জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
শাহরুখের ৩৩ বছরের অপেক্ষা : ভাগ্যের পরিহাস নাকি রাজনীতির খেলা?

বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২:০৩

বলিউড কিং শাহরুখ খান। গত তিন দশক ধরে ভারতীয় সিনেমার অন্যতম সফল ও প্রভাবশালী নায়ক। বক্স অফিসে রেকর্ড গড়া, বিশ্বজুড়ে কোটি ভক্তের হৃদয় জয় করা, অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মান— সবই আছে তার ঝুলিতে। অথচ বিস্ময়করভাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড) থেকে এত বছর দূরে ছিলেন তিনি। সম্প্রতি ৩৩ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটেছে বটে, কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে— এত দেরি কেন?
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ। এরপর ‘বাজিগর’, ‘ডর’, ‘কভি হাঁ কভি না’ ছবিতে তার অভিনয় দর্শক-সমালোচক সবার প্রশংসা কুড়ায়। ১৯৯৫ সালের ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ তাকে বলিউডের ‘রোমান্সের বাদশাহ’ বানিয়ে দেয়। তার জনপ্রিয়তা এতটাই বিস্ফোরক ছিল যে একসময় তিনি আমির খান ও সালমান খানের মতো নায়কদেরও ছাপিয়ে যান।
কিন্তু জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ক্ষেত্রে বিষয়টা একেবারেই ভিন্ন ছিল। সমালোচকরা সবসময় বলতেন— শাহরুখ জনপ্রিয় নায়ক, কিন্তু তিনি যথেষ্ট শিল্পমানসম্পন্ন কাজ করছেন না। আর সেই ধারণাই হয়তো তাকে বহু বছর এই পুরস্কার থেকে দূরে রেখেছিল।
অবশ্য বহু আগেই অভিনয়ে বৈচিত্র্য ও গম্ভীর চরিত্রের কারণে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন আমির খান (‘লগান’), হৃতিক রোশন (‘কই মিল গয়া’), এমনকি অজয় দেবগনও (‘জখম’ ও ‘দ্য লেজেন্ড অব ভগত সিং’)। অথচ শাহরুখের ‘স্বদেশ’ কিংবা ‘চাক দে! ইন্ডিয়া’র মতো চলচ্চিত্রে অসাধারণ অভিনয় থাকার পরও তাকে পুরস্কৃত করা হয়নি।
অনেকে মনে করেন, শাহরুখের জনপ্রিয়তার তীব্রতা এবং তার চারপাশের ‘স্টার ইমেজ’ তাকে গুরুগম্ভীর অভিনেতাদের কাতারে বসাতে বাধা দিয়েছে। জাতীয় পুরস্কার কমিটি অনেক সময় মূলধারার বাণিজ্যিক তারকাদের এড়িয়ে, তুলনামূলকভাবে শিল্পভিত্তিক কাজ করা অভিনেতাদের প্রাধান্য দিয়েছে।
শাহরুখ খান একাধিকবার বলেছিলেন যে তিনি ভিন্ন ধর্মীয় পরিচয় ও মুক্ত চিন্তার কারণে অনেক সময় সমালোচনা ও বিতর্কের শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাকে নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা হয়। সমালোচকরা বলেন, তার সরাসরি কোনো রাজনৈতিক অবস্থান না থাকলেও তার জনপ্রিয়তা ও প্রভাব কখনো কখনো রাজনৈতিক পক্ষপাতের কারণে পুরস্কারের ক্ষেত্রে ‘অস্বস্তি’ তৈরি করেছিল।
তবে এটাও সত্য, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সবসময়ই কঠিন প্রতিযোগিতার জায়গা। প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপট, ভিন্ন ধরনের সিনেমা সামনে আসে। শাহরুখ হয়তো দুর্দান্ত ছিলেন, কিন্তু অন্য কেউ তারচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছেন নির্দিষ্ট বছরে। ফলে পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হওয়াটা কেবল ষড়যন্ত্র নয়, কখনো কখনো কেবলই ভাগ্যের খেলা।
অবশেষে, ৩৩ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার পর শাহরুখকে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া মানে কেবল একজন অভিনেতাকে সম্মান জানানো নয়, বরং একটি প্রজন্মের সিনেমাপ্রেমীদের আবেগকেও স্বীকৃতি দেওয়া। কারণ শাহরুখ শুধু নায়ক নন— তিনি একটি সংস্কৃতি, একটি আবেগ, একটি সময়ের প্রতীক।
শাহরুখ খান এত বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার না পাওয়াকে কেউ বঞ্চনা বলবেন, কেউ বলবেন ভাগ্যের পরিহাস, কেউবা রাজনৈতিক কারণ। কিন্তু একটি বিষয় অনস্বীকার্য— শাহরুখের মতো একজন অভিনেতা একদিন এই পুরস্কার পাবেনই- এটাই ছিল কালের লিখন। আর দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে সেই দিন এসেছে।
তবুও প্রশ্ন রয়ে যায়— যদি আগেই স্বীকৃতি দেওয়া হতো, তবে কি শাহরুখের শিল্পমান নিয়ে এত বিতর্ক থাকত? নাকি এই দেরি তার কিংবদন্তি মর্যাদাকে আরও উজ্জ্বল করেছে?
ডিআর/এসএসকে