Logo

বিনোদন

‘চল্লিশ বছর লাগলেও এই মামলা চালিয়ে যাব, প্রমাণ করব- এটি হত্যা’

লন্ডন থেকে বাংলাদেশের খবরকে সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরী

সুদীপ্ত সাইদ খান

সুদীপ্ত সাইদ খান

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৩৮

‘চল্লিশ বছর লাগলেও এই মামলা চালিয়ে যাব, প্রমাণ করব- এটি হত্যা’

বাংলা চলচ্চিত্রের অমর নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে তার রহস্য মৃত্যু’র মামলা। আদালতের নির্দেশে অপমৃত্যুর মামলাটি এখন হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছে পুলিশ।

এই বিষয়ে লন্ডন থেকে বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে কথা বললেন সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরী।

দীর্ঘ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। এই ২৯ বছর ধরে অনেকেই ছিলেন, অনেকে আজ আর আমাদের মাঝে নেই। যারা ন্যায়বিচারের জন্য পাশে ছিলেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। যারা আজও বেঁচে আছি, সবাই যেন সম্মান ফিরে পাই— এই দোয়া চাই।’


আত্মহত্যা না হত্যা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি সবসময়ই আশাবাদী ছিলাম, এখনো আছি। আল্লাহর উপর আমার শতভাগ বিশ্বাস। আমি বহুবার বলেছি— চল্লিশ বছর লাগলেও আমি এই মামলা চালিয়ে যাব। এমনকি আমার মৃত্যুর পরও দেশের মানুষ, সালমানের ভক্তরা এই মামলা চালাবে। এবং প্রমাণ করব, এটি হত্যা।’

নীলা চৌধুরী আরও বলেন, ‘অবশেষে ২৯ বছর পর আদালতের রায়ে তা প্রমাণিত হলো— সালমান শাহর মৃত্যু হত্যাকাণ্ড। আদালত স্পষ্টভাবে বলেছেন, সিআইডি ইচ্ছাকৃতভাবে অনেক বিষয় এড়িয়ে গেছে। সেই ভুলগুলো রায়ের মধ্যেই তুলে ধরা হয়েছে। আদালত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নতুন মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘রায় ঘোষণার দিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত একটানা শুনানি হয়েছে। বিচারক অসুস্থ থাকলেও মামলাটি শেষ না করা পর্যন্ত তিনি থামেননি। আমরা বুঝতে পেরেছি, তার ওপর চাপ ছিল, তবু তিনি ন্যায়ের পক্ষে রায় দিয়েছেন। আমি তাকে দেবদূতের মতো মানুষ মনে করি।’

শেষ পর্যন্ত ন্যায় বিচার পাবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে নীলা চৌধুরীর কণ্ঠে ছিল স্বস্তি ও দৃঢ়তা— ‘আমি মরার আগ পর্যন্ত এই লড়াই চালিয়ে যাব। এই মামলা হত্যার মামলা, এবং ইনশাআল্লাহ আমরা প্রমাণ করে ছাড়ব।’


৯০ দশকের সবচেয়ে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনকভাবে মারা যান। তৎকালীন সময়ে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে দাবি করা হয়, কিন্তু তার পরিবার বরাবরই বলেছেন, ‘এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা।’

দীর্ঘদিন তদন্ত চললেও, প্রতিবারই প্রতিবেদনে লেখা হয়, ‘সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন।’ কিন্তু তার মা নীলা চৌধুরী সেই রিপোর্টে বারবার নারাজি দিয়ে এসেছেন। তিনি প্রতিবারই দাবি করেছেন, তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।

ফলে বছরের পর বছর ধরে মামলাটি ছিল অপমৃত্যু মামলা। কিন্তু সালমানের মা নীলা চৌধুরীর রিভিশন আবেদনের পর আদালত অবশেষে মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। ২০ অক্টোবর, আদালতের নির্দেশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সালমান শাহ’র মামা আলমগীর কুমকুম রমনা থানায় একটি ‘হত্যা মামলা’ দায়ের করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে নায়কের সাবেক স্ত্রী সামিরা হককে। সাথে আছে আরও ১০ জনের নাম। তারা হলেন— প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, খলনায়ক ডন, লতিফা হক লুসি, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, মেফিয়ার বিউটি সেন্টারের রুবি, আবদুস সাত্তার, সাজু ও রিজভী আহমেদ ফরহাদ।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন— নতুন তথ্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণ যাচাই করা হচ্ছে। সালমান শাহ’র জীবনের শেষ দিনগুলোর কার্যক্রম, যোগাযোগ এবং সাক্ষাৎকারগুলো পুনরায় বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ফোন রেকর্ড ও পুরনো তথ্যগুলো পুনরায় যাচাই করা হচ্ছে। তদন্ত কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই ইস্কাটন প্লাজার সেই ফ্ল্যাটে গেছেন, যেখানে সালমান শাহর লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল ২৯ বছর আগে। 

বাংলা সিনেমার ইতিহাসে সালমান শাহ শুধু একজন নায়ক নন, তিনি এক যুগের প্রতীক— এক আবেগের নাম। সময় যতই পেরোক, তার রহস্যমৃত্যু আজও কোটি ভক্তের মনে প্রশ্ন জাগায়— বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত এই মৃত্যু রহস্যের সত্য কি এবার উন্মোচিত হবে? সিনেমার অমর নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর পেছনে আসলেই কি কোনো ‘অপরাধের গল্প’ লুকিয়ে আছে— তা জানতেই এখন তাকিয়ে আছে গোটা দেশ।


ডিআর/এসএসকে/এমএমআর/এএইচকে

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বিনোদন সালমান শাহ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর