ঢাকাই সিনেমায় একের পর এক নতুন নায়িকার আগমন হলেও দর্শক চাহিদা পূরণে তারা সফল হতে পারছেন না। নায়িকাদের ব্যক্তিগত জীবন, গুঞ্জন আর ইমেজ সংকটের কারণে প্রেক্ষাগৃহে দর্শক টানতে ব্যর্থ হচ্ছেন অনেকেই।
এক
সময় মৌসুমী, শাবনূর, পপি কিংবা পূর্ণিমারা যেভাবে সিনেমা হল ভরাতেন, বর্তমান
প্রজন্মের নায়িকাদের মধ্যে সেই জাদু দেখা যাচ্ছে না। বরং কেউ অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দাবি, কেউবা শিডিউল ফাঁসানোর কারণে প্রযোজকদের কাছে অবিশ্বস্ত হয়ে পড়ছেন। অনেকে আবার অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতি বা ইউটিউবে ক্যারিয়ার
গড়ার চেষ্টা করছেন।
বর্তমানে
ঢালিউডে কাজ করছেন শবনম বুবলী, জয়া আহসান, অপু বিশ্বাস, নুসরাত ফারিয়া, মাহিয়া মাহী, বিদ্যা সিনহা মিম, পূজা চেরী, দীঘি, পরীমনি, তমা মির্জা, ইয়ামিন হক ববি, অধরা
খান, তাসনিয়া ফারিণ, সাবিলা নূর, মেহজাবীন চৌধুরী, নাজিফা তুষি, সাদিয়া আয়মান, নীলাঞ্জনা নীলা, মাসুমা রহমান নাবিলাসহ আরও অনেকে। কিন্তু এদের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া বাকিদের হাতে নেই কোনো বড় কাজ। ফলে
অনেকেই একপ্রকার বেকার সময় পার করছেন।
এদিকে
এক সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা অপু বিশ্বাস এখন ব্যস্ত ইউটিউব কনটেন্ট নিয়ে। দীর্ঘদিন নতুন কোনো সিনেমায় দেখা যাচ্ছে না তাকে। হাতেও
নেই নতুন কাজ। এ ছাড়া তার
অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোও হয়েছে ফ্লপ। তাতে করে তার দর্শকপ্রিয়তা যে তলানিতে গিয়ে
ঠেকেছে এটিই প্রমাণিত। এদিকে মাহিয়া মাহী ক্যারিয়ারের শুরুতেই জ্বলে উঠেছিলেন। তিনিও রাজনীতিতে জড়িয়ে নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মারলেন। আওয়ামী ঘনিষ্ঠ এ শিল্পী ৫
আগস্টের পর থেকেই আড়ালে
চলে গেছেন। বর্তমানে দেশেই নেই। তাকে সর্বশেষ ‘রাজকুমার’
সিনেমায় দেখা গেছে শাকিব খানের মায়ের চরিত্রে। আওয়ামীঘেঁষা আরেক নায়িকা নুসরাত ফারিয়াও রয়েছেন ক্যারিয়ার নিয়ে বিপাকে। সম্প্রতি এক মামলায় একদিন
কারাভোগও করতে হয়েছে তাকে। ৫ আগস্টপরবর্তী এ
নায়িকাও আর ঘুরে দাঁড়াতে
পারছেন না। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তার একটি সিনেমা।
এ
ছাড়া আলোচিত নায়িকা পরীমনি দীর্ঘদিন পর্দায় অনুপস্থিত। প্রার্থনা ফারদিন দীঘিও নিজেকে নায়িকা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারছেন না। নায়িকা দীঘির একটি সিনেমাও সুবিধা করতে পারেনি। তবে সর্বশেষ তার অভিনীত ‘জংলি’
সিনেমাটি কিছুটা আলোচনায় এসেছে। তবে এটিও তার একক নায়িকা হিসাবে অভিনীত সিনেমা নয়। পূজা চেরীও চেষ্টা করছেন নিজের ইমেজ ধরে রাখতে। কিন্তু সুযোগ পেলেও বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। টানা বেশ কয়েকটি সিনেমা ফ্লপ হয়েছে তার। সর্বশেষ গত কুরবানির ঈদে
মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত ‘টগর’
সিনেমাটি। এটিও ব্যর্থ হয়েছে। বিদ্যা সিনহা মিম অনেক দিন পর্দায় নেই। অন্যদের মধ্যে মিষ্টি জান্নাত কাজের চেয়ে অনলাইন দুনিয়ায় আলোচনায় থাকতে বেশি পছন্দ করেন। অধরা খান কানাডা পাড়ি দিয়েছেন। আইরিন কাজ পাচ্ছেন না। তবে কাজ দিয়ে কিছুটা আলোচনায় রয়েছে জয়া আহসান, শবনম বুবলী, তমা মির্জা, নাজিফা তুষি, ইয়ামিন হক ববি।
গত
কুরবানির ঈদে মুক্তি পায় বুবলী অভিনীত ‘জংলি’
সিনেমা। এটি বেশ আলোচনায় আসে। এ ছাড়া মুক্তির
অপেক্ষায় রয়েছে এ অভিনেত্রীর আরও
দুটি সিনেমা ‘সর্দার বাড়ির খেলা’
ও ‘পিনিক’। সম্প্রতি তিনি
কাজ শেষ করেছেন নতুন আরও একটি সিনেমার। তমা মির্জাকে সর্বশেষ দেখা গেছে আলোচিত সিনেমা ‘দাগি’তে। এ ছাড়া তার
অভিনীত আরও একটি ব্যবসাসফল সিনেমা ‘সুড়ঙ্গ’-এর সিক্যুয়াল নিয়েও
তিনি রয়েছেন চর্চায়। জয়া আহসান ঢাকা-কলকাতা মিলিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। তার একাধিক সিনেমা মুক্তি পেয়েছে গত ৫ মাসে।
ইয়ামিন হক ববি শেষ
করেছেন একাধিক সিনেমার কাজ। বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন তিনি, ফিরেই নতুন সিনেমার কাজ শুরু করবেন বলেও জানিয়েছেন। তুষির হাতেও রয়েছে একাধিক সিনেমা।
কিন্তু
প্রশ্ন হচ্ছে—
গুটিকয়েক নায়িকাকে দিয়েই কি টিকে থাকবে
গোটা ইন্ডাস্ট্রি? প্রযোজকেরা সবসময় চান এমন তারকা, যাদের নাম শুনেই দর্শক প্রেক্ষাগৃহে ছুটে আসবে। কিন্তু বর্তমানে সেই নির্ভরযোগ্য নায়িকার অভাবই সবচেয়ে বড় সংকট। এ
কারণে ঢালিউডে ক্রমশ বাড়ছে কলকাতার নায়িকাদের প্রভাব। দেশি নায়িকাদের ব্যর্থতায় দর্শক টানতে এখন অনেকেই ভরসা করছেন ওপার বাংলার তারকাদের উপর।
ফলে স্পষ্টতই বলা যায়— বর্তমান প্রজন্মের ঢালিউড নায়িকারা এখন এক বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। আর সেই চ্যালেঞ্জ হলো— আবারও দর্শকপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনা।
ডিআর/এসএসকে/টিএইচ/এএইচকে