কওমিতে চালু হোক জেনারেলদের আলাদা মক্তব
মুহাম্মদ হেদায়ত উল্লাহ
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:১০
বর্তমান বিশ্বে মানুষের ধর্মীয় শিক্ষাবোধ দ্রুত কমে যাচ্ছে। প্রযুক্তি, বাজারকেন্দ্রিক জীবন, ব্যস্ততা সব মিলিয়ে নতুন প্রজন্ম যেমন ইসলামি জ্ঞান থেকে দূরে সরে পড়ছে, তেমনি সাধারণ শিক্ষিত পরিবারগুলোর মধ্যেও ধর্মীয় বিষয়ে অনভিজ্ঞতা বাড়ছে। অথচ সমাজে নৈতিকতা, সততা, মানবিকতা এসব গুণ প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামের মৌলিক শিক্ষার বিকল্প নেই। এই বাস্তবতায় প্রতিটি কওমি মাদরাসায় জেনারেল শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা মক্তব চালু করা কেবল একটি ভালো উদ্যোগই নয়, বরং সময়ের অপরিহার্য দাবি।
জেনারেল শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় শিক্ষার অভাব
বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী শিক্ষা থাকলেও তা খুব সীমিত এবং অনেক ক্ষেত্রেই পাঠ্যবই-নির্ভর। বাস্তব জীবনের আমল, ফিকহি বিষয়, কোরআন-হাদীসের সহজ ব্যাখ্যা বা দৈনন্দিন জীবনে ধর্ম পালন করার পদ্ধতি এগুলোর গভীর শিক্ষা অধিকাংশ শিক্ষার্থী পায় না। এর ফলে তারা বড় হয়ে পেশাজীবনে সফল হলেও ধর্মীয় জ্ঞান ও চর্চায় পিছিয়ে থাকে।
মক্তব ইসলামী শিক্ষার ভিত্তি
মক্তব হলো ইসলামী শিক্ষার প্রথম ধাপ। এখানে শিশুরা কোরআন পড়তে শেখে, নামাজের নিয়ম, আকাইদ, আদব-আখলাক এবং মৌলিক ইসলামী জ্ঞান অর্জন করে। ঠিক এই মৌল ভিত্তিই বর্তমানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিত। তাই স্থানীয় মাদ্রাসাগুলোতে জেনারেলদের জন্য আলাদা সময়সূচিতে মক্তব চালুর ব্যবস্থা করা গেলে অসংখ্য শিশু ও কিশোর প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞান সহজে লাভ করতে পারবে।
কওমি মাদরাসার অভিজ্ঞতা ও যোগ্য শিক্ষক
কওমি মাদরাসায় দীর্ঘকাল ধরে দক্ষ হাফেজ, আলেম, ক্বারি ও অভিজ্ঞ শিক্ষকরা মক্তব পরিচালনা করে আসছেন। তারা জানেন কীভাবে শিশুদের সহজ-সাবলীল পদ্ধতিতে কোরআন শিক্ষা দেওয়া যায়। এই বিশাল মানবসম্পদ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপকারে লাগানো গেলে সমাজ আরও ভারসাম্যপূর্ণ ও নৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
স্থানীয় পর্যায়ে সহজ সুযোগ
যদি প্রতিটি কওমি মাদরাসায় নিকটবর্তী স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য মক্তব চালু করা হয়, তাহলে অভিভাবকদের আলাদা প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর ঝামেলা কমে যাবে। বিকেল বা ফজরের পর- ১২ ঘণ্টার মক্তব ক্লাসই একজন শিশুর জন্য যথেষ্ট ভিত্তি গড়ে তুলতে পারে। এতে অল্প খরচে এবং নিরাপদ পরিবেশে শিশুদের ইসলামী শিক্ষা লাভের সুযোগ তৈরি হবে।
নৈতিক অবক্ষয় রোধে ভূমিকা
আজকের সমাজে সহিংসতা, মাদক, প্রতারণা, জুয়া, অনলাইন গেমস, অশ¬ীলতা এগুলো তরুণদের জন্য বড় হুমকি। মক্তব শিক্ষা শিশুদের মধ্যে আল্লাহভীতি, নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ গড়ে তোলে। একজন শিশু ছোটবেলা থেকেই যদি নামাজ, শিষ্টাচার, সততা এবং মানবিক আচরণ শিখে বড় হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ সমাজ আরও নৈতিক, শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল হবে।
ধর্মীয়-দুনিয়াবি শিক্ষার সমন্বয়
ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণ মানে দুনিয়াবি শিক্ষার বিরোধিতা- এ ধারণা ভুল। বরং উভয় শিক্ষা পরস্পরকে পরিপূরক করে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, চিকিৎসা, প্রকৌশল- সবক্ষেত্রে জেনারেল শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যাবে, আর ইসলামী মূল্যবোধ তাদের সঠিক চরিত্র, দায়িত্ববোধ ও সৎ জীবন পরিচালনায় পথদিশা দেবে। মক্তব সেই সেতুবন্ধ তৈরির সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম।
সামাজিক ও নৈতিক সংকটের এই সময়ে কওমি মাদরাসার অভিজ্ঞতা, সক্ষমতা এবং ধর্মীয় শিক্ষার অমূল্য ঐতিহ্যকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলোূ প্রতিটি কওমি মাদরাসায় জেনারেলদের জন্য আলাদা মক্তব চালু করা। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও মানবিকভাবে শক্তিশালী করে তোলা যায়। সঠিক পরিকল্পনা, সহযোগিতা এবং আন্তরিকতায় এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা গেলে পুরো জাতিই এর সুফল ভোগ করবে, ইনশাআল্লাহ।
লেখক : প্রভাষকূ ইসলামিক স্টাডিজ, দশমিনা ইসলামিয়া কামিল এমএ মাদরাসা, পটুয়াখালী, বরিশাল

