ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন সংস্কৃতি অঙ্গন

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:১২

বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গন আজ শোকাচ্ছন্ন। চলে গেলেন লালনসংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী ফরিদা পারভীন। তার মৃত্যুতে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন শূন্য হয়ে গেল বলে মনে করছেন অনেকে। সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষরা বলছেন, লোকসংগীতের পাশাপাশি ফরিদা পারভীন লালন ও দেশাত্মবোধক গানেও সমান পারদর্শী ছিলেন। তার মতো কালজয়ী শিল্পী আর আসবে না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশের পাশাপাশি অনেকেই হাজির হয়েছিলেন শহীদ মিনারেও। দেশের বাইরে থাকায় আসতে পারেননি উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা। দূর থেকেও তিনি শেষ বিদায়ের সঙ্গে যুক্ত হন— ভিডিওকলের মাধ্যমে ফরিদা পারভীনকে এক নজর দেখেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানান। শোক প্রকাশ করে কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা বলেন, খ্যাতিমান লালনগীতি শিল্পী ফরিদা পারভীনের মৃত্যু আমাদের এবং সংগীত জগতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। আল্লাহ তার আত্মাকে চিরশান্তি দান করুন। আমিন। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি রইল আমার গভীর সমবেদনা।’
কণ্ঠশিল্পী মনির খান বলেন, ‘আজ খাঁচা থেকে চিরতরে চলে গেলেন লালনকন্যা খ্যাত লোকসংগীতের বরেণ্যশিল্পী আমাদের ফরিদা পারভীন আপা। আপা আমাকে খুব স্নেহ করতেন। আর এই স্নেহ ভরা হাসিমুখটি দেখা হবে না। দোয়া করি আল্লাহ যেন আপনাকে জান্নাতবাসী করেন।’
গুণী কণ্ঠশিল্পী কনক চাঁপা বলেন, ‘লালনগীতির কিংবদন্তি শিল্পী সাধক ফরিদা পারভীন আপা চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন, তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা রইলো। সারাজীবন লালন সংগীত শুনতে হলে ফরিদা পারভীনের গান শুনতে হতো। আরও দীর্ঘদিন দেশের জন্য, গানের জন্য ফরিদা আপার বাঁচার দরকার ছিল, কিন্তু আল্লাহ তার হায়াত এই পর্যন্ত রেখেছিলেন।’
গুণী এ শিল্পীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ঢাকাই ছবির শীর্ষ নায়ক শাকিব খানও। ফেসবুকে এক পোস্টে শাকিব লিখেছেন, ‘লোকসংগীতের দেশবরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি ছিলেন আমাদের লালনগীতি, নজরুলসংগীত ও দেশাত্মবোধক গানের এক উজ্জ্বল দীপ্তি, যার কণ্ঠে ছিল বাংলার মাটি, মানুষের আত্মা ও সংস্কৃতির স্পন্দন। তার অনন্য সাধনা ও সুরের ছোঁয়া আমাদের হৃদয়ে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী কোনাল বলেন, ‘এই বৃষ্টির কান্নার মতন, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক, যেখানেই থাকেন সেখানেই, শ্রদ্ধেয় ফরিদা পারভীন ম্যাডাম। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন।’
শনিবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফরিদা পারভীন। আজ বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষ তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। কুষ্টিয়ায় মা– বাবার কবরের পাশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।
ফরিদা পারভীনের অবদান শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বদরবারেও সমাদৃত। লালনসংগীতকে জনপ্রিয় করতে তিনি জাপান, সুইডেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বহু দেশে গান পরিবেশন করেছেন। এ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৭ সালে তিনি পান একুশে পদক। ২০০৮ সালে লাভ করেন জাপানের ফুকুওয়াকা পুরস্কার।
১৯৯৩ সালে অন্ধ প্রেম সিনেমার ‘নিন্দার কাঁটা’ গানটির জন্য তিনি পান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তার কণ্ঠে ‘তোমরা ভুলে গেছো মল্লিকাদির নাম’, ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’র মতো গান আজও মানুষের হৃদয়ে বাজে। ফরিদা পারভীন চলে গেলেও তার কণ্ঠে ধারণ করা সুর ও বাণী প্রজন্মের প্রেরণা হয়ে থাকবে।