এটাই প্রকৃত আর ভুয়া শিল্পীর পার্থক্য : তাহসানকে প্রীতি
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০৯
জনপ্রিয় গায়ক তাহসানের গান ছাড়ার ঘোষণাকে ঘিরে নিজের ফেসবুক ওয়ালে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট জান্নাতুন নাঈম প্রীতি।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে তিনি একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন, যেখানে তিনি সরাসরি তাহসানের বক্তব্যকে সমালোচনা করেছেন।
নিচে জান্নাতুন নাঈম প্রীতির দেওয়া স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো—
তাহসান যা বলেছেন সেটা তাঁর স্বাধীন মতামত। তবে দেশীয় বকধার্মিক মিসোজিনিস্ট পুরুষদের মানসিকতা বুঝতে তাহসান হচ্ছেন একটি ক্লাসিক উদাহরণ। তিনি বলেছেন— তাঁর মেয়ে বড় হচ্ছে, তিনি দাঁড়ি রেখে গান গেয়ে দর্শকদের সামনে আর গান গেয়ে নাচানাচি করবেন না। এর মানে কী? এর মানে হচ্ছে তিনি যে পেশায় আছেন, তাকে তিনি সম্মানই করেন না; পাশাপাশি সেই পেশাকে তাঁর কন্যার জন্য অসম্মানজনক মনে করেন। দাঁড়ির কথা তিনি বলেছেন অবশ্যই তাঁর মতো লক্ষ লক্ষ মানসিকতার লোকদের জন্য। যারা গান গায়, মদ খায়, দাঁড়ি রাখে, মিথ্যা বলে, লেবাস পরে, টুপি পরে ভেজাল খাবার বিক্রি করে বলে— আলহামদুলিল্লাহ।
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম গজল লিখেছেন, কীর্তন লিখেছেন, ছেলের নাম দিয়েছেন কৃষ্ণ মোহাম্মদ। বিয়ে করেছেন এক হিন্দু নারীকে। তাঁর কাছে কৃষ্ণ, যিশু এবং মোহাম্মদ সবাই ভালোবাসার। তিনি বিদ্রোহী কবিতায় নিজেকে খোদা থেকে শুরু করে গ্রিক পুরাণের অরফিয়ুসের বাঁশি থেকে ষোড়শীর প্রেম, বলরামের কাঁধ, ধর্মরাজের দণ্ড ডেকেছেন, বলেছেন—
আমি রুষে উঠি যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া,
ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া!
তিনি গানে বলেছেন মসজিদের পাশে তাকে কবর দিতে।
এটাই হচ্ছে প্রকৃত শিল্পী আর ভুয়া শিল্পীর পার্থক্য। নজরুলের দাঁড়ি ছিল না। নজরুলকে কবি শামসুর রাহমান আদর করে কবিতায় লিখেছিলেন—
স্বাধীনতা তুমি কাজী নজরুল ঝাকড়া চুলের বাবরি দোলানো মহান পুরুষ।
তাহসান উচ্চশিক্ষিত, আইইএলটিএসে রেকর্ড মার্কস, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু দেড়শো বছর আগের নজরুল রুটি বেলতেন, অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী, লেটোর দলে গান গাইতেন, ব্রিটিশ আমলে জেলে গিয়েছিলেন কবিতা লিখে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তিনি পাননি; কিন্তু তাঁর সমান শিক্ষিত মানুষ কি আমরা এখনো দেখি?
না, দেখি না। বরং দেখি নজরুল নিজেকে যিশুখ্রিস্টের সাথেও তুলনা করে লিখেছেন—
হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রিস্টের সম্মান!
নজরুল প্রিয় পুত্র বুলবুলকে দাফন করতেও হাতে কলম নিয়েছেন দাফনের টাকা না থাকায়। ভ্যান গঘ গমক্ষেতে গিয়ে নিজের বুকে পিস্তল ঠেকিয়েছেন, কিন্তু তাঁদের শিল্প মরে যায়নি।
শিল্প তাই শিল্পীর চাইতেও বড়। রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে আজকের বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত শুনে উঠে দাঁড়াতেন— এতটাই বড়।
প্রিয় তাহসান— আপনি নিজের শিল্পকে যে অসম্মান করলেন, সেই শিল্প কি আপনার জন্য সম্মান বয়ে আনবে, বলেন?
- এইচকে/

