‘ফেক নিউজের কারণে আমার লাইফ ঝুঁকিতে পড়ে গিয়েছিল’
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৫, ২১:৪৫

জনপ্রিয় মডেল ও চিত্রনায়িকা আইরিন সুলতানা সাম্প্রতিক কাজ ও নানা বিষয়ে কথা বললেন বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুদীপ্ত সাইদ খান। শ্রুতলিখন : হাসিবুর রহমান।
বাংলাদেশের খবর : এখন কি নিয়ে ব্যস্ত আপনি?
আইরিন : আলহামদু লিল্লাহ কাজকর্ম চলছে টুকটাক
বাংলাদেশের খবর : অনেক দিন হচ্ছে আপনাকে মিডিয়ায় কাজ করতে দেখা যাচ্ছে না । মডেলিং নাটক সিনেমা কোথাও নাই- কারণ কি?
আইরিন : সিনেমা রিলিজ হয়েছে এ বছর ফেব্রুয়ারিতে। যদিও আগের সিনেমা। তবে রিলিজ হয়েছে। এরপর প্রোপার কোনো সিনেমার কাজ আমার কাছে আসেনি, তাই কাজ করা হয়নি। মডেলিংয়ে আমি কাজ করেছি। যেহেতু প্লাটফর্মগুলো চেঞ্জ হয়ে গেছে। রিলস-ভিডিও ধরনের কিছু কাজ ঈদের আগে হয়েছে। এখন কাজ এমনিতে কম হচ্ছে এবং কাজগুলো ভ্যারাইটিজ ওয়েতে হচ্ছে। সে জায়গা থেকে অল্প কিছু কাজ করেছি। দুটো ঈদ গেছে। ঈদে ফটোশুট প্লাস ভিডিও-রিলস এর কাজ করেছি। আমার প্রোফাইলে কিছু কাজ দেয়া আছে। চেক করলে দেখতে পারবেন। যে কাজগুলো এসেছে তার মধ্যে যেগুলো মনে হয়েছে এই কাজটা আমি করতে পারি– সেই কাজগুলো করেছি। রোজার ঈদ এবং কোরবানির ঈদের আগেই বেশ কয়েকটা শুট এবং মডেলিংয়ের কাজ করেছি। এর মধ্যে কোনো বিজ্ঞাপনের কাজ হয়নি। তবে এর ইমেডিয়েট আগে দুটো বিজ্ঞাপনের কাজ করা হয়েছে। একটা তেলের বিজ্ঞাপন ছিল ওভিসি টাইপের। আরেকটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগের কাজ করেছিলাম। আর নাটক যে আমি আগে র্যান্ডমলি করে যাচ্ছিলাম, তেমনটা নয়। যারা নাটক করেন রেগুলারলি, তাদের মতো ঐ রাস্তায় আমার হাঁটা হয়নি। তাই রেগুলার যে আমার কাছে নাটকের কাজ আসবে সেটা আমি প্রত্যাশাও করতে পারি না । আরও একরকম কাজ আসলে অবশ্যই স্ক্রিনে দেখতে পাবেন।
বাংলাদেশের খবর : অনেক আর্টিস্ট কাজ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দোষারুপ করছেন, আপনার মতে কাজ কমে যাওয়ার কারণ কি হতে পারে?
আইরিন : ফার্স্টঅফঅল বলতে চাই, দেশের রাজনীতি বা পরিস্থিতি যেটার কথাই বলছেন, সেটার কথা বলতে গেলে- হ্যাঁ, আমরা একটা স্ট্রাগল টাইমের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিনা সেটা সত্য। হয়তোবা সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে আমাদের একটা সেটেলমেন্ট আশা করি। এটাই প্রত্যাশা। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জায়গা থেকে যদি বলেন, আমার মতে– আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে প্রোফেশনাল প্রোডিউসার ছিল না। আমাদের প্রোপার প্রোডাকশন হাউসের খুব অভাব। গুটিকয়েক প্রোডাকশন হাউস আছে যাদের নাম আমি বলতে পারবো। এর বাইরে কি আসলে ওরকম প্রোডাকশন হাউস ডেভেলপ করেছে? আমার মতে তো করেনি। একটা জায়গায় প্রোপার ওয়েতে প্রোডাকশন হাউস থাকবে- যাদের বিজনেসটাই হবে কন্টেন্ট তৈরি করে দর্শক অবদি নিয়ে যাওয়া। এমন প্রোপার চিন্তা-ভাবনা নিয়ে কয়টা প্রোডাকশন হাউস ছিল বা আছে– সেটাই আমার প্রশ্ন । আমি আসলে দোষারুপটা করব কোথায়? আমি ইন্ডাস্ট্রিতে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে আসছি, তাই আমার কোনো জায়গাও নাই যেখানে আমি স্টাক হয়ে কাজ করব, আমাকে যখন যে হাউস থেকে নক করেছে সবকিছু মিলে গেলে আমি সেই হাউসে কাজ করার চেষ্টা করেছি। আর আল্টিমেটলি যারা প্রোপারওয়েতে প্রোডাকশন করছেন তারা কজন আর্টিস্টকে ইউজ করছেন? অনেকে বলেন আমাদের এখানে আর্টিস্ট নেই, আমি বলব– এখানে প্রোপার প্রোডাকশন হাউস নেই, যারা কিনা প্রোপারওয়েতে কন্টেন্টটাকে নিয়ে কাজ করে, বিজনেস করে।
আমার কথার যৌক্তিকতা কতটুকু আমি জানি না বা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কথাটা আমি বলতে পারবো না। তবে আমার কাছে প্রোপার প্রোডাকশন হাউসের অভাবই মূল সমস্যা মনে হয়।
বাংলাদেশের খবর : কয়েক মাস আগে আলো আসবে গ্রুপের সাথে আপনার সম্পৃক্ততা নিয়ে একটা গুজব ছড়িয়েছিল। সেটা নিয়ে কোনো রাজনৈতিক সমস্যা বা ঝামেলায় পড়েছেন কিনা অথবা সামাজিকভাবে হেয় হতে হয়েছে কিনা?
আইরিন : আমার ব্যাপারে যে নিউজটুকু ছিল সেটা ফেক ছিল, এতটাই বলতে পারি। আমার জায়গা থেকে আমি আমার অবস্থান ক্লিয়ার করেছিলাম সোশ্যাল মিডিয়াতে। আর সেখান থেকে কোনো প্রকার পলিটিক্যাল প্রেশার আসেনি আমার ওপর। হেনস্তারও স্বীকার হইনি আমি। তবে এরকম ফেক নিউজের কারণে আমার পার্সোনাল লাইফকে কিছুটা কনফিউশনে ফেলে দিয়েছিল- আমার লাইফ ঝুঁকিতে পড়ে গিয়েছিল। এরকম ইয়েলো জার্নালিজম আমি একদমই পছন্দ করি না এবং সেটার বিরুদ্ধে আমি সোচ্চারও হয়েছিলাম। এতে সেলফ রিস্পেক্ট ক্ষুন্ন হয়। এরকম ফেক নিউজ আমার লাইফে অপ্রত্যাশিত ছিল। পার্সোনাল একটা ইমেজ আছে আমার। মানুষ জিজ্ঞেস করছিল আসলে কি হয়েছিল। এছাড়া আর প্রবলেম হয়নি।
বাংলাদেশের খবর : জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হলো। এক বছর পরে এসে এই অভ্যুত্থান নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
আইরিন : আমি ক্লিয়ারলি বলতে চাই যে, প্রথমত আমি আগে বা পরে কোনো মত-বিতর্কের জায়গায় যেতে চাই না । আমি পলিটিক্সের সঙ্গে কখনোই ইনভলব ছিলাম না। জুলাইয়ের সময় গত বছর যেটা হয়েছে সেটা অমানবিক মনে হয়েছে, যে স্টুডেন্ট যারা শহীদ হয়েছেন, ওই সময়টা খুবই মর্মান্তিক একটা হিস্ট্রি। সে জায়গাটা দেখে যখন খারাপ লেগেছে, আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব ছিল– আমি স্ট্যান্ড নিয়েছি, আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব বলেছি– যে নৃশংসতা চাই না আমরা। আমরা আমাদের দেশটাকে সুন্দর দেশ হিসেবে পেতে চাই- যেখানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমরা থাকবো। আমার দেশটা তো আমার, সো দেশ প্রেমের জায়গা থেকে আমি আমার অবস্থান ক্লিয়ার করেছি। এটা অবর্ণনীয় যে ওই সময় যারা প্রাণ দিয়েছেন, যাদের মারা হয়েছে, সেটা যতটুকু দেখেছি– জেনেছি, সে জায়গায় আমার মনে হয়েছে আমার স্ট্যান্ড নেয়া উচিত। সে জায়গা থেকে ততটুকু নিয়েছি। এর বাইরে আসলে আমি পলিটিক্যালভাবে কোন কিছু বলতে চাই না। বাট এতটুকু চাই– আমার দেশ ভালো থাকলে আমি ভালো থাকবো, আমার আশেপাশের সব মানুষ ভালো থাকবে। আমি পজেটিভ মানুষ, আমি চেষ্টা করি আমার আশেপাশের মানুষের মধ্যেও যেন পজেটিভিটি স্প্রেড করতে পারি– এটুকুই।
বাংলাদেশের খবর : ব্যক্তিগত জীবন কেমন কাটছে ?
আইরিন : আলহামদুলিল্লাহ চলছে।
বাংলাদেশের খবর : বিয়ে-সাদী নিয়ে কি চিন্তা ভাবনা?
আইরিন : জন্ম মৃত্যু বিয়ে সৃষ্টিকর্তা যেভাবে লিখেছেন সেটার বাইরে আমার কিছুই করার নেই। আল্লাহ যখন চাইবেন ইনশাল্লাহ বিয়ে হয়ে যাবে সবাই জানবেন। আর আমি বিয়ে করে কখনোই লুকিয়ে রাখবো না। এরকম মনমানসিকতা নেই। গুড নিউজ আসলে আপনারাই আমার সেকেন্ড ফ্যামিলি, অবশ্যই আপনাদেরকে সেটা আমি জানাবো।
বাংলাদেশের খবর : পছন্দের কেউ আছে? নাকি খুঁজতে হবে আমাদের?
আইরিন : খুঁজতে হবে (হাসি)
বাংলাদেশের খবর : সেক্ষেত্রে আপনি কেমন পাত্র চান?
আইরিন : পাত্র তো আসলে কোন প্রোডাক্ট না, যে ক্রাইটেরিয়া বলে দিব আর চলে আসবে। এটাতো আসলে বলা যায় না। তারপরেও যেটা বলব– একটা মানুষের আরেকটা মানুষের সঙ্গে কখন মনস্তাত্বিক সম্পর্ক তৈরি হবে, সেটা বলা মুশকিল। তবে অবশ্যই চাই- যে পার্টনার হবে সে আমাকে বুঝবে, আমাকে সাপোর্ট করবে, খুবই লিবারাল একটা মানুষ আমার লাইফে চাই।
বাংলাদেশের খবর : অসংখ্য ধন্যবাদ সময় দেয়ার জন্য
আইরিন : আপনাকেও ধন্যবাদ ।