সিন্ডিকেটের কারণে শোবিজে কাজ করে স্বস্তি পাই না : মৌমিতা মৌ
প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৫, ২২:০০

ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়িকা মৌমিতা মৌ এখন নাটক নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সিনেমা, নাটক ও ব্যক্তিগত নানা বিষয়ে তিনি কথা বললেন বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুদীপ্ত সাইদ খান।
বাংলাদেশের খবর : বর্তমান সময় কেমন কাটছে আপনার?
মৌমিতা মৌ : যেহেতু এখন আপাতত কাজ করছি না ফলে বর্তমান সময়ে একটু ফ্রি আছি। আবার একটু নিজের বিজনেসেও সময় দিচ্ছি।
বাংলাদেশের খবর : কাজ করছেন না কেন?
মৌ: আসলে একটু গ্যাপ দিচ্ছি। কারণ, আমার তো নিজের ইউটিউব চ্যানেল আছে। আমার চ্যানেলের নাম এমএম এন্টারটেনমেন্ট। নাটকের চ্যানেল। এটা পাঁচ ছয় মাস হবে চালু করেছি। নিজের প্রোডাকশন করা হচ্ছে। ফলে বাইরের কাজগুলো আপাতত একটু স্টপ করে দিয়েছি। আর এমনিতেও বাইরের কাজ করতে ভালোও লাগে না। এতো সিন্ডিকেট হয়ে গেছে যে, মানে এসব আর ভালো লাগে না। সিন্ডিকেটের কারণে বাইরে কাজগুলো করে স্বস্তি পাই না।
বাংলাদেশের খবর : নাটকের চ্যানেলে ইনভেস্ট করার পেছনের কারণ কী? কী ভেবে প্রযোজনায় আসলেন?
মৌমিতা মৌ : যেহেতু আমি মিডিয়ার মানুষ। অন্য সেক্টরে গিয়ে কাজ করা তো আমার পক্ষে পসিবল না। আমি যদি কোনো বিজনেস এ ইনভল্ব হই তো আমার পেশা রিলেটেডই কিছু করতে হবে যেটা আমি জানি বা বুঝি। তো আমি যেহেতু নাটকে কাজ করেছি, সিনেমাতেও কাজ করেছি- এসব সাইডে আমার একটু অভিজ্ঞতা আছে। তো সেই জায়গা থেকে আমি ভাবলাম যে, নিজে চ্যানেল করে সেখানে ইনভেস্ট করি। এতে নিজের প্রোডাকশনও হলো আবার আমিও টুকটাক অভিনয় করলাম । তো ওই জায়গা থেকেই আসলে এটা করা।
আমার অন্য বিজনেস করারও পরিকল্পনা আছে। আমাদের পেশার মানুষেরা যেটা করে যে- হয় বুটিক বা পার্লারের ব্যবসা করে। সেগুলোও করার ইচ্ছে আছে। আপাতত চ্যানেলটা স্টার্ট করেছি। বাকিগুলোও হয়তো আমি করবো- তবে সেগুলো করতে একটু সময় লাগবে।

বাংলাদেশের খবর : একটু আগে ‘সিন্ডিকেট’ এর ব্যাপারে বলেছিলেন, যে সিন্ডিকেটের কারণে আপনি কাজ করতে পারছেন না। এই যে সিন্ডিকেট ব্যবস্থা- এই সিস্টেম টা নিয়ে একটু জানতে চাই। এই সিন্ডিকেটগুলো কারা করে বা কোন সিন্ডিকেটের ওপর আপনি বেশি বিরক্ত?
মৌমিতা মৌ : আসলে আমি কোনও নাম মেনশন করে কোনও কিছু বলতে চাই না। সিন্ডিকেট তো আসলে একটা না, কয়েকটা মানে গ্রুপিং হয়ে গেছে। দেখা গেছে যে, হাতে গোনা দশজন ডিরেক্টর-আর্টিস্ট মিলে গ্রুপ মানে একটা সিন্ডিকেট। এরকম অসংখ্য গ্রুপ হয়ে গেছে। যেখানে আসলে সবার পক্ষে সেগুলো টলারেট করা সম্ভব না। আমার এই সিন্ডিকেটগুলো ভালো লাগে না। এভাবে সিন্ডিকেট মেইনটেইন করে কাজ করতে আমার পক্ষে পসিবল হয় না। আমি আমার নিজের মতো করে কাজ করতে পছন্দ করি। এ কারণে আমি কাজ করছি না, একেবারে অফ করে দিচ্ছি সেরকম না।
তবে আমার যদি মনে হয় যে টুকটাক কাজ আমি করব- সেক্ষেত্রে আমার নিজের যেহেতু চ্যানেল আছে, আমারটার মধ্যেই আমি টুকটাক করলাম। এখন ওই চিন্তা নাই যে আমার কাজ করতেই হবে এরকম- নট নেসেসারি। এখন সিন্ডিকেট হোক আর যেটাই হোক- ওই দিকে আমার আগ্রহটাই কমে গেছে।
বাংলাদেশের খবর : বুঝতে পারছি। আপনার তো সিনেমা দিয়ে শুরু, এখন নাটক করছেন...
মৌমিতা মৌ : আমি পাঁচ ছয় বছর আগে সিনেমা অফ করে দিয়েছি। ২০১৭ বা ২০১৮’র পরে কোনো সিনেমা করি নাই। আমি ইচ্ছে করেই ছেড়ে দিছি। এরপরে সিনেমা করার আমার ইচ্ছেও হয় নাই। তবে ভবিষ্যতে যদি সেরকম কোনো গল্প সেরকম কোনো ডিরেক্টর, সেরকম কোনো প্রোডাকশন পাই মানে ভালো কিছু তাহলে কাজ করব। এমনও হতে পারে যে আমার নিজের প্রোডাকশন থেকেও সিনেমা বানাতে পারি। এমনকিছু করতে চাই যেটা বলার মতো কিছু হবে। বা যেটামানুষ দেখবে। এরকম কাজ হলে আমি করতে চাই।
বাংলাদেশের খবর : কখনো কি ফিল্ম পলিটিক্সের শিকারও হয়েছিলেন?
মৌমিতা মৌ : সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে ফিল্ম পলিটিক্স তো টুকটাক থাকেই কিন্তু এক পর্যায়ে গিয়ে আমি নিজে থেকেই সরে আসছি। একটা সময়ে গিয়ে আমার রিয়ালাইজও হয়েছে যে- আসলে এটার জন্য আমি পারফেক্ট না। এখানে আমি আসলে ম্যাচ করতে পারতেছি না বা পারবো না। এই সিচুয়েশনে কাজ করতে না পারা এটা আমার প্রব্লেম। অন্য নায়িকারা কাজ করছে, তাদের যদি প্রব্লেম না হয় আমার কি? তাই না? তবে কাজটাকে আমি আসলে ছোট করে দেখছি না। আমার মনে হয়েছে যে এই জায়গাটার জন্য আমি ঠিক না। সো আমি ওখান থেকে সরে আসছি।

বাংলাদেশের খবর : তাহলে এখন নাটক নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চান?
মৌমিতা মৌ : হ্যাঁ, এখন এগুলো নিয়ে একটু থাকতে চাই। আর সিনেমা ওই যে বললাম, যদি ফিউচারে বলার মতো কোনো ভালো কাজ পাই- দেখার মতো সিনেমা, মানুষ যাতে মনে রাখে- এমন কোনো কাজ- তাহলে অবশ্যই করব। তবে এই মুহূর্তে সিনেমা করার আপাতত কোনো প্ল্যান নেই।
বাংলাদেশের খবর : ব্যক্তিজীবন কেমন কাটছে? বিয়ে-শাদী কবে নাগাদ করবেন?
মৌমিতা মৌ : ব্যক্তিজীবন তো কাটছে। বিয়ে-শাদী তো আসলে মুখ দিয়ে বললেই তো আর হয় না। আল্লাহ যেদিন হুকুম করবে সেদিনই হবে। তবে আমি বিয়ের জন্য মেন্টালি প্রস্তুত আছি। ফ্যামিলি থেকেও চাচ্ছে। আমি নিজেও চাচ্ছি বিয়ে-শাদী করে ফেলব। কিন্তু আল্লাহ কখন রাখছেন সেটা জানি না। এজন্য হইতেছ না এই আর কি!
বাংলাদেশের খবর : পছন্দের কেউ কি নেই? নাকি পাত্র খুঁজতে হবে?
মৌমিতা মৌ : আসলে এই সিচুয়েশনে যারা আসে তারাই আসলে বুঝতে পারে যে বিয়ে জিনিসটা কতটা কঠিন। আসলে কাউকে ঠিক করে রাখি নাই, আবার এই সিচুয়েশনে এসে তো যাকে তাকে আমি বিয়ে করতেও পারব না। অবশ্যই যার সাথে মেন্টালিটি এডজাস্ট হবে, সেরকম মানুষকে বিয়ে করতে হবে। তো ওইটার জন্য একটু লেট হচ্ছে। মূলত বিয়ের জন্য মনের মতো কাউকে এখনো পাইনি।

বাংলাদেশের খবর : কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার নামে প্রচুর গুঞ্জন শোনা যায় যে, আপনি অনেকের সঙ্গে প্রেম করেছেন, তো তারা কোথায়?
মৌমিতা মৌ : অনেকের সঙ্গে মানে! দেখাক- কার কার সাথে প্রেম করেছি। হ্যাঁ, আমি প্রেম করেছি কিন্তু অনেকের সঙ্গে তো না। হয়তো এক/দুইজনের সাথে আমি প্রেম করেছি। এখন মিডিয়াতে গুঞ্জন করে আমি তো মিডিয়াতেই নাই। যারা গুঞ্জন করে তারা দেখাক, আমার সামনে এনে দেখাক- যে কার কার সাথে আমি প্রেম করেছি। আমি যে একেবারে প্রেম করি নাই তা তো না, অবশ্যই করছি- প্রেম ছাড়া তো মানুষেরা চলতে পারে না। কিন্তু আমার প্রেমগুলো ছিল লং টাইমের। ৭/৮ বছরের।
বাংলাদেশের খবর : তাহলে সেই প্রেমিকদের কাউকে কেন বিয়ে করতেছেন না?
মৌমিতা মৌ : প্রেমিকেরা তো এখন নাই। প্রেমিকরা যখন বিয়ে করতে চাইছে- তখন তো প্রেমিকই ছিল কিন্তু এখন নাই দেখেই তো আর বিয়ে করতে পারি নাই। এখন তো লাইফে কেউ নাই। যতদিন ইচ্ছে ছিল, আশা ছিল ততদিন তো রিলেশনই ছিল- যখন মনে হয়েছে যে না, এভাবে চলছে না তখনই ব্রেকআপ হয়ে গেছে। এখন মানুষ রিলেশনে থাকা অবস্থায় তো কেউ চিন্তা করে না যে আমি বিয়ে করব না। যারা লং টাইম রিলেশন করে তাদের অবশ্যই বিয়ের চিন্তা থাকে। এখন ভাগ্যে নাই তাই হয় নাই। ফলে এখন নতুন কাউকে চিন্তা করতে হবে- এই আর কি।
বাংলাদেশের খবর : ব্রেকআপের পেছনের কারণগুলো কি আর ব্রেকআপের পরে নিজেকে কিভাবে সামলিয়ে নিয়েছেন?
মৌমিতা মৌ : আসলে লংটাইম রিলেশনগুলো ম্যাক্সিমাম হয় অল্প বয়সে। আজ থেকে ১০ বছর আগে আমার মানসিকতা যেরকম ছিল। এখন কিন্তু সেরকম নাই। তো ১০/১২ বছর আগে আমি কতটুকু বুঝতাম? আমি লাইফ সম্পর্কে এত বেশি বুঝতাম না। হ্যাঁ, তখন আমার সামনে রঙিন চশমার মতো একটা রঙিন দুনিয়া ছিল। জীবন সম্পর্কে অত বেশি আমার আইডিয়া ছিল না। তো ওই সময় ফ্যামিলি প্রেশারও থাকে না, নিজেরও প্রেশার থাকে না। পড়াশোনার পাশাপাশি দেখা গিয়েছে রিলেশনটা অনেক দূর চলে যায়। এক পর্যায়ে গিয়ে আসলে ব্রেকআপ- এসব তো আর বলে কয়ে আসে না। হয়তো বা এটার মধ্যে দুই জনেরই কারণ থাকে। হ্যাঁ, হয়তো ফ্যামিলিগত কিছু ইস্যুও থাকে অথবা চিটিং এর কিছু বিষয় থাকে। এখন একেকজনের কারণ একেক রকম। লং টাইম রিলেশন করে যাদের ব্রেকআপ হয়েছে একমাত্র তারাই ফিল করতে পারে যে ওই সিচুয়েশনটাতে মানুষের ওপর দিয়ে কি যায়। এগুলো আসলে এক্সপ্লেইন করার কিছু নেই।

বাংলাদেশের খবর : ভবিষ্যত নিয়ে আর কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা...
মৌমিতা মৌ : পরিকল্পনা বলতে বিজনেসেই ফোকাস দিব। এখন তো চ্যানেলে ইনভেস্ট করতেছি। ভবিষ্যতে বুটিক অথবা পার্লারের বিজনেসে ইনভল্ব হবো। আর বাকিটা হচ্ছে- আল্লাহ যদি চায়, আমার লাইফ পার্টনার হিসেবে যদি কাউকে পাঠায়- ওটাই হচ্ছে এখন আমার মেইন টার্গেট। এর বাইরে আসলে এখন আপাতত ওইভাবে কোন চিন্তা ভাবনা নাই। আগে লাইফ পার্টনার জোগাড় করে পার্সোনাল জীবনে সুখী হই এরপরে বাকিটা, কি করবো না করব সেটা নিয়ে ভাবব।
অনেক কারণেই মানুষ চেইঞ্জ হয়। মানে পরিবেশগত কারণসহ নানা কারণে মানুষ চেঞ্জ হয়। ফলে এখন আমি যেটা চিন্তা করছি হয়তো বিয়ের পর এমন চিন্তা নাও করতে পারি। বিয়ের পর ফিউচার নিয়ে কি চিন্তা করব- সেটা তো এখন বলতে পারছি না। সময়ই বলে দেয় যে মানুষের লাইফ আসলে কোন দিকে মোড় নেবে। এখন আপাতত আমার একটাই টার্গেট- আল্লাহ যাতে আমাকে আমার মনের মতন একজন মানুষ আমার সঙ্গে সেট করে দেয়। যাতে মনের মানুষ খুঁজে পাই।
বাংলাদেশের খবর : তো আপনার জন্য কি অনলাইনে ‘পাত্র চাই’ বলে ঘোষণা দিবো? সেক্ষেত্রে কীরকম পাত্র চান আপনি-
মৌ: ঘোষণা দিয়ে কখনও বিয়ে-শাদী হয় না। আল্লাহ যখন চাইবেন তখন এমনিতেই হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের খবর: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
মৌ: বাংলাদেশের খবরকেও ধন্যবাদ।