প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান সমূহ প্রমাণ করে ঐতিহাসিক দিক থেকে আমাদের এ দেশ কতটা সমৃদ্ধশালী ছিল। আমাদের প্রাচীন ইতিহাস ও এর নিদর্শনসমূহ দেশের গৌরব বহন করে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এবং চাকরীর পরীক্ষায় বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান সমূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। আর তাই পরীক্ষায় ভালো প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞানের অংশ হিসেবে আমাদের এ ইতিহাসগুলো জানা দরকার।
১২. সত্য পীর ভিটা
পাহাড়পুর বিহারের পূর্ব প্রাচীর থেকে প্রায় চারশত গজ পূর্বে এই মন্দির অবস্থিত। সত্যপীর ভিটা নামের উদ্ভব মাত্র ১৭শ - ২৮ শ শতাব্দিতে। কারণ এই সময়ে জনসাধারণ ইসলাম ধর্ম গ্রহল করে। এবং নিজেদের ধর্ম মাহাত্ম প্রচার করার জন্য মাটি ঢাকা এই ঢিবিতে পীর দরবেশদের নিয়ে কাল্পনিক কাহিনী আরোপ করে। তবে খনন কার্য থেকে জানা যায় অতীতে এটি একটি প্রসিদ্ধ তাঁর মন্দির ছিল।
১৩. কান্তাজীর মন্দির
দিনাজপুর থেকে ১৭ কিঃ মিঃ উত্তরে অবস্থিত এই মন্দিরটি সম্রাট আকবরের সময় রাজা প্রাণনাথ নির্মান করেন। মন্দিরের প্রাপ্ত ফলক থেকে জানা যায়, ১৭০৪ সালে রাজা প্রাণনাথ মন্দিরের কাজ শুরু করেন। তখন এর নাম ছিল নবরত্ন খাঁ। এতে ছিল ৯টি গম্বুজ । ১৭৫২ সালে তার পুত্র এর নির্মাণ কাজ শেষ করেন। ২৬ কিঃ মিঃ এলাকা জুড়ে মন্দির চত্ত্বরটি অবস্থিত। মন্দিরের দেওয়ালে রামায়ন ও মহাভারতের কাহিনী পোড়ামাটির ফলকে চিত্রায়িত রয়েছে।
১৪. পাহাড়পুর
পাহাড়পুর রাজশাহী বিভগে নওগাঁ জেলায় অবাস্থত। এর প্রাচীন নাম সোমপুর। এটি পাল রাজাদের একটি প্রত্মতাত্মিক নির্দশণ। ১৯২৩ খ্রিঃ এর খনন কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশের বৌদ্ধ যুগের সবচেয়ে বড় নির্দশণ এটি।
১৫. সোনারগাঁ
বার ভূইয়াদের অন্যতম ঈসা খাঁর আমলের রাজধানী ছিল সোনার গাঁ। ঈসা খাঁর স্ত্রীর নাম অনুসাওে এর নামকরণ করা হয়। সোনার গাঁর অপর একটি নাম সুবর্ন গ্রাম। ঢাকা – চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে প্রায় ২৬ কিঃ মিঃ গেলে মোগড়া গ্রাম। এখান থেকে কিছুটা পূর্বদিকে ছায়া ঢাকা অঞ্চল প্রাচীন সোনার গাঁ। এখানে পঞ্চম পীরের মাজার, গিয়াস উদ্দিন আজম সাহেবের কবর ও হোসেন শাহ নির্মিত সুদৃশ্য মসজিদ আছে। শের শাহ সোনার গাঁ থেকে সিন্ধু পর্যন্ত মহাসড়ক নির্মাণ করেন। এটিই গ্রান্ড ট্রাংক নামে খ্যাত। এখানে লোক শিল্প যাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে। ঈসা খাঁর স্মৃতি বিজড়িত সোনার গাঁ এক সময় বাংলার স্বাধীন সুলতানদের রাজধানী ছিল।
১৬. আহসান মঞ্জিল
পুরাতন ঢাক ও বুড়িগঙ্গার নদীর তীরে ইসলামপুরে অবস্থিত। ১৮৭২ সালে ঢাকার নবাব আব্দুল গনি তাঁর পুত্র খাজা আহসান উল্লার নামে আহসান মঞ্জিল তৈরি করেন। ১৮৮৮ সালে এক তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আহসন মঞ্জিল যাদুঘর উদ্ভোদন করেন। বর্তমানে এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে।
১৭. লালবাগ কেল্লা
পূর্বনাম আওরঙ্গবাদ দুর্গ। ১৬৭৮ সালে লালবাগে আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা আজম এর নির্মান কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে শায়েস্তা খাঁ এর নির্মান কাজ শেষ করেন। পূর্ব পশ্চিমে ২০০০ ফুট লম্বা ও উত্তর দক্ষিনে ৮০০ ফুট চরড়া। এর উত্তর দক্ষিনে দেওয়ালে দুটি তোরন রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিন তোরনের মাঝে রয়েছে বর্গাকার বাধানের পাকুর। কেল্লা চত্বরে রয়েছে তিনটি পুরাকীর্তি। এ গুলো হল পরী বিবির মাজার, দরবার হল এবং তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ।
১৯. বড় কাটরা
সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র শাহাজাদা মুহাম্মদ সুজা বাংলার সুবেদার নিযুক্ত হবার পর তিনি বাংলার সাময়িকভাবে পান্ডুয়ার নিকটবর্তী স্থনে স্থানান্তর করেন। শাহাজাদা সুজা তাঁর পরিবার পরিজনের জন্য বুড়ি গঙ্গার তীরে চক বাজারে একটি বাড়ী নির্মাণের আদেশ দেন। তাঁর আদেশে নির্মাণ প্রকৌশলী আবুল কাসেম ১৬৬৪ সালে বড় কাটরা নির্মাণ করেন। এই সুবিশাল অট্টালিকার উত্তর দক্ষিণ বাহুর দৈর্ঘ্য ছিল ২৩০ ফুট। শুধু প্রবেশ পথের উপরের অংশই ছিল তিন তলা বিশিষ্ট, কাটরার বাকি অংশ দ্বিতল। শহজাদা সুজার এ প্রাসাদ পছন্দ না হওয়ার কারনে প্রকৌশলী আবুল কাশেম কে তা দান করে দেন।
২০. ছোট কাটরা
বড়কাটরা থেকে দুশত গজ পূর্ব দিকে বুড়ীগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ছোট কাটরা অবস্থিত। সুবেদার শায়েস্তা খাঁন নিজ বসবাস ও সুবেদারী কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ১৬৬৩-১৬৬৪ সালে ছোট কাটরা নির্মাণ করেন। শায়েস্তা খানের এদেশীয় স্ত্রী চম্পা বিবি ও তার সন্তানাদি নিয়ে এখানে তিনি দীর্ঘ দিন বসবাস করেছেন। ১৮১৬ সালে এটিকে স্কুলে পরিনত করা হয়। পরবর্তীতে নবাব পরিবারের দখলে চলে যায় এটি। নবাবরা এটিকে ব্যবসা কেন্দ্রে পরিনত করে। বর্তমানে অব্যবস্থার কারনে এটি প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
ক্রেডিট : কোর্সটিকা

