Logo

শিক্ষা

শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবনা

কওমিতে মাস্টার্সের সনদ ও বিসিএসের সুযোগ

Icon

লাবীব আব্দুল্লাহ

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:৩৩

কওমিতে মাস্টার্সের সনদ ও বিসিএসের সুযোগ

একটি ছেলে ইলমি পথের অভিযাত্রী স্বপ্ন আলেম হবে হাফেজ হয়েছে। কওমি মাদরাসায় মেশকাত পর্যন্ত পড়েছে। বেফাকে পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফলাফলও করেছেন। ঢাকার জামিয়াতুল উলুমুল ইসলামিয়ায় পড়ালেখা করেছে।

ছেলেটি স্বপ্নবাজ। ডাক্টার হওয়াও তাঁর ইচ্ছে। দাখেলে গোল্ডেন এ প্লাস। এইচ এসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস। ছেলেটি এক সময় মাদরাসাতুস সুফফার ছাত্র ছিলো। খুসুসি জামাত পড়েছে। ২০০৪ সালে আমার স্বপ্নের একটি প্রতিষ্ঠান।

ছেলেটির দাড়ি আছে এবং পায়জামা পানজাবি টুপি পরিধান করে। প্রতিভাবান এই ছেলে মেডিকেলে ভর্তির জন্য দৈনিক সতের আঠারো ঘণ্টা পড়তো। ভাগ্য তাকে সঙ্গ দেয়নি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হয়েছে। বাকৃবির হলেই সিট। কোনো রাজনীতি করে না। সময় পেলে তাবেলিগে যায়। সময় পেলে আমাদের সাহিত্য আসরে আসে।

এই ছেলেটিকে পরামর্শ দিলাম তুমি দাওরায়ে হাদীসটাও পড়ো। সে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে। তাঁর ও তাঁর মায়ের স্বপ্নও সে দাওরা পড়বে। আমারও তাকাদা তাঁর প্রতি। সে রাজি হয়েছে।

একদিন তাঁকে আসতে বললাম। সে এলো। কোনো কওমি মাদরাসায় ভর্তি হতে চায়। আমি তাকে নিয়ে ভাবলাম। চিন্তা করলাম, কোথায় ভর্তি করা যায়?

আমার বয়সি এক মাদরাসার শিক্ষক। আমার নীচের ক্লাসে পড়তো। এখন তিনি এক জামেয়ায় ভারপ্রাপ্ত নাযেমে তালিমাত। ভাবলাম যেহেতু জামিয়া নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সচিব তাই ছেলেটির সমস্যা বোঝবেন এবং স্বপ্নের বাস্তবায়ণে সহযোগিতা করবেন।

আমি সাহস করে ফোন দিলাম। তিনি বললেন, ফোন ঘোরাবেন। মনে হয় ভুলে গিয়ে ছিলেন, তাই ফোন করলাম আবার। ছেলেটির হালাত বললাম। বললাম, কমপক্ষে সিমাআতের সুযোগ দিন। সে নিয়মতান্ত্রিক ভর্তির টাকা ও অন্যান্য খরচ দেবে। নিয়মিত ছাত্র হিসেবে সম্ভব না হলে বেফাকে প্রাইভেট হিসেবে পরীক্ষার সুযোগ দিন। তিনি ফোনে কহিলেন, না। না। না। না। না।

এতো বার নানা বললেন মনটা কষ্টে কেঁপে উঠলো। ছেলেটির কাছে ছোট হলাম ফোনটি তাঁর সামনেই করেছিলাম। আমি কওমি মাদরাসার এক জামেয়ায় একযুগ সহকারী নাযেমে তালীমাত হয়ে কাজ করেছি।

গাধার মতো কাজ করেছি। আমি ১৪টি বছর এক মহিলা মাদরাসায় শিক্ষা বিভাগীয় প্রধান ছিলাম। ছাত্র ছিলো সাতশ। ছাত্রীও ছিলো সাতশ।

আমি আলেমদের কোনো এক সংগঠনের বৃত্তিপরীক্ষার নিয়ন্ত্রক ছিলাম ২০০৫-১১ সাল। এখনও নামে কেন্দ্রীয় শিক্ষা সম্পাদক। নামে দুই জায়গায় নাযেমে তালীমাত। ইফতা বিভাগও একটি আছে।

সেই জনাবের না না না না শুনে মনে হলো, আমি কওমির কিছুই না। কোনো নিয়মও জানি না। এবং সেই ছেলেটির জন্য সুপারিশ করে মহাঅপরাধ করেছি।

এই জনাবের না’না না’না’র আওয়াজ আমার কানে অনুরিত হবে অনেক দিন। তিনি আমাকে না না নানা বলে যে সম্মান দিলেন, তা তো আমি ভুলতে পারবো না।

আরেক মুহতামিম একই আচরণ করে ছিলেন দু’বছর আগে। তবে ওই ছেলেটিকে অবশেষে ভর্তি করে ছিলেন মুহতামিম। ছেলেটি সবচে ভালো রেজাল্ট করেছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করেছে সেই তালেবে ইলম।

আমি ভর্তি করাতে ব্যর্থ হয়ে এই ছেলেটির সাথে পথ হাঁটছিলাম। সে বলল, বিসিএস দেবো ইন শা আল্লাহ। দাওরাটা পড়ার ইচ্ছে ছিলো। সুযোগ না দিলে কী আর করা! বললাম, আরেক মাদরাসায় বলবো। তুমি আশা বাদ দিয়ো না। তাঁর মনটাও বিষন্ন কিন্তু লুকিয়ে রাখলো।

প্রস্তাবনা:

এক : কওমির শিক্ষা বিভাগে শিক্ষিত ও উদার লোক নিয়োগ করা হোক। যারা সময়ের দাবি বোঝবে। তালেবে ইলমের দরদ থাকবে। কেরানিমার্কা নাযেমে তালিমাতমুক্ত হোক কওমি মাদরাসা।

দুই : এমন কিছু কওমি মাদরাসা গড়ে ওঠুক যেখান থেকে মেধাবী ও স্বাপ্নিক ছাত্ররা কলেজ ভার্সিটিতে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে প্রশাসনে নিয়োগ হবে। বিসিএস দেবে।

তিন : কওমির নাযেমে তালীমাতদের দ্রুত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হোক; যেনো তারা পৃথিবীর আলো বাতাশ সম্পর্কে জানতে পারেন। এবং ফান্নুত তাওয়ামুল সম্পর্কে কিছু ধারণা নিতে পারে।

চার : কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিস তাকমীলের সনদ এম এ আরবি ও ইসলামী স্টাডিজ এর সম্মান। সরকার স্বীকৃত এই সনদ ২০১৮ সালের পরে কোন কাজে আসেনি। এ এই সনদ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করে মাদরাসা পড়–য়া ছেলেদেরকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদেরকে বৈষম্যমুক্ত করা হোক। 

তারাও যেন বিসিএস পরীক্ষা দিতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। 

এ পদক্ষেপ গ্রহণে কওমি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও সরকারকে যৌথ উদ্যোগী হতে হবে। বর্ষা বিপ্লবের পর বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার পদক্ষেপ হিসেবে শিক্ষার বিভাজন করে দেশকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। 

লেখক : শিক্ষাবিদ, গবেষক, লেখক ও পরিচালক, ইবনে খালদুন ইনস্টিটিউট ময়মনসিংহ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

মাদরাসা শিক্ষা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর