষতো চিরকালই আর অপ্রাপ্ত বয়স্ক থাকে না। অপ্রাপ্ত বয়স্ক থাকার সময়সীমা কত? ১৪/১৫ বছর। কিন্তু আমরা করছি কী? কয়েকজন এতিম ছাত্রদের জন্য এই পুরো দ্বীনি মাদরাসাটাকেই আজীবনের জন্য এতিমখানা বানিয়ে ফেলছি মানুষের নিকট থেকে কিছু টাকা-পয়সা পাওয়ার জন্য। মানুষের দেয়া এই সামান্য টাকা-পয়সা না দিলে যে আমাদের মাদরাসা বন্ধ হয়ে যাবে এমনটাতো নয়। এমন ঘটনা পৃথিবীর কোথাও ঘটেনি যে, টাকা-পয়সার অভাবে কোনো মাদরাসা বা মসজিদ বন্ধ হয়ে গেছে। এমন ঘটনা না কোনো বইতে পড়তে হয়েছে, না কোনো ইতিহাসবিদের মুখ থেকে শুনতে হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ! শুনতে হয়নি।  তাহলে কেন আমরা এই সামান্য টাকা-পয়সার জন্য মানুষের কাছে আমাদের মাদরাসা, দ্বীনি শিক্ষা এবং নিজেদের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে দিচ্ছি?

আমাদের মাদরাসাগুলোর দায়িত্বশীল এবং কর্তৃপক্ষবৃন্দকে মাদরাসার নাম সিলেক্ট করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন শব্দ প্রয়োগের জ্ঞান এবং সাথে সাথে যেকোনো শব্দের অপব্যবহার থেকে বিরত থাকা চাই ও শব্দের যথোপযুক্ত ব্যবহার করা চাই। এমন কোনো কাজ যেন আমাদের দ্বারা না ঘটে, যার ফলে মাদরাসা এবং মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে মানুষের কাছে হাসির পাত্র হয়ে যেতে হয়। তাই এ বিষয়ে মাদরাসার দায়িত্বশীল এবং কর্তৃপক্ষকে সচেতন হওয়া দরকার বলে মনে করি।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

মাদরাসা শিক্ষা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর