Logo

শিক্ষা

শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবনা

মাদরাসায় ‘অমুসলিমদের সহায়তা বিভাগ’ খোলা হোক

Icon

লাবীব আব্দুল্লাহ

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:২১

মাদরাসায় ‘অমুসলিমদের সহায়তা বিভাগ’ খোলা হোক

আল্লাহ হলেন রাব্বুল আলামীন। নবীজী (সা.) রাহমাতুল লিল আলামীন। কোরআন হলো হুদাল লিন্নাস। নবীজী (সা.) শুধু মুসলমানের জন্য নন, তিনি সবার নবী। তিনি রহমতে আলম, বিশ্বনবী, বিশ্বের জন্য শান্তির পয়গামবাহী। কোরআন সব বান্দার জন্যই আল্লাহর সর্বশেষ বার্তা। কোরআন সকল আসমানী ধর্মের অবিকৃত বাণীর নির্যাস। মানবরচিত ধর্মের কথা বাদ। ইসলাম একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম আল্লাহর কাছে। “ধম” শব্দটি সংকীর্ণ অর্থ বহন করে; ইসলাম ধর্মেরও ঊর্ধ্বে “দীন”। দীন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শন। ইসলাম সামগ্রিক জীবনের কথা বলে- দুনিয়া ও আখেরাতের কথা বলে। ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্রের সমস্যার সমাধানের পথ রয়েছে ইসলামে। ইসলাম মানে স্রষ্টার কাছে সমর্পণ, আত্মসমর্পণ। ইসলাম মানে শান্তির ঠিকানা। ইসলাম হলো পার্থিব ও অপার্থিব সকল প্রশ্নের সমাধান।

নবীজী (সা.)-এর আখলাক সবার জন্য মডেল। তিনি উসওয়ায়ে হাসানা, চরিত্রের আদর্শ, বিশ্বমডেল। পশ্চিমাদের ইসলাম নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা ও অজ্ঞতা আছে। ইসলাম বিজ্ঞানের কথাও বলে, যা পশ্চিমারা কয়েক শতাব্দী পরে জানলেও কোরআন তা চৌদ্দশ বছর আগেই বলেছে। নবীজী (সা.)-এর সুন্নাহ বিজ্ঞানময়।

অনেক মুসলমানও নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন নন। মুসলিম হিসেবে ইসলামের প্রচার তাঁর দায়িত্ব, এটা ফরজ। কিফায়া বা আইনের ভাগ না করে ইসলামের তাবলিগ জরুরি মনে করতে হবে। ইসলাম প্রচারধর্মী দীন, মিশনারি দীন। ইসলামের মিশন ও ভিশন সুনির্ধারিত- জীবনের ভিশন হলো আখেরাতে মুক্তি, নাজাত, জান্নাতের জন্য প্রস্তুত হওয়া। আল্লাহর রেজামন্দিই মুসলমানের মূল ভিশন।

আমরা তাবলিগ বলতে অনেকেই মুসলমানদের নামায-রোযার তাবলিগের কথা মনে করি; এটি তাবলিগের সংকীর্ণ অর্থ। তাবলিগ মূলত অমুসলিমদের মাঝে ইসলাম প্রচার। তাবলিগ হলো একটি কালেমা বা একটি আয়াত জানলেও অপরকে পৌঁছে দেওয়া। মুসলমানকে পৌঁছালে সেটি তাযকির, অমুসলিমকে পৌঁছালে সেটি দাওয়াত ও তাবলিগ। মূল দাওয়াত হলো ইসলামের বিশ্বজনীন ও শাশ্বত বার্তা অমুসলিমদের মাঝে প্রচার করা। নবীজী (সা.) মক্কায় তেরো বছর দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ করেছেন, হিজরত করে মদীনায় এসে আরও দশ বছর দাওয়াত দিয়েছেন, বিশ্বের শাসকদের কাছে দাওয়াতি পত্র প্রেরণ করেছেন।

দাওয়াতের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে তিনি জিহাদ করেছেন। দাওয়াতও জিহাদেরই অংশ। জিহাদ ছিল শান্তির পথ রচনার জন্য। কাফেরদের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের প্রতিরোধে নবীজী (সা.) কিতালও করেছেন। জিহাদ একটি ব্যাপক শব্দ; ইলায়ে কালিমাতুল্লাহর বহুমুখী কার্যক্রম জিহাদ। অমুসলিমদের আগ্রাসন প্রতিরোধে কিতাল। তবে এই জিহাদ ও কিতালের সুনির্ধারিত বিধান ও নীতিমালা কোরআন-হাদীসে রয়েছে। প্রচলিত সন্ত্রাস জিহাদ নয়; জিহাদ কখনই সন্ত্রাস নয়। ইসলামের দাওয়াতি চেতনা বিলুপ্ত হলে মুসলমানদের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যা বিশ্বময় আজ দেখা যাচ্ছে। দাঈ যদি যথাযথ দায়িত্ব আদায় করেন, আল্লাহ ফলাফল দেবেন। দাঈ-বিরোধীরা ধ্বংসের মুখোমুখী হয়, আল্লাহর আযাবে নিপতিত হয়। দাওয়াত বিষয়টি মাদরাসায় বেশি চর্চা হয়, তবে বাস্তব দাওয়াতে আরও সক্রিয় হতে হবে। নবীজী (সা.)-এর যুগের মাদরাসাগুলো (যেমন সুফফা) অমুসলিমদেরও ঠিকানা ছিল। অমুসলিমরা ইসলাম জানার সুযোগ পেত। সাহাবায়ে কেরাম তালিবে ইলম, মুবাল্লিগ ও দাঈ ছিলেন।

নবীজী (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন, “ফাল-ইউবাল্লিগিশ-শাহিদুল গায়িবা” - তোমরা যারা এখানে উপস্থিত আছ, তারা অনুপস্থিতদের কাছে (ইসলামের বার্তা) পৌঁছে দাও।

প্রস্তাবনা:

১) মাদরাসাগুলোতে অমুসলিমদের জন্য “ইসলাম পরিচিতি বিভাগ” খোলা হোক। এই বিভাগ থেকে ইসলামের দাওয়াতি সাহিত্য প্রকাশ করা হবে। বিভাগটি ডিজিটাল হতে পারে, অডিও-ভিডিও ব্যবস্থা থাকবে।

২) অমুসলিমদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা। ইসলামের বিভিন্ন উৎসব ও আয়োজনে অমুসলিমদের অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে ইসলামের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ দেওয়া।

৩) তালিফে কুলুব (হৃদয় জয়) হিসেবে উপযুক্ত উপহার বা হাদিয়া দেওয়া।

৪) ইসলাম সম্পর্কে তাদের সংশয়, সন্দেহ ও প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরা।

৫) মুসলিম রাষ্ট্রে ইসলামে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে আলোচনা করা এবং ইসলামে অমুসলিমদের অধিকারগুলো স্পষ্টভাবে জানানো।

লেখক : শিক্ষাবিদ, গবেষক, লেখক ও পরিচালক, ইবনে খালদুন ইনস্টিটিউট ময়মনসিংহ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

মাদরাসা শিক্ষা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর