
দুই বাংলার দর্শকের হৃদয়ের কাছের অভিনেত্রী জয়া আহসান এবার হাজির হচ্ছেন এক ভিন্ন চরিত্রে। বাংলাদেশ–ইরান যৌথ প্রযোজনার বহুল প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র ‘ফেরেশতে’ অবশেষে আসছে বড় পর্দায়।
দীর্ঘ তিন বছরের অপেক্ষার পর আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে মুক্তি পেতে যাচ্ছে ছবিটি। এর আগে ১২ সেপ্টেম্বর মুক্তির কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে কোনো এক অদৃশ্য কারণে তা এক সপ্তাহ পিছিয়েছে। তবে পূজার আমেজে ছবিটি মুক্তি পাওয়ায় প্রেক্ষাগৃহে বাড়তি উৎসব মুখরতা তৈরি হবে বলেই আশা করছে নির্মাতা ও প্রযোজনা টিম।
ইরানি নির্মাতা মুর্তজা অতাশ জমজম পরিচালিত ‘ফেরেশতে’ মূলত সমাজের প্রান্তিক মানুষের জীবনের গল্প। এই গল্পে আছে সংগ্রাম, আছে বঞ্চনা, আছে টিকে থাকার লড়াই, আর আছে মানবিকতার অদম্য শক্তি। নির্মাতা ছবিটির শুটিং করেছেন একেবারে বাস্তব লোকেশনে— যেখানে আলো-ঝলমল সাজসজ্জার পরিবর্তে ধরা দিয়েছে নিখাদ বাস্তবতা। ফলে গল্পটি দর্শকের কাছে হয়ে উঠবে আরও কাছের, আরও বিশ্বাসযোগ্য।
ছবিতে জয়াকে দেখা যাবে এক সুবিধা বঞ্চিত নারীর চরিত্রে, যিনি প্রতিকূল পরিস্থিতির মাঝেও সাহস আর শক্তি নিয়ে লড়ে চলেন।
চরিত্রটি প্রসঙ্গে জয়া বলেন— ‘আমাদের দেশের প্রান্তিক মানুষের ভেতরে যে অদম্য সাহস রয়েছে, সেই সত্যিকারের চরিত্রকেই আমি পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি। শুটিংটা ছিল ভীষণ চ্যালেঞ্জিং, তবে পুরোটিমের সহযোগিতায় কাজটি সুন্দরভাবে শেষ করতে পেরেছি।’
‘ফেরেশতে’-এর অন্যতম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলা সিনেমার আরেক সম্ভবনাময়ী অভিনেতা সুমন ফারুক। তার চরিত্রে ধরা দিয়েছে এক সাধারণ মানুষের অন্তর্গত শক্তি, যিনি সমাজের অসংগতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ান।
এই অভিনেতা বলেন, ‘আমরা যেমন বিদেশি সিনেমা দেখে তাদের সংস্কৃতি জানতে পারি, তেমনি ‘ফেরেশতে’ আমাদের সমাজ–সংস্কৃতির ভিন্ন একটি গল্প বিশ্ব দর্শকের সামনে তুলে ধরেছে। বিদেশে অসাধারণ সাড়া পেয়েছি। এখন চাই, দেশের মানুষও ছবিটি দেখে গর্বিত হোক।’
অভিনয়ের পাশাপাশি সিনেমাটি প্রযোজনার দায়িত্বটিও কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সুমন। প্রযোজক হিসেবেও তিনি ছবিটির মানবিক বার্তাকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
তার মতে, ‘ফেরেশতে’ কেবল একটি সিনেমা নয়, বরং প্রান্তিক মানুষের অজানা কাহিনীকে তুলে ধরা এক অনন্য শিল্প ভাষ্য।
নির্মাণের পর থেকেই ‘ফেরেশতে’ ঘুরে বেড়িয়েছে বিশ্বের নানা উৎসবে। ইরানের মর্যাদাপূর্ণ ফজর চলচ্চিত্র উৎসবে জাতীয় পুরস্কার জিতেছে ছবিটি।
২০২৪ সালের ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবেও প্রদর্শিত হয়েছিল এটি। ভারতের গোয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রশংসিত হয়েছে। বিদেশে ব্যাপক করতালি কুড়ানোর পর এবার বাংলাদেশের দর্শকের সামনে হাজির হতে যাচ্ছে ছবিটি।
জয়া আহসান ও সুমন ফারুক ছাড়াও ছবিতে অভিনয় করেছেন অভিজ্ঞ অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী অভিনেত্রী রিকিতা নন্দিনী শিমু, শাহেদ আলী, শাহীন মৃধা এবং শিশুশিল্পী সাথী। চিত্রনাট্য লিখেছেন বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মুমিত আল-রশিদ।
বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেছেন জয়াআহসান। অনেকেই মনে করছেন, ‘ফেরেশতে’ তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা অর্জন হতে যাচ্ছে।
অপর দিকে, সুমন ফারুকের বলিষ্ঠ অভিনয় ও প্রযোজনা দক্ষতা দর্শকের মনে নতুন আস্থার জন্ম দেবে।
সব মিলিয়ে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত ‘ফেরেশতে’ এখন দেশীয় দর্শকের মন জয় করতে প্রস্তুত। ছবিটি যে শুধু বিনোদন দেবে তাই নয়, বরং আমাদের সমাজের এক অজানা কাহিনিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাবে।