Logo

বিনোদন

‘জুলাইয়ের প্রত্যাশা পূরণ তো হয়ই নাই, বরং হতাশা দেখা দিয়েছে’

সুদীপ্ত সাইদ খান

সুদীপ্ত সাইদ খান

প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১৮:৫৮

‘জুলাইয়ের প্রত্যাশা পূরণ তো হয়ই নাই, বরং হতাশা দেখা দিয়েছে’

জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন ছিলেন জুলাই  গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখ সারির যোদ্ধা। জুলাই গণঅভ্যুত্থান, তার সাম্প্রতিক কাজ ও নানা বিষয় নিয়ে তিনি কথা বললেন  বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুদীপ্ত সাইদ খান।

কেমন আছেন? সাম্প্রতিক সময় কেমন কাটছে আপনার?

বাঁধন : কাজের ব্যস্ততা ওইভাবে নাই। আমার বেশির ভাগ কাজ বাতিল হয়েছে। এরমধ্যে তিনটা সিনেমার কাজ ও একটা বিজ্ঞাপনের কাজ ক্যানসেল হয়েছে। ফলে ওইভাবে কাজের ব্যস্ততা নাই। কিন্তু আমার মেয়ের ছুটি ছিল। তো ছুটির কারণে একটু আমার মেয়ের সাথে সময় কাটানো হলো।

কী কারণে কাজ ক্যানসেল হয়েছে?

বাঁধন : আমার যে ইনভেস্টররা ছিলেন তারা সবাই আওয়ামী লীগের ছিলেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হওয়ার কারণে তারা এখন আর ইনভেস্ট করছেন না। এইজন্য সিনেমার প্রজেক্টগুলো ক্যানসেল হয়েছে। আর একটা ইন্ডিয়ান ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন ছিল। ওরা আমাকে লাস্ট মুহূর্তে এসে ক্যানসেল করেছে। কারণ হিসেবে তারা আমাকে বলেছে যে, আমাকে মানুষ চেনে না। তাই ওরা আমাকে বিজ্ঞাপনে নিতে পারছে না। কিন্তু তাদের সাথে আমার কথাবার্তা প্রায় কন্ট্রাক্ট পেপার পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। তারা আমাকে কন্ট্রাক্ট পেপার পাঠিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। মানে এই পর্যায়ে কথা হওয়ার পরেও তারা এই কাজটা থেকে আমাকে ক্যানসেল করেছেন। 


আপনাকে কেউ চেনে  না— এই বিষয়টা হাস্যকর হয়ে গেল না!

বাঁধন : এজন্যই বললাম। আমাকে তারা জানিয়েছেন, ওনারা মার্কেট সার্ভে করে দেখেছেন যে আমাকে কেউ চেনে না।

এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে বলে কি আপনি মনে করেন?

বাঁধন : হ্যাঁ। অবশ্যই আমার মনে হয়েছে, এর পেছনে অবশ্যই রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। আমি যে বললাম, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হওয়ার কারণে এখন আওয়ামী লীগের ওনারা আর সিনেমায় ইনভেস্ট করতে চাচ্ছেন না। এটা একটা ব্যাপার। কারণ তারা আমার সাথে আর যোগাযোগই করছেন না। আর ইন্ডিয়ান প্রোডাক্টের এই কাজটার ক্ষেত্রে আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি যেহেতু বাংলাদেশের স্বপক্ষে স্ট্যান্ড নিয়েছি, তাই এটা হয়তো তারা এক্সপেক্ট করছে না।

যে প্রজেক্টগুলো বাদ গেছে বলে উল্লেখ করলেন— আওয়ামী লীগের সেই প্রযোজকদের সম্পর্কে জানতে চাই। কারা তারা? নাম বলা যাবে? 

বাঁধন : নামগুলো বলতে পারছি না। কেন, কী কারণে— এগুলা নিয়ে আর বেশি কথা বলতে পারছি না।

আজ ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান দিবস। আপনি তো এই জুলাই বিপ্লবের একজন সামনের সারির অংশীজন। সেই জায়গা থেকে জানতে চাই— যে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে গত বছর জুলাইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তার জন্য অনেক ঝুঁকিও নিতে হয়েছে আপনাকে। আজকে এক বছর পর এসে আপনার কি মনে হয় যে সেই ঝুঁকি নেওয়াটা সার্থক হয়েছে? বা সেটা সফল হয়েছে?

বাঁধন : প্রথমত হচ্ছে, অবশ্যই এই ঝুঁকি নেয়াটা সার্থক হয়েছে। কারণ একটা স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে এবং স্বৈরাচারী সরকারপ্রধান দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। গণঅভ্যুত্থানের এইটা সবচাইতে বড় অ্যাচিভমেন্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবসময় স্মরণ করা হবে যে, বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে কিভাবে ছাত্রজনতার সম্মিলিতশক্তি এই ধরনের একটা স্বৈরাচারী সরকারকে অপসারণ করেছে। সেই দিক থেকে ঝুঁকি নেওয়াটা অবশ্যই সার্থক হয়েছে। 

কিন্তু আপনারা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন— তার কতটুকু আশা পূরণ হয়েছে? 

বাঁধন : এক্ষেত্রে আমি বলব যে, আমার প্রত্যাশা অনেক বেশি ছিল। আমার প্রত্যাশা ছিল— একটা সাম্যের বাংলাদেশ দেখব, ন্যায়বিচারের বাংলাদেশ দেখব, মানবিক বাংলাদেশ দেখব যেখানে সমস্ত ধর্ম, বর্ণ, গোত্র মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। এইসব মানুষরা আসলে তার নিজের অধিকার এবং স্বাধীনতা বোঝে। ওই জায়গা থেকে সেই প্রত্যাশা পূরণ তো হয়ই নাই, বরং আসলে কিছুটা হতাশা দেখা দিয়েছে। কারণ দেখা যাচ্ছে যে, গত সরকার আমলে যেই ধরনের ঘটনাগুলো ঘটত, সেগুলোই এখন ঘটছে। এখনো দুর্নীতি বিরাজমান, প্রচণ্ডভাবে মিথ্যা মামলা, হয়রানিমূলক মামলা, মবকালচার তৈরি হয়েছে, যেটা খুবই জঘন্য। নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে, বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে দেয়া হচ্ছে, মাজার ভাঙা হচ্ছে। এইগুলো আসলে আমি এক্সপেক্ট করি নাই। তো সেই জায়গা থেকে প্রত্যাশা ওইভাবে পূরণ হয় নাই।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া সামনের সারির অনেকেই রাষ্ট্রীয় অনেক পদে আসীন হয়েছেন। কিন্তু আপনি সামনের সারিতে থাকলেও আপনাকে রাষ্ট্রীয় পদ বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয় নাই। এটা নিয়ে আপনার কোনো আক্ষেপ কাজ করে কিনা?

বাঁধন : দেওয়া হয় নাই কথাটা ঠিক না। আমি ইচ্ছা করে সচেতনভাবে আসলে এইধরনের কোনো দায়িত্বে যাই নাই। এটা আমার সচেতন সিদ্ধান্ত ছিল।

জুলাই আন্দোলনের এক বছর পর আপনার মতো অনেক আন্দোলনকারীই হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন নিজের প্যাভিলিয়নে। আবার অনেকেই নেতৃস্থানে গিয়ে আখের গোছাচ্ছেন— এই বিষয়টাকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

বাঁধন : আসলে বাংলাদেশ একটা দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। এখানে মানুষের ভেতরে প্রতিশোধ পরায়ণ মনোবৃত্তি অনেক বেশি। তারা প্রতিশোধ পরায়ণ। হিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। যেহেতু বেশিরভাগ মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত, এই জায়গা থেকে আসলে রাতারাতি একটা পরিবর্তন চলে আসবে— এত সহজ ছিল না ব্যাপারটা। তবে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন আসতে পারতো যেটা আসে নাই। যেটার জন্য আমাদের হতাশা। 

মানুষের এই স্বভাবগুলো সহজে আসলে পরিবর্তন হবে না। এইটা তো সম্ভব না। আমি সবসময়ই একটা কথা বলি যে, সংস্কার হচ্ছে একটা চলমান প্রক্রিয়া। এটা চলতে থাকবে। এই সরকার একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দেক। নির্বাচিত সরকার হয়তো এই সরকারের চাইতেও বেটার পারফরমেন্স করবে বলে আমার মনে হয়। কিন্তু মানুষের স্বভাব এতো সহজে চেঞ্জ হবে না। ফলে এই কারো  হতাশা, এই কারো আখের গোছানো— এসব থেকেই যাবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই আপনাকে ট্রল করে, অনেকেই আপনাকে ‘লাল বদর’ বলে ডাকে। আবার অনেকেই আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আপনার ছবি নিয়েও ট্রল করে। এগুলো দেখে আপনার কোনো আক্ষেপ কাজ করে কিনা? বা মন খারাপ হয় কিনা?

বাঁধন : না ভাইয়া, এগুলো আমাকে কোনোভাবেই ছুঁয়ে যায় না। এগুলো তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার— যে সেটা আসলে আক্রমণাত্মক মনোবৃত্তির হবে, নাকি আসলে সে সহানুভূতিশীল হবে? এখন আপনি কী, কেমন হবেন, সেটাতো আমি নির্ধারণ করতে পারব না। তাই না? এই আরকি। এগুলো ব্যক্তিগত ব্যাপার, এগুলো আমাকে খুব একটা প্রভাবিত করে না। এইসব আমাকে বরং আরও শক্তিশালী করে।

বর্তমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজমান, এই জায়গা থেকে একজন আন্দোলনকারী হিসেবে সামনে আপনার পদক্ষেপ কী হতে পারে? বা কী ধরনের চিন্তাভাবনা করছেন?

বাঁধন : চিন্তা করছি একটা নির্বাচন হোক, নির্বাচন হলে একটা নির্বাচিত সরকার আসুক। ওই যে বললাম, নির্বাচিত সরকার এখনের চেয়ে বেটার পারফরমেন্স করবে। আর আমি আমার ব্যক্তিগত পর্যায়ে যতটুকু কন্ট্রিবিউট করতে পারব, করব। আমি আমার কাজের মাধ্যমে, আমার সিনেমার মাধ্যমে, আমার অ্যাকটিভিটি, আমার মুভমেন্ট— এগুলো দিয়ে আমার জায়গা থেকে যথাসাধ্য কাজ করব। এইতো।

বাংলাদেশের খবরকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

বাঁধন : আপনাকেও ধন্যবাদ।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বিনোদন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর