Logo

শিক্ষা

একটি স্বপ্নের স্কুল : সহকারী প্রধান শিক্ষকের ভাবনা ও দায়িত্ব

Icon

সাখাওয়াত হোসেন

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২৭

একটি স্বপ্নের স্কুল : সহকারী প্রধান শিক্ষকের ভাবনা ও দায়িত্ব

একটি আদর্শ বিদ্যালয় শুধু পাঠদান বা ফলাফলের জায়গা নয়-এটি একজন মানুষকে মূল্যবোধ, শৃঙ্খলা, নৈতিকতা ও নেতৃত্বের গুণে গুণান্বিত করে তোলার একটি প্রতিষ্ঠান। এই বিশ্বাস থেকেই আমি একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে মনে করি, একটি স্বপ্নের স্কুল গঠনে আমাদের ভূমিকা হতে হবে দূরদর্শী, সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল।

বিদ্যালয়ের কাঠামো যতই সুন্দর হোক না কেন, তার প্রাণ হল শিক্ষকবৃন্দ। আমি নিজে আমার শিক্ষকতা জীবনে এমন একজন শিক্ষক পেয়েছিলাম, যিনি আজও আমার চিন্তাভাবনার অনুপ্রেরণা হয়ে আছেন। তিনি হলেন হুমন আহমেদ চৌধুরী স্যার। তিনি সৈয়দ কুতুব জালাল মডেল হাই স্কুলে দীর্ঘ ২৮ বছর শিক্ষকতা করেছেন, এবং হাজার হাজার শিক্ষার্থীর কাছে ছিলেন এক আদর্শ ও অনুকরণীয় শিক্ষক। তাঁর দক্ষতা, পাঠদানের গভীরতা, শৃঙ্খলাপূর্ণ নেতৃত্ব, এবং মানবিকতা আজও আমাদের হৃদয়ে গেঁথে আছে। বর্তমানে তিনি সিলেট সদর এয়ারপোর্ট হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আমি একবার সপ্তম শ্রেণির একটি ক্লাসে পরিসংখ্যানমূলকভাবে শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি ছোট জরিপ চালাই। তাদের বলেছিলাম, “তোমাদের সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষক যিনি, তাঁর নাম একটি কাগজে লিখে ভাঁজ করে আমাকে দাও।” পরে কাগজগুলো গণনা করে দেখি, ৮৫% শিক্ষার্থী হুমন আহমেদ স্যারের নাম লিখেছে। এটি শুধু একজন দক্ষ শিক্ষকের জনপ্রিয়তার প্রমাণই নয়, বরং একজন আদর্শ শিক্ষক কেমন হতে পারেন, তার জীবন্ত উদাহরণ।

এই অভিজ্ঞতা আমাকে ভাবতে শিখিয়েছে- যদি আমি সহকারী প্রধান শিক্ষক হই, তবে কীভাবে এমন শিক্ষকদের গড়ে তুলব, কীভাবে এমন একটি বিদ্যালয়ের সংস্কৃতি গড়ে তুলব যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী একজন আইডল খুঁজে পায়।

প্রথমেই, বিদ্যালয়ে একটি শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তুলব- শ্রেণি কার্যক্রম, পাঠদানের গুণমান, শিক্ষক উপস্থিতি ও শিক্ষার্থীদের আচরণ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করব। শিক্ষকরা যেন শ্রেণিকক্ষে তাদের শতভাগ দেন, শিক্ষার্থীদের যেন মনে হয়, “এই শিক্ষক আমার আপনজন”- সেই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনব।

একাডেমিক সাফল্যের জন্য সুপরিকল্পিত বার্ষিক শিক্ষাপঞ্জি, সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব বণ্টন ও পরীক্ষার পূর্বপ্রস্তুতি নিশ্চিত করব। পাঠদানে উৎসাহ বাড়াতে শিক্ষকদের আলাদা আলাদা কমিটি গঠন করব- যেমন, পাঠ পরিকল্পনা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ, ফল বিশ্লেষণ ইত্যাদি। এই কমিটিগুলোর কাজ নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করব।

বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও পোশাকনীতি মেনে চলা বাধ্যতামূলক করব। শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট ড্রেসকোড এবং শিক্ষকদের পরিশীলিত, পরিচ্ছন্ন পোশাক যেন প্রতিদিনের বাস্তব চিত্র হয়। শিক্ষক ও কর্মচারীদের আচরণ এবং পরিপাটি উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের আচরণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করব। ক্লাসরুম, টয়লেট, মাঠ ও করিডোর যেন ঝকঝকে থাকে- এ বিষয়ে ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারী সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হবে।

শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, বই পড়া অভিযান, সাংস্কৃতিক চর্চা ইত্যাদি নিয়মিত ও সংগঠিতভাবে পরিচালিত হবে। এসব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আলাদা দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক টিম গঠন করে, নির্দিষ্ট সময়ানুযায়ী মনিটরিং চালিয়ে যাব।

প্রতিমাসে শিক্ষক সভার মাধ্যমে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম মূল্যায়ন করা হবে। এতে সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান এবং সবার মধ্যে জবাবদিহিতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।

একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, উপরে বর্ণিত পরিকল্পনা, মনোভাব এবং বাস্তব উদাহরণ অনুসরণ করেই একটি বিদ্যালয়কে আদর্শ ও স্বপ্নের শিক্ষালয়ে রূপ দেওয়া সম্ভব। হুমন আহমেদ চৌধুরী স্যারের মতো শিক্ষকদের আদর্শকে সামনে রেখে, আমরা যদি শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা, শৃঙ্খলা ও নৈতিকতাভিত্তিক পরিবেশ দিতে পারি- তবে এই স্কুলগুলো হবে জাতি গঠনের প্রকৃত ভিত্তি।

একটি স্বপ্নের বিদ্যালয় তখনই গড়ে ওঠে, যখন একজন শিক্ষক কেবল পাঠদাতা নন, বরং একজন চরিত্রবান, দূরদর্শী ও দয়ালু মানুষ হিসেবে শিক্ষার্থীর হৃদয়ে স্থান করে নেন। আমি সেই আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী বলবে- “স্যার, আপনি আমার প্রিয় শিক্ষক, আমার অনুপ্রেরণা।”

লেখক : সহকারী শিক্ষক, সৈয়দ কুতুব জালাল মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, দক্ষিণ সুরমা, সিলেট।

বিকেপি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

প্রাথমিক শিক্ষা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর