Logo

শিক্ষা

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান পরিচিতি

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১৭

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান পরিচিতি

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান সমূহ প্রমাণ করে ঐতিহাসিক দিক থেকে আমাদের এ দেশ কতটা সমৃদ্ধশালী ছিল। আমাদের প্রাচীন ইতিহাস ও এর নিদর্শনসমূহ দেশের গৌরব বহন করে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এবং চাকরীর পরীক্ষায় বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান সমূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। আর তাই পরীক্ষায় ভালো প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞানের অংশ হিসেবে আমাদের এ ইতিহাসগুলো জানা দরকার।

২৭. সাত গম্বুজ মসজিদ
ঢাকার ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোড থেকে দুই মাইল উত্তরে মোহাম্মদপুরের একটি বিলের পূর্ব সীমানায় এটি অবস্থিত। এই মসজিদটি ৪৮ হাত লম্বা। এর উপরে তিনটি গম্বুজ আছে। মসজিদের চারকোনে আছে চারটি মিনার। প্রতিটির উপরে আছে একটি করে গম্বুজ । ১৬শ শতাব্দীতে শায়েস্তা খান এটি নির্মাণ করেছিলেন।
২৮. জয়কালী মন্দির
প্রায় ১৭ শতকে নির্মিত দুটি মন্দিরকে একত্রে বলে জয়কালী মন্দির। ঢাকার ঠাটারি বাজারের পূর্ব দিকে দেওয়াল ঘেরা স্থানে মন্দির দুটি অবস্থিত।
২৯. ঢাকেশ্বরী মন্দির
সলিমুল­াহ হলের প্রায় আধা মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে এবং ঢাকেশ্বরী রাস্তার উত্তর পাশে ঢাকেশ্বরী মন্দির অবস্থিত। দেওয়াল ঘেরা একটি স্থানে মন্দিরগুলো অবস্থিত। পূর্বদিকে প্রধান মন্দিরে ছিল ঢাকেশ্বরী দেবীর মূর্তি। পশ্চিম দিকে এক সারিতে আছে চারটি ছোট মন্দির। পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে একটি দীঘি। ১৭ শতকে নির্মিত এই মন্দিরটি সম্রাট আকবরের সেনাপতি রাজা মানসিংহ তৈরি করেছিলেন বলে মনে করা হয়।
৩০. তেজগাঁও গীর্জা
ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় ১৬৭৭ খ্রীস্টাব্দে নির্মিত সবচেয়ে প্রাচীন গীর্জা।
৩১. বিনত বিবির মসজিদ
নারিন্দা পুলের কাছে বর্গাকার এই মসজিদটি ১৪৬৬ সালে তৈরি। এর প্রতি দেওয়াল ১৩ হাত লম্বা। এক গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদের ভিতরের দেওয়ালের শিলালিপি থেকে জানা যায় মোসাম্মৎ বিনত্ নামের একজন মহিলা এটি নির্মাণ করেছিলেন।এটি ঢাকার সবচেয়ে বড় মসজিদ।
৩২. শিখ মন্দির
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারের পশ্চিম দিকে অবস্থিত। সুবেদার ইসলাম খানের ভাই সুজাত খানের নামানুসারে এই এলাকার নাম ছিল সুজাতপুর। আর এই মন্দিরটির নাম ছিল সুজাতপুর শিখ মন্দির। শিখদের মতে ১৭ শতকের প্রথম ভাগে সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময় শিখ গুরু আলমসত সাহেবএটি নির্মান করেন। বর্গাকার মন্দিরটির প্রধান কামরায় আছে শিখদেও পবিত্র গ্রন্থ “সাহেব”।
৩৩. গোকূল মেড়
৪র্থ শতকে গুপ্তযুগে নির্মিত একটি প্রাচীন মন্দির। এর বর্তমান উচ্চতা ৪৩ ফুট । এতে ১৭২ টি কামরা ছিল। একে লক্ষীন্দরের মেড় ও বলা হয়।
৩৪. জিয়া স্মৃতি জাদুঘর
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ‘জিয়া স্মৃতি যাদুঘর’ (চট্টগ্রামের পুরাতন সার্কিট হাউজ) উদ্বোধন করেন ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ সালে। চট্টগ্রাম সাকির্ট হাউসে ১৯৮১ সালের ৩০শে মে রাতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হন। পরে সরকার এই সার্কিট হাউজকে জিয়া স্মৃতি যাদুঘরে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেন। এই যাদুঘরের নির্মাণ কাজ শেষ করতে ব্যয় হয় ২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। যাদুঘরের নিচতলায় ২০০ আসনের এশটি মিলনায়তন, একটি সেমিনার কক্ষ, গবেষণা পাঠাগার ও অফিস কক্ষ রয়েছে। দোতালায় ১২ টি গ্যলারি রয়েছে। তন্মধ্যে ৬টি পূর্ব দিকে ৬টি পশ্চিম দিকে।
৩৫. ঢাকা নগর জাদুঘর
১৯৯৬ সালের ২০ জুলাই নগর ভবনে ঢাকা নগর জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়।  ঢাকা নগর যাদুঘর হচ্ছে ঢাকা সম্পর্কীত যাদুঘর। এ জাদুঘরে যা কিছু শোভা পাচ্ছে তা সবই ঢাকা শহরকে ঘিরে। শুধু একটি শহরকে কেন্দ্র করে একটি জাদুঘর গড়ে তোলা সারা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে প্রথম। ঢাকা মহানগরীর ঘটনা বহুল ইতিহাস ও সামগ্রিক পরিচয় বস্তু নিদর্শনের মাধ্যমে জনসমক্ষে তুলে ধরা, নাগরিকদের মধ্যে ঐতিহ্য চেতনা সৃষ্টি করা, ঢাকা নগরীর বিভিন্ন সমস্যার উপর আলোক পাত করে। নগরবাসীকে সচেতন করে তোলা এবং ঢাকার নগর সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল দস্তাবেজ সংরক্ষণ করা ঢাকা নগর যাদুঘরের প্রধান উদ্দেশ্য।
৩৬. জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর
রাজশাহীতে ১৯১০ সালে “বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি” নামে কুমার শরৎ রায় কতৃক ‘বরেন্দ্র গবেষণা যাদুঘর’ বাংলাদেশের প্রথম যাদুঘর। ১৯৬৪ সাল থেকে এর পরিচালনার ভার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করেছে। এখানে পাথরের মূর্তির সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। পাথরের মূর্তির এই বিপূল সংগ্রহ দেশের অন্য কোন যাদুঘরে নেই। বরেন্দ্র যাদুঘর কর্তৃক সংগৃহীত মূর্তির মধ্যে উলে­খ যোগ্য হলো ব্রহ্মা, দুর্গাসিংহ বাহিনী, গনেশ, মা ও শিশু, খাদিরবনী তারা ইত্যাদি।
৩৭. বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘর
১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা জাদুঘর। পরবর্তীতে ঢাকা জাদুঘরের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় জাতীয় জাদুঘর এবং ১৯৮৩ সালের ১৭ নভেম্বর ত্রিতল বিশিষ্ট নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় শাহবাগে। আবহমান বাংলার শিল্প, সাহিত্য, ঐতিহ্য, ইতিহাসের স্মৃতি চিহ্ন সযতেœ রক্ষিত আছে এ যাদুঘরে।
৩৮. মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে “মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর”। ৫নং সেগুন বাগিচা রোডে এর উদ্যোক্তা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি ট্রাষ্ট।
৩৯. বাংলাদেশ শিশু একাডেমী
শিশুদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ এবং তাদের আত্মশক্তি ও আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলার জন্য ১৫ জুলাই ১৯৭৭ সালে পুরনো হাইকোর্ট এলাকায় শিশু একাডেমীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। শিশুদের প্রতিভার স্বীকৃতি দানের উদ্দেশ্যে শিশু একাডেমী ১৯৭৮ সাল থেকে জাতীয় শিশু কিশোর প্রতিযোগিতা প্রবর্তন করে।
৩৪. বাংলা একাডেমী
বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৫ সালের ১ডিসেম্বর। ১৯৫৬ সালের ডা. মুহাম্মদ এনামুল হক বাংলা একাডেমীর প্রথম পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল পূর্বপাকিস্তন আইন পরিষদে ‘দি বেংগলী একাডেমী অ্যাক্ট ১৯৫৭’ গৃহীত হয়। এই আইনে বাংলা একাডেমীকে একটি স্বায়ত্ব শাষিত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯৫৭ সালের ১০ আগষ্ট উক্ত আইন বলবৎ হয়। এই আইনে বাংলা একাডেমী ‘কাউন্সিল’ গঠণের বিধান থাকায় একাডেমীর আয়োজক সমিতি কাউন্সিল এর মর্যাদা লাভ করে। কাউন্সিল এর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালের ২৬শে মার্চ। বাংলা একাডেমীর কাজ শুরু হয় গবেষণা বিভাগ, অনুবাদ বিভাগ, সংকলন ও প্রকাশনা বিভাগ এবং সংস্কৃতি বিভাগ নামে চারটি বিভাগ নিয়ে।
৪১. বঙ্গভবন
স্বাধীনতা লাভের পরে ১৯৭২ সনে ১২ জানুয়ারী প্রথম সংবিধানের প্রেসিডেন্টেধামলে সাবেক পূর্ব পাকিস্তান গভর্নর হাইজের নাম বঙ্গভবন রাখা হয়। বঙ্গভবন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন। বঙ্গভবনের নামটির সূচনা ১৯৭২ সনের শুরু থেকেই।
৪২. উত্তরা গণভবন
নাটোর শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দুরে দিঘাপাতিয়া নামক স্থানে উত্তরা গণভবন অবস্থিত। ১৮৯৭ সনে রাজা প্রমোদ নাথ রায়ের সময় ৪৩ একর জায়গা জুড়ে এ প্রসাদ তৈরী হয়। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের সময় রাজ পরিবার ভারতে চলে যাওয়ায় প্রজাসস্বত্ব আইন অনুযায়ী সরকার এটি লাভ করেন। ২৪ জুলাই ১৯৬৭ সালে এ ভবনটিকে গভর্নর হাউস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবর রহমান এটার নাম পরিবর্তন করে রাখেন উত্তরা গণভবন। ১৯৮০ সাল থেকে এখানে কয়েকবার মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এটি দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ভবন নামের খ্যাত।
৪৩. তিন নেতার মাজার
শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে অবিভক্ত বাংলার তিন নক্ষত্র রাজনৈতিক ও প্রশাসক শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এ. কে. ফজলুল হক ও খাজা নাজিমুদ্দিনের কবর। অপূর্ব স্থাপত্যশৈলর এক নিদর্শন এটি। এর স্থাপতি মাসুদ আহমেদ।
৪৫. সুন্দরবন
বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত। পৃথিবীব সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন। ভারতের চব্বিশ পরগণা এবং বাংলাদেশের খুলনা ও পটুয়াখালী জেলার দক্ষিণাংশ সুন্দরবনের অন্তর্ভূক্ত। এ বনে অত্যধিক সুন্দরী কাঠ জন্মে বলে এর নামকরণ করা হয়েছে সুন্দরবন। সুন্দরবন পূর্ব পশ্চিমে ১৬০ মাইল দীর্ঘ এবং উত্তর দক্ষিণে ৮০ মাইল প্রশস্ত। এটি বাংলাদেশের জাতীয় বন।
৪৬. সেন্টমার্টিন দ্বীপ
বলতে গেলে এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এই দ্বীপটি প্রায় তিনশো বছরের পুরনো। এখানে প্রচুর চুনাপাথর পাওয়া যায়। দ্বীপটির আয়তন ৫ মাইল। লোকবসতি প্রায় তিন হাজার। এর অপর নাম নারিকেল জিঞ্জিরা।
ক্রেডিট : কোর্সটিকা

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

প্রাথমিক শিক্ষা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর