সিনেমা একটা জুয়া খেলা, কখনো হারবেন কখনো জিতবেন : মানিক
প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:২৪
আজ শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) মুক্তি পেয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’। ছবিটি ঘিরে তিনি কথা বললেন বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. হাসিবুর রহমান।
বাংলাদেশের খবর : কেমন আছেন?
মোস্তাফিজুর রহমান মানিক : প্রথমে আমি বাংলাদেশের খবরকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। দেখতে পাচ্ছেন আমি কিছুটা ব্যস্ততায় আছি। এটার কারণ হচ্ছে আমার ছবি ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’ রিলিজ হয়েছে সারা বাংলাদেশব্যাপী। সব মিলিয়ে ছবি রিলিজ এর ব্যস্ততায় আছি আর কি।
বাংলাদেশের খবর : ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’ সিনেমাটি কয়টি হল পেয়েছে?
মোস্তাফিজুর রহমান মানিক : অলরেডি ২৭টি সিঙ্গেলস্ক্রিনে ছবিটি চলছে। আমার মনে হয়, ঈদের পর এই ছবিই সবচেয়ে বেশি হল নিয়ে রিলিজ হয়েছে। এটা আমাদের জন্য একটা সুখবর।
বাংলাদেশের খবর : মাত্র ২৭টি হল কি যথেষ্ট- একটা সিনেমা মুক্তির জন্য?
মোস্তাফিজুর রহমান মানিক : আমি ব্যক্তিগতভাবে হলের সংখ্যায় বিশ্বাস করি না। ধরেন, একসময় আমরা ১০০ হলে ছবি রিলিজ করেছি। যখন নেগেটিভ-এর সময় ছিল, তখন কিন্তু ২০টা হলই অনেক ছিল। আবার যখন হল ডিজিটাল হলো তখন ১০০ থেকে ১৬০ হলে ছবি রিলিজ হয়েছে। পরিচালক হিসেবে যেটা উদ্দেশ্য, সেটা হচ্ছে যে আমার ছবিটাকে সারা বাংলাদেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া। আর সেটা করে ডিস্ট্রিবিউটররা। যত বেশি হলে রিলিজ হবে তত মানুষ ছবিটা দেখতে পাবে এবং এটা দেখে যদি তারা একটু হলেও তৃপ্ত হয়- সেটাই আমার শান্তি আর কি।
বাংলাদেশের খবর : নতুন নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে সিনেমায় কাজ করেছেন। কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
মোস্তাফিজুর রহমান মানিক : আমি তো আগে অভিজ্ঞ তারকা, জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকাদের সাথে কাজ করেছি, এখনও করি। নতুনদের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা হচ্ছে- তারা একটা কাদা মাটির মতো থাকে। আমি যে শেইপ দেই, সেটাই হয়। আর ভেতরে যদি প্রতিভা থাকে, আর আমার যদি সেই ক্যাপাসিটি থাকে সেই প্রতিভাটা বের করার, তো সেখানে ভালো কিছু হয় এবং যারা তারকা হয়েছে তারা সবাই একসময় নতুন ছিল। কেউ না কেউ তাদেরকে ব্রেক দিয়েছে, আমিও সেটাই করেছি এবং এই নতুনদের সাথে কাজ করার এক্সপেরিয়েন্সও খুব ভালো। নতুনদের সাথে আমি আরও আরো কাজ করতে চাই। ভালো ছবি বানাতে চাই।

বাংলাদেশের খবর : নতুন নায়ক-নায়িকার সিনেমায় আর্থিক ঝুঁকিটা কি বেশি?
মোস্তাফিজুর রহমান মানিক : ঝুঁকিটা আসলে কার সিনেমায় নাই। এমনকি শাকিব খান আমাদের সুপারস্টার, উনার সিনেমাতেও তো ঝুঁকি আছে। হ্যাঁ, উনার সিনেমার বাজেট ১২ থেকে ১৬ কোটি, ওটা উঠানো একটা রিস্ক। আবার যার ৫০ লাখ বাজেট, সেটাও একটা রিস্ক। মানে সিনেমা ইজ অল অ্যাবাউট এ গ্যাম্বলিং- এটা একটা জুয়া খেলা। সেখানে আপনি কখনো জিতবেন, কখনো হারবেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, স্টাররা যদি ছবি হিট করার কোন গ্যারান্টি দিতে পারতো তাহলে অনেক ষ্টারদের ছবি পৃথিবী ব্যাপী ফ্লপ হতো না। অমিতাভ বচ্চনের ফ্লপ আছে, সালমান খানের আছে, শাহরুখ খানের আছে, রিয়াজের আছে, সবার আছে। সব সুপারস্টারেরই ফ্লপ সিনেমা আছে, শাকিব খানেরও ফ্লপ ছবি আছে। ফ্লপ-হিট দিন শেষে নির্ভর করে সিনেমাটা আমি কেমন বানাতে পারলাম সেটার ওপরে।
বাংলাদেশের খবর : কোভিডের সময় শ্যুটিং করেছেন, চ্যালেঞ্জ কেমন ছিল?
মোস্তাফিজুর রহমান মানিক : তখন আসলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এগুলো করতে হয়েছে। আমরা ইউনিট এর লোকজন একটু কমিয়ে দিয়েছিলাম। আর দেখেন, আজ চার বছর হয়ে গেছে। টেকনিক্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট ব্যাপক হয়েছে, মানে টেকনিক্যালি ডেভেলপ হয়েছে অনেক। এখনকার মানুষের সিনেমার রুচি চেঞ্জ হয়েছে। বাজেট বড় হয়েছে। সেই হিসেবে চার বছর আগের ছবি এবং চার বছর পরের ছবির মধ্যে পার্থক্য থাকবেই। এগুলো তো আর বলে দেওয়া যাবে না যে করোনা ছিল, তারপরে চার বছর আগের ছবি ছিল, টেকনিক্যালি রিচ ওরকম না- এগুলো তো বলা যাবে না। দিন শেষে ছবি দেখে মানুষকে পরিতৃপ্ত হতে হবে। এটাই হচ্ছে বড় বিষয়।

বাংলাদেশের খবর : ২০২১ সালে সিনেমার সেন্সর পেলেও মুক্তি কেন ২০২৫-এ?
মোস্তাফিজুর রহমান মানিক : আসলে সিনেমার রিলিজ তো প্রোডিউসারদের হাতে। আমি জাস্ট হেল্প করতে পারি। আমি ছবি বানিয়ে দিয়েছি। ২০২১ সালে এটা সেন্সর হয়েছে। ট্রেলার রেডি ছিল, পোস্টার রেডি ছিল। তো আসলে ‘দে ওয়্যার ওয়েটিং ফর অ্যা গুড ডে’ বাট ওই ভালো দিনটা আর আসে না ( হা হা হা)।
বাংলাদেশের খবর : সিনেমার প্রচারণায় মূল নায়ক-নায়িকাকে দেখছিনা কেন?
মোস্তাফিজুর রহমান মানিক : নায়ক-নায়িকারা প্রচারে খুব একটা নাই কেন? এটা তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে হবে। নায়িকার (নিশাত নাওয়ার সালওয়া) ব্যাপারটা জানি- সে সিনেমা থেকে ডিটাচড, সে আমেরিকাতে রয়েছে এখন। নায়কের (আদর আজাদ) ব্যাপারটা আসলেই আমি নট ক্লিয়ার। এটা তো নায়কের প্রথম অভিনীত ছবি ছিল, তার এটার প্রচারণায় অংশগ্রহণ করা উচিত ছিল। কেন পারেনি, এটা সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নেই এবং তার (নায়কের) বিরুদ্ধে আমার কোনও অভিযোগও নেই।

বাংলাদেশের খবর : জান্নাত সিনেমার জন্য পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন আপনি। বর্তমানে প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারছেন কি?
মোস্তাফিজুর রহমান মানিক : এই কারণে মাঝে মাঝে ফ্রাস্টেটেড হয়ে যাই। যে মাপের কাজ আমরা একসময় করেছি- সেই মাপের কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি না বা আমার লিমিটেশন এর কারণে হয়তো করতে পারছি না। এটা আসলে কাউকে দোষারোপ করার কিছু নাই। হয় আমার সিলেকশন ভুল হচ্ছে, কিংবা কাজের সেই বাজেট, সেই পরিবেশ নেই। ধরেন, এই যে আজকে আপনি জিজ্ঞেস করলেন, ২৭টি হল নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট কিনা? কেউ ২৭০ হল নিয়েও সন্তুষ্ট থাকে না। এখন বিষয়টা হচ্ছে সেই পরিবেশ নাই। এখন ২৭টি হলই অনেক হল। আপনি জানেন যে সিনেমা মুক্তির আগে এখন বন্ধ হল খোলাইতে হয়। হল বন্ধ ছয় মাস- ঈদের দিন খুলবে, এমন পরিস্থিতি বিরাজমান। একসময়ের রমরমা মধুমিতা সিনেমা হলের অবস্থা দেখেন- বাংলাদেশের ‘ওয়ান অব দ্য বেস্ট হল’ সারা বছর বন্ধ থাকে। আর তো কোনও উদাহরণ দেওয়ার প্রয়োজন নাই। আসলে কাজের পরিবেশ, কাজের স্পিরিট কখন ভালো হয়- আপনি যখন ফিডব্যাকটা পাবেন। আগে মনে আছে- ছবি রিলিজ হলে আমরা যখন মধুমিতার সামনে যেতাম, চিত্রা মহলের সামনে যেতাম, কিংবা যে কোনও হলের সামনে যেতাম, মনটা ভরে যেত। কারণ এত লোক। এখনতো লোক খুঁজে খুঁজে আনতে হয়।

বাংলাদেশের খবর : পরবর্তী কি কি সিনেমা আসছে?
মোস্তাফিজুর রহমান মানিক : পাইপ লাইনে আছে আনন্দ-অশ্রু, সামনের মাসে রিলিজ হবে ওটা। খুবই ওয়েল মেড একটা ছবি। আশা করি এটা খুব ভালো করবে। আর একটু টাইম নিচ্ছি- ভালো প্রজেক্ট না হলে আর করব না। আর ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’ সিঙ্গেল স্ক্রিনের জন্য একটা আদর্শ ছবি। সবাইকে অনুরোধ করব- একবার হলে গিয়ে ছবিটা দেখেন, মজা পাবেন। এখানে কোন আতলামী নেই। একদমই এন্টারটেইনিং ছবি।
বাংলাদেশের খবর : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
মোস্তাফিজুর রহমান মানিক : বাংলাদেশের খবরকেও ধন্যবাদ।
এইচআর/এসএসকে/এএইচকে


